Sunday 8 June 2014

গুড়ের নিগূঢ় রহস্য ♥♪♥

[উত্সর্গ: হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী দিনগুলো....]

সত্তর দশকের কথা। শৈলকুপা পাইলট স্কুলে পড়ি। স্কুল শেষে প্রাইভেট পড়তে যেতাম 'শান্তি নিবাসে'। এই 'শান্তি নিবাস'-এর পাশেই একটা মুদি-দোকান। দোকানের মালিকের নাম - 'ন্যাপলা'। সেই সূত্রে, এটা সবার কাছে 'ন্যাপলা'র দোকান' হিসেবে পরিচিত। প্রাইভেট পড়ার ফাকে, এইখানে আমরা বন্ধুরা মিলে মাঝে-মাঝে আড্ডা দিতাম। ন্যাপলা ছিলেন বেশ আত্মভোলা, রসিক ও কঞ্জুস প্রকৃতির।

ন্যাপলা'র দোকানের কাঁচের জারে রাখা লজেন্সগুলি রোদে গলতে শুরু করতো। আমাদের এক রসিক বন্ধু একদিন বললো, "ন্যাপলা, তুমি নিশ্চয় ওই চকলেটগুলো চেটে রেখেছো?" ন্যাপলা বেশ রেগে যেতেন! আমরা ন্যাপলার সাথে এরকম অনেক মজা করতাম। শুনুন তাহলে একদিনের এক মজার ঘটনা।

একদিন এক ক্রেতা এলেন - কাসার বাটিতে ১ কিলোগ্রাম গুড় কিনবেন। ন্যাপলা তাঁর আন্দাজমতো ১ কিলোগ্রাম গুড় বাটিতে তুলে দাড়ি-পাল্লায় তুললেন। তারপর উনি বাটি থেকে বার-বার গুড় তুলে বার-বার দাড়ি-পাল্লায় তুলছেন। এবার ক্রেতা বলছেন, "ন্যাপলা, তুমিতো প্রায় সব গুড়-ই ওঠায়ে নিলে?" ন্যাপলা তখনো তাঁর ভুল বুঝতে পারেন নি। কিন্তু রসিকতা করে বললেন, "দ্যাখ, তোর বাটি-ডাই ফেরত পাইস কিনা?"

সধারণত কাসার বাটি বেশ ভারী। আত্মভোলা ন্যাপলা ভুলেই গিয়েছিলেন বাটির ওজন বাদ দেবার কথা! ন্যাপলা ছিলেন অল্প-পতি। আর সেই বন্ধু এখন বিশাল শিল্প-পতি। এই হলো এক অল্প-পতি ও শিল্প-পতির অল্প-স্বল্প-গল্প। আমাদের কৈশোরের এক টুকরো স্মৃতি।

♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, ওন্টারিও, ক্যানাডা
রচনা ও প্রকাশকাল: ২০১৪ জুন ০৮
শেষ সম্পাদনা: ২০১৪ জুলাই ১৪

পাদটিকা: 
আমার বাল্যবন্ধু, বিদ্যুত-কে এই গল্পের লিংক পাঠিয়েছিলাম! গতকাল (২০১৪ জুলাই ১৩) সে আমাকে এই ছবিগুলো পাঠিয়েছে। আমার বন্ধু এখনো তার রসিকতা মনে রেখেছে - "ন্যাপলা, তুমি নিশ্চয় ওই চকলেটগুলো চেটে রেখেছো?"


এই সেই ন্যাপ্লার দোকান, শৈলকুপা। ২০১৪ জুলাই ১৩। ছবি: প্রবীর কুমার সাহা বিদ্যুত।


ন্যাপ্লার দোকানের ভিতর , শৈলকুপা। ২০১৪ জুলাই ১৩। ছবি: প্রবীর কুমার সাহা বিদ্যুত।


ন্যাপ্লার দোকানের ক্যাশ-বাক্স ও লজেন্স, শৈলকুপা। ২০১৪ জুলাই ১৩। ছবি: প্রবীর কুমার সাহা বিদ্যুত।


ন্যাপ্লার স্ত্রী - যিনি বাড়ির ভিতরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ন্যাপ্লার কাজের তদারকি করতেন।
২০১৪ জুলাই ১৩। ছবি: প্রবীর কুমার সাহা বিদ্যুত।


ন্যাপ্লার দোকানের চানাচুর ও জয়, শৈলকুপা। 
২০১৪ জুলাই ১৩। ছবি: প্রবীর কুমার সাহা বিদ্যুত।

সৌজন্যে:
Life2Love
ShafSymphony
Vision Creates Value

ছবি: শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ফেসবুক ফোরাম - ২০১৪ জুন ০৮
এখানেই কেটেছে আমাদের শৈশব ও কৈশোরের বেলা-অবেলা।

No comments:

Post a Comment