[উত্সর্গ: হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী দিনগুলো....]
আশির দশক। শৈলকুপা কলেজে পড়ি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেক ছাত্র সাইকেল-এ কলেজে আসতো। এজন্য কলেজের মাঠের মাঝে ছিল সাইকেল পার্ক করে রাখার জন্য একটা টিন-শেড। আমাদের এক অগ্রজ বন্ধুর পুথিগত পড়াশুনায় তাঁর কোনো মনোযোগ নেই। প্রায় ক্লাস ফাঁকি দিতেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি-তে বেশ সক্রিয় ছিলেন।
একদিন সবাই যখন ক্লাসে। উনি সবার জন্য মুড়ি-চানাচুরের আয়োজন করলেন। কলেজের মাঠে সবাই মিলে কাগজ পেড়ে মুড়ি-চানাচুর খাওয়া হলো। সেই বিকেলে ওই অপ্রত্যাশিত আনন্দে আমরা সবাই আত্মহারা। উনি বললেন, "তোমরাই এই মুড়ি-চানাচুরের আয়োজন করেছো। কীভাবে? তা কাল বলবো।"
পড়ন্ত-বিকেলে কলেজের সারি সারি নারিকেল গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি আমাদের মনে-প্রাণে রৌদ্র-ছায়ার ঝিলিমিলি খেলে যেতো। এবার সবার বাড়ি ফেরার পালা। খেয়াল করে দেখি সবাই সাইকেল নিয়ে হেটে যাচ্ছে। কারোর সাইকেল-এর চাকায় বাতাস নেই। অস্তাচলের রক্তিম-রবির আলোয় দেখি - সারি সারি নারিকেল গাছ-কে পিছনে ফেলে অতি-ধীর-গতিতে এগিয়ে চলেছে সারি সারি সাইকেল ও সতীর্থ সাইকেল-চালক!
পরের দিন আমরা জানতে পারলাম - আমাদের ওই অগ্রজ বন্ধু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সবার সাইকেল-এর চাকার টিউব-ভাল্ব খুলে বিক্রি করে সবার জন্য মুড়ি-চানাচুর এনেছিলেন! সাইকেল-মেরামতের মালিককে উনি বুঝিয়েছিলেন, - "ওরাই-তো আবার ওদের টিউব-ভাল্ব কিনতে আসবে। সুতরাং ব্যবসার লাভ থেকে একটু কমিশন চাই। আর তা দিয়ে আমরা সবাই মিলে মুড়ি-চানাচুর খাবো। একটু আনন্দ করবো। চিন্তাটা ক্যামন?" সাইকেল-মেরামতের দোকানের মালিকতো মহাখুশী!
শুনলেন-তো তাঁর অল্প-স্বল্প ব্যবসা-বানিজ্য পরিকল্পনার রূপরেখা! এই হলো আমাদের ওই বন্ধুর দূরদর্শী-দুষ্টমীর এক চিলতে চিত্রপট! এমনি করেই মাঝে মাঝে উনি আমাদের গতিময় জীবনে 'ছন্দে ছন্দে, দুলি আনন্দে'র একটুকু ছোঁয়ার পরশ বুলিয়ে দিতেন। আর মনে করিয়ে দিতেন কিভাবে জটিল-জীবন-কে সহজ করতে হয়; হাসি-খুশী-আনন্দ নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
ক্যামব্রিজ, ওন্টারিও, ক্যানাডা
২০১৪ জুন ১২
সৌজন্যে:
Life2Love
ShafSymphony
Vision Creates Value
আমাদের সেই স্মৃতি-ঝলমল কলেজের এক টুকরো স্মৃতি। আলোকচিত্র: শ.ই.।
আশির দশক। শৈলকুপা কলেজে পড়ি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেক ছাত্র সাইকেল-এ কলেজে আসতো। এজন্য কলেজের মাঠের মাঝে ছিল সাইকেল পার্ক করে রাখার জন্য একটা টিন-শেড। আমাদের এক অগ্রজ বন্ধুর পুথিগত পড়াশুনায় তাঁর কোনো মনোযোগ নেই। প্রায় ক্লাস ফাঁকি দিতেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি-তে বেশ সক্রিয় ছিলেন।
একদিন সবাই যখন ক্লাসে। উনি সবার জন্য মুড়ি-চানাচুরের আয়োজন করলেন। কলেজের মাঠে সবাই মিলে কাগজ পেড়ে মুড়ি-চানাচুর খাওয়া হলো। সেই বিকেলে ওই অপ্রত্যাশিত আনন্দে আমরা সবাই আত্মহারা। উনি বললেন, "তোমরাই এই মুড়ি-চানাচুরের আয়োজন করেছো। কীভাবে? তা কাল বলবো।"
পড়ন্ত-বিকেলে কলেজের সারি সারি নারিকেল গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি আমাদের মনে-প্রাণে রৌদ্র-ছায়ার ঝিলিমিলি খেলে যেতো। এবার সবার বাড়ি ফেরার পালা। খেয়াল করে দেখি সবাই সাইকেল নিয়ে হেটে যাচ্ছে। কারোর সাইকেল-এর চাকায় বাতাস নেই। অস্তাচলের রক্তিম-রবির আলোয় দেখি - সারি সারি নারিকেল গাছ-কে পিছনে ফেলে অতি-ধীর-গতিতে এগিয়ে চলেছে সারি সারি সাইকেল ও সতীর্থ সাইকেল-চালক!
পরের দিন আমরা জানতে পারলাম - আমাদের ওই অগ্রজ বন্ধু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সবার সাইকেল-এর চাকার টিউব-ভাল্ব খুলে বিক্রি করে সবার জন্য মুড়ি-চানাচুর এনেছিলেন! সাইকেল-মেরামতের মালিককে উনি বুঝিয়েছিলেন, - "ওরাই-তো আবার ওদের টিউব-ভাল্ব কিনতে আসবে। সুতরাং ব্যবসার লাভ থেকে একটু কমিশন চাই। আর তা দিয়ে আমরা সবাই মিলে মুড়ি-চানাচুর খাবো। একটু আনন্দ করবো। চিন্তাটা ক্যামন?" সাইকেল-মেরামতের দোকানের মালিকতো মহাখুশী!
শুনলেন-তো তাঁর অল্প-স্বল্প ব্যবসা-বানিজ্য পরিকল্পনার রূপরেখা! এই হলো আমাদের ওই বন্ধুর দূরদর্শী-দুষ্টমীর এক চিলতে চিত্রপট! এমনি করেই মাঝে মাঝে উনি আমাদের গতিময় জীবনে 'ছন্দে ছন্দে, দুলি আনন্দে'র একটুকু ছোঁয়ার পরশ বুলিয়ে দিতেন। আর মনে করিয়ে দিতেন কিভাবে জটিল-জীবন-কে সহজ করতে হয়; হাসি-খুশী-আনন্দ নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
ক্যামব্রিজ, ওন্টারিও, ক্যানাডা
২০১৪ জুন ১২
সৌজন্যে:
Life2Love
ShafSymphony
Vision Creates Value
আমাদের সেই স্মৃতি-ঝলমল কলেজের এক টুকরো স্মৃতি। আলোকচিত্র: শ.ই.।
No comments:
Post a Comment