Wednesday, 19 February 2014

A Visionary Banker & Writer Lutfar Rahman Sarkar ♥♪♥




Lutfar Rahman Sarkar ♥♪♥ লুৎফর রহমান সরকার
Photo: bb.org.bd

Lutfar Rahman Sarkar's Signature on 500 Taka note.

Nilufar Rahman ♥♪♥ নিলুফার রহমান

♥♪♥ Facebook Archive by Nilufar Rahman :: নিলুফার রহমান
https://www.facebook.com/nilufar.rahman1/media_set?set=a.10151775690143274.1073741864.596733273&type=3

https://www.facebook.com/nilufar.rahman1/media_set?set=a.10151775570868274.1073741863.596733273&type=3

https://www.facebook.com/nilufar.rahman1/media_set?set=a.10151783088648274.1073741865.596733273&type=3


♥♪♥ Featured Insights:

Lutfar Rahman Sarkar Family
Photo: Nilufar Rahman Facebook

VCV is delighted to present and archive farsighted banker Lutfar Rahman Sarkar's prolific work.

Stay tuned .... More to come....

Courtesy of Vision Creates Value
2014 Feb 19 :: 04 pm EDT

আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন লুৎফর রহমান সরকার
লুৎফর রহমান রিটন

গতকাল থেকেই আমি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। চ্যানেল আই-এর পর্দায় স্ক্রল যাচ্ছে—বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর লুৎফর রহমান সরকার ইন্তেকাল করেছেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। কানাডায় বসে স্ক্রলে সংবাদটি দেখছি আর বেদনার্ত হচ্ছি। গত মার্চের প্রথম দিকে সরকার ভাই বারডেম হাসপাতালে ছিলেন। খবরটা আমাকে জানিয়েছিলেন শেখ তোফাজ্জল হোসেন। আমি তখন বইমেলা শেষে কানাডা ফেরার প্রস্তুতি হিশেবে অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত সমাপ্তির কাজে ছুটোছুটি করছি। বিটিভির বিখ্যাত নিউজকাস্টার রেহানা পারভীন ০৯ মার্চ ফেসবুক ইনবক্সে সরকার ভাইয়ের জ্যেষ্ঠ কন্যা লতিফা জামানের ফোন নাম্বারটা আমাকে দিলেন। লতিফার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জানলাম—ভালো নেই সরকার ভাই। কেউ তাঁকে দেখতে গেলে চিনতে পারেন না। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যাবার, কিন্তু হাসপাতালের শাদা বিছানায় শুয়ে থাকা আমাকে চিনতে পারবেন না এমন একজন লুৎফর রহমান সরকারের সামনে আমি যেতে চাই না। আমি আমার শৈশব-কৈশোর থেকে সুদর্শন স্যুটেড-বুটেড চমৎকার প্রাণবন্ত যে লুৎফর রহমান সরকারকে দেখে আসছি সেই সরকার ভাইয়ের ছবিটাই থাকুক আমার স্মৃতিতে—এমন ভাবনায় তাঁকে আমি দেখতে যাইনি। কিন্তু সরকার ভাইয়ের অসুস্থতার খবরটি চ্যানেল আই প্রচার করুক এটা আমি চেয়েছিলাম। চ্যানেল আই নিউজের প্রীতিভাজন এসাইনমেন্ট এডিটরকে বললাম। সে বললো—‘ঠিক আছে। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তার কথার ধরণে আমার সন্দেহ হলো লুৎফর রহমান সরকারের মতো একজন ব্যাংকার-লেখকের অসুস্থতার খবরটি সম্ভবত তার প্রায়োরিটি ক্যাটাগরিকে ছুঁতে পারছে না। সেই সন্দেহ থেকেই নিউজ এডিটরকেও বললাম আলাদা ভাবে। আমার ইচ্ছেটিকে এবং সরকার ভাইয়ের অসুস্থতার খবরটিকে ভদ্রলোক যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেন—‘ঠিক আছে, ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ দু’তিনদিন পর নিউজ এডিটর সাহেবের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানালেন—‘হাসপাতালে খবর নিয়েছি। তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন এখন।’ (সুতরাং লুৎফর রহমান সরকারের অসুস্থতার সংবাদটি জায়গা পেলো না নিউজে।)
অবশেষে মরে গিয়ে আজ ২৪ জুন চ্যানেল আই-এর সংবাদে জায়গা পেলেন সরকার ভাই...।

সরকার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বলে বা লিখে পুরোটা বোঝানো সম্ভব নয়। আমাকে স্নেহ করতেন তিনি শর্তহীন। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তাঁর সুবিশাল হৃদয়ের বিশাল সদর দরোজাটি আমার জন্যে ছিলো উন্মুক্ত, সার্বক্ষণিক। কতোশতো স্মৃতি তাঁর সঙ্গে! কোনটা রেখে কোনটা বলি। আমার নামের সঙ্গে তাঁর নামের টু থার্ড সাদৃশ্যের কারণেই আমাদের সম্পর্কটা গভীর হয়েছিলো সেটা নয়। তিনিও ছড়াকার আমিও ছড়াকার, সে কারণেও নয়। কী রকম একটা পুত্রবৎ স্নেহ তিনি আমার দিকে প্রবহমান রেখেছিলেন, সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারতাম। আমাকে দেখলেই তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। মহাব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে তিনি সাদর সম্ভাষণে সিক্ত করতেন। এক দুপুরে, বারোটা সাড়ে বারোটায় চলে গেলাম তাঁর দপ্তরে। তিনি তখন সোনালি ব্যাংকের হেড অফিসের এমডি। তাঁর কক্ষের সামনের ওয়েটিং রুমের চেয়ার-সোফাগুলো অপেক্ষামান দর্শনার্থীদের চাপে পরিপূর্ণ। পিএ ভদ্রলোক বিরক্ত মুখে বসে আছেন। আমিও একজন দর্শনার্থী—এ কথা জানার পর জিজ্ঞেস করলেন আমি এপয়েনমেন্ট করে এসেছি কিনা। আমার না সূচক মাথা নাড়ানি দেখে চেহারায় মহাবিরক্তি ফুটিয়ে তিনি অপেক্ষমানদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন—‘দেখছেন্নি কী অবস্থা! আজকে হবে না। আপ্নে আরেকদিন আসেন এপয়েনমেন্ট কইরা।’ ভদ্রলোকের টেবিলের ওপর থেকে টুকরো কাগজের একটা স্লিপে নিজের নাম লিখে ওটা তাঁর হাতে দিয়ে বললাম—আপনি শুধু এটা স্যারের হাতে দেবেন। তিনি যদি চলে যেতে বলেন তো আমি চলে যাবো, অসুবিধে নেই। তার আগপর্যন্ত আমি অপেক্ষা করি? তাচ্ছিল্যের সঙ্গে—‘করেন’ বলে অহেতুক ফাইল খুলে ব্যস্ত হবার চেষ্টা করলেন তিনি। অপেক্ষমানরাও মনে হলো আমার ওপর খানিকটা বিরক্ত, বাড়তি একটা উটকো, অহেতুক সিরিয়াল লম্বা করছি বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতর থেকে পিএ-কে ডাকলেন এমডি স্যার। আমি রিকোয়েস্ট করলাম—ভাইজান আমার স্লিপটা লইয়া যাইয়েন কাইন্ডলি। ‘ঠিকাছে’ বলে পিএ সাহেব ভেতরে গেলেন। মিনিট খানেকেরও আগে তিনি বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাকে বললেন—‘যান আপ্নেরে স্যারে ভিত্রে যাইতে বলসেন।’

আমি ভেতরে ঢুকতেই মিষ্টি হাসিতে উদ্ভাসিত সরকার ভাই বললেন—একটু বসো, আমি এঁদের সাথে কাজটা সারি। এইফাঁকে তুমি চা-টা খাও। বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিলে সরকার ভাইয়ের মুখোমুখি দু’জন ভদ্রলোক বসে আছেন। তাঁদের একজন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে ঝোলাঝুলি করছেন—না আরো এক পার্সেন্ট না বাড়ালে আমি তো মারা পড়বো! সরকার ভাই বললেন—আরে আপনাকে মারা অতো সহজ না।

আমি বসেছি সরকার ভাইয়ের ডানদিকের চেয়ারে। টেবিল থেকে একটা লিটিল ম্যাগ তুলে নিয়ে তাতে আমি মনোযোগী হবার চেষ্টা করি। আমার জন্যে চা-বিস্কিট আসে। চা-য়ে চুমুক দিতে দিতে আমি লক্ষ্য করি হালকা ইয়েলো অকার রঙের খড়খড়ে কোট পরা (এই রকম বিদঘুটে রঙের কোট পরতেন ফয়েজ আহমেদ) সেই ভদ্রলোককে। খুবই শাদামাটা চেহারা। মাথায় চুল কম। দুধ-চিনি ছাড়া হালকা লিকারের চা তাঁর সামনে। হাফপ্লেটে রাখা কয়েকটা বিস্কিট। ওখান থেকে একটা বিস্কিট তুলে রঙ চায়ে সেটা ভিজিয়ে ভদ্রলোক খাচ্ছেন আর দরাদরি করছেন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে। আমি এই ফাঁকে লিটিলম্যাগ থেকে কয়েকটা লেখা স্ক্যান রিডিং পদ্ধতিতে পড়ে ফেললাম। একপর্যায়ে লোক দুজন বিদায় নিতে উঠে দাঁড়ালেন। ইয়েলো অকার ভদ্রলোক দীর্ঘ একটা হ্যান্ডসেক করলেন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে। সরকার ভাই দেখলাম একদম দরোজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন তাঁকে। ফিরে এসে হাসতে হাসতে সরকার ভাই বললেন—দেখলে এক পার্সেন্টের জন্যে এইরকম বিশাল একজন মানুষের কী রকম অস্থিরতা!

আমি জানতে চাইলাম—কে এই ভদ্রলোক?
সরকার ভাই অবাক হলেন—তুমি চেনো না তাঁকে!
আমাকে না সূচক মাথা নাড়াতে দেখে বিস্মিত সরকার ভাই বললেন—আরে ইনিই তো বিখ্যাত জহুরুল ইসলাম। আমাদের দেশের সেরা ধনী ব্যবসায়ী।
আমি তো লাফিয়ে উঠলাম—আরে তাই নাকি! ইস আগে জানলে তো একটু কথা বলতাম তাঁর সঙ্গে! এতো ধনাঢ্য একজন মানুষের পোশাক-আশাক এতো সিম্পল! এতো ধনী একজন মানুষের কথাবার্তা এতোটা শাদামাটা! কী করে সম্ভব?

সরকার ভাই বললেন—হাজার কোটি টাকার মালিক এই ভদ্রলোকের ভাগ্যটা দেখো কতো অপ্রসন্ন। কিছুই খেতে পারেন না। সব খাওয়া-দাওয়া নিষিদ্ধ। দেখলে না তোমার চা আর তাঁর চায়ের তফাৎটা কী রকম? দুধ-চিনি খাওয়া বারণ। মাংস খাওয়া বারণ। পোলাও-কোর্মা কিচ্ছু খেতে পারেন না। এমনকি তুমি যে দামি আর মজার বিস্কিটটা খেলে সেটাও নিষিদ্ধ তাঁর জন্যে। তাঁকে দিতে হলো ডায়াবেটিক কুকি। বাটার-মাখন-দুধ-চিনি-লবণছাড়া বিস্বাদ একটা বিস্কিট। একেই বলে ভাগ্য। মানুষ শুধু টাকার পেছনে ছোটে। এতো টাকা দিয়ে কী হয়!
আমি বললাম—ইসলাম সাহেবের পোশাক-আশাকও তো খুবই শাদামাটা। এতো ধনী মানুষ কিন্তু ফয়েজ ভাইয়ের কোটটা পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন...

আমার রসিকতায় হোহ্‌ হোহ্‌ করে হেসে উঠলেন সরকার ভাই—এটা তুমি কী বললে! ফয়েজ সাহেবের এই রকম একটা কোট তো ছিলো!!

কতো স্মৃতি সরকার ভাইয়ের সঙ্গে!
সরকার ভাই তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবসে রমনায় পহেলা বৈশাখের ছায়ানট পর্ব শেষ করে আমরা কয়েকজন দলবেঁধে আবেদ খানের গ্রিনরোডের বাসায় গেলাম। দলে আছেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, লুৎফর রহমান সরকার, আবেদ খান, সানজিদা আখতার এবং আমার স্ত্রী শার্লি। এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিলো যে আমরা আবেদ খানের বাসায় দ্বিপ্রাহরিক ভোজে অংশ নেবো এবং তুমুল আড্ডা দেবো। বিশাল একটা আড্ডা হয়েছিলো সেদিন, খেতে খেতে, খাবার টেবিলে। নানান হালকা-চটুল হাস্যে-লাস্যে-ভাষ্যে আমরা ভাসছিলাম। হঠাৎ আবেদ ভাই বলে বসলেন-- ‘রিটনের জীবনে তো কিছুই হলো না, ওর জন্যে কিছু একটা করেন সরকার ভাই।’ আচমকা এরকম কথায় আমি সত্যি বলতে কি একেবারেই হতভম্ব যাকে বলে। আমার প্রতি ভালোবাসা বশত আবেদ ভাই যে এরকম বলেছেন তাতে কারোই দ্বিমত নেই। কিন্তু আমি বেশ অপ্রস্তুত বোধ করছিলাম। আমাকে অপ্রস্তুত অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেন সরকার ভাই স্বয়ং—‘রিটনের জন্যে আমি নিজে থেকে কিছু করবো না। ও কি চায় আমাকে বলুক। আমি অবশ্যই করবো।’ তারপর আমার দিকে চেয়ে চেহারায় সেই অপরূপ হাসিটি উদ্ভাসিত রেখে বললেন—‘তুমি নিজেই একটা বৃক্ষ হও। স্বর্ণলতা হয়ো না।’
না, পরবর্তীতে আমি কিছুই চাইনি সরকার ভাইয়ের কাছে। ব্যবসা-বাণিজ্য টাকা-পয়সার ব্যাপারে আগ্রহটা কম ছিলো বলেই অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও ওপথে পা বাড়াইনি। কিন্তু সরকার ভাইয়ের সেই অসাধারণ কথাটা চিরদিনের জন্যে আমার মস্তিষ্কে গাঁথা হয়ে গেছে। প্রিয় সরকার ভাই, বৃক্ষ আমি হতে পারিনি সত্যি, কিন্তু স্বর্ণলতাও হইনি। আমি আপনার কথা রেখেছি।

সরকার ভাই যখন সোনালি ব্যাংকের এমডি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে ‘বিকল্প’ (বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান প্রকল্প) নামের একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন। সেই প্রকল্পের আওতায় ছাত্ররা সোনালি ব্যাংকের টাকায় গাড়ি কিনে (বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি-বেবিট্যাক্সি)ব্যস্ত নগরীর পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে যুক্ত করেছিলেন অভাবনীয় নতুন একটা মাত্রা। ভার্সিটি স্টুডেন্টরা ড্রাইভারের ভূমিকায় থাকলে যা হয়—নগরীর চেহারাটাই গেলো পালটে। আমি নিজেও ছাত্রদের চালানো বেবিট্যাক্সিতে চড়েছি যাত্রী হিশেবে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এই প্রকল্পের অধীনে কেউ কেউ প্রিন্টিং প্রেসের মালিকও হলো। এই মুহূর্তে ছাত্রনেতা ও কবি মোহন রায়হানের কথা মনে পড়ছে। মোহন এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘বিকল্প প্রিন্টিং প্রেস’ নামে একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন। পুরানা পল্টনে ওই প্রেসে আমি কয়েকবার গিয়েছি আমার পত্রিকা ‘ছোটদের কাগজ’-এর প্রচ্ছদ ও ভেতরের রঙিন পাতাগুলো ছাপার কাজ সারতে। তখন আমি দেখেছিলাম মোহন রায়হান তাঁর অফিসে ঢোকার মুখেই বাঁ দিকের দেয়ালে লুৎফর রহমান সরকারের বিশাল একটা আলোকচিত্র ফ্রেমবন্দি করে রেখেছেন। সরকার ভাইয়ের প্রতি মোহনদের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ছিলো ওটা। সরকার ভাই মোহন রায়হানের অর্থনৈতিক ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন। মোহন রায়হানের মতো আরো বহু তরুণ জীবনে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিলো সরকার ভাইয়ের এরকম ক্রিয়েটিভ আইডিয়ার কল্যাণে। সরকার ভাই সত্যিকার অর্থেই একজন ইনোভেটিভ দেশপ্রেমিক ছিলেন।

আমার পত্রিকা ‘ছোটদের কাগজ’কে তিনি নিয়মিত সহায়তা দিয়েছেন প্রাইম ব্যাংকে (উপদেষ্টা?) থাকাকালে। একশ কপি পত্রিকা তিনি কিনে নিতেন। তারপর তা বিলিয়ে দিতেন কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ক্লায়েন্টদের কাছে। সরকার ভাইয়ের পরামর্শে ব্যতিক্রমী একটা সিলমোহর বানানো হয়েছিলো। সেই সিলমোহরের ছাপ মারা একশ কপি ‘ছোটদের কাগজ’ পত্রিকা প্রকাশের পরের দিনেই চলে যেতো সরকার ভাইয়ের কাছে। আমি আমার অফিস সহকারী কিংবা অন্য কোনো কর্মীর হাত দিয়ে পত্রিকা পৌঁছাতাম না। নিজেই নিয়ে যেতাম। এটা তিনি খুব পছন্দ করতেন। কারণ এই উপলক্ষ্যে প্রতিমাসে একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হতো। পত্রিকা পৌঁছে দিয়ে তাঁর সঙ্গে এককাপ চা খেয়ে তারপর নিজের অফিসে ফিরতাম আমি। সে বড় আনন্দের দিন ছিলো। তিনি চাইতেন ছোটদের কাগজ যেনো বন্ধ না হয়।
ছোটদের কাগজ-এর একটা ‘টোকাই সংখ্যা’ করেছিলাম। সেই সংখ্যায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমাকে বলেছিলেন যদি আমি দায়িত্ব নিই তাহলে তিনি টোকাইদের পড়ালেখার জন্যে সহজ শর্তে ঋণ দেবেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি।

তিনি অগ্রণী-সোনালি-তে থাকাকালে খুব কাছে থেকে দেখেছি লিটিল ম্যাগ বা সাহিত্য সংকলনের জন্যে তাঁর মমতাটা কতোখানি। দূর কোনো মফস্বল শহর থেকে আসা অজানা অচেনা অখ্যাত অজ্ঞাত একজন ছোটকাগজ কর্মীও কোনোদিন খালি হাতে ফিরে যায়নি সরকার ভাইয়ের দফতর থেকে। ছোটকাগজওয়ালাদের সবার জন্যেই তাঁর বিজ্ঞাপন বরাদ্দ থাকতো। স্বাস্থ্যহীন জীর্ণশীর্ণ লিকলিকে এইসব কাগজের তিনি ছিলেন অলিখিত অভিভাবক। তিনি চাইতেন সারাদেশের তরুণদের মধ্যে সাহিত্যচর্চাটা অব্যাহত থাকুক। ওরা লিখুক। পড়ুক। সম্পাদনা করুক। বলতেন, তরুণরা সাহিত্যপ্রেমী হলে দেশের মঙ্গল। সাহিত্যপ্রেমী একজন তরুণ কখনোই দেশের অমঙ্গল হতে দেয় না।

কতো স্মৃতি সরকার ভাইকে নিয়ে!
সরকার ভাই ছড়া লিখতেন। তাঁর সঙ্গে সামনা সামনি পরিচিত হবার বহু আগেই আমি তাঁর নামটি জানতাম। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর থেকে প্রকাশিত ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘নবারুণ’-এ আমি তাঁর লেখা ‘ঊনিশ জেলার ছড়া’টি পড়েছিলাম। কোন জেলা কী জন্য বিখ্যাত, কোন জেলায় কী কী পাওয়া যায় এইসব ছিলো ছড়ার বিষয়বস্তু। পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। অনেক পড়ে, ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে আমার সম্পাদনায় তিন খণ্ডে ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত ছড়া’ প্রকাশিত হয়। ওতে লুৎফর রহমান সরকারের একাধিক ছড়া অন্তর্ভূক্ত ছিলো। তিনি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার সরকার ভাইকে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। সরকার ভাইও স্যারের প্রতি এবং কেন্দ্রের প্রতি ছিলেন অসম্ভব দায়িত্বশীল। আহমাদ মাযহার যথার্থই লিখেছে—‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টিদের মধ্যে তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী! সায়ীদস্যারের স্বপ্নের প্রহরী! ট্রাস্টি হিশেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি যা বলতেন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, স্বাপ্নিকেরা তো গতি চায়, আমরা আপনার স্বাপ্নিক গতিকে নিরাপদ রাখবার চেষ্টা করব নানা সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করবার মাধ্যমে আপনাকে সাবধান করে দিয়ে!’

আমার জানামতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাইরেও সায়ীদ স্যারকে তিনি নিরাপদ রাখতে চেষ্টা করতেন। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। দেশে তখন শেয়ার কেনার ধুম পড়েছে। সবাই শেয়ার কিনছে। সিঙ্গার-এর একশ টাকার একটি শেয়ারের দাম তেরো হাজারে কেনা বেচা হচ্ছে। সায়ীদ স্যার ঢাকা কলেজ থেকে অবসর নেয়া বাবদ অথবা বাড়ি বিক্রি বাবদ কিছু টাকা পেলেন হাতে। সেই টাকায় তিনি কার প্ররোচনায় যেনো কিছু শেয়ার কিনে ফেললেন। এবং মাস না পেরোতেই লাফিয়ে লাফিয়ে সেই শেয়ারের দাম তিন চার গুণ বৃদ্ধি পেলো। সায়ীদ স্যার বৃদ্ধি পাওয়া অংক হিশেব করে দেখেন কয়েক লাখ টাকা লাভ হয়েছে। সেই কাহিনি তিনি মহাউল্লাসে প্রচার করেন আমাদের কাছে। আমাদের কাছে মানে আবেদ খান-সানজিদা আখতার-মমতাজ উদদীন আহমেদ-কামরুননেসা হাসান এবং আমার কাছে। আমরা সবাই মিলে স্যারের সেই লাভের অংকে নিজেদের হক বসাই। স্যারকে ঠেঁসে ধরি—বহুৎ লাভ করলেন, এইবার কিছু খর্চা করেন। আমাদের সবাইকে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে ভালোমন্দ খাওয়ান। এক দুপুরে শেয়ারে ইনভেস্ট করা টাকার লভ্যাংশের কিয়দংশ তিনি একটি চৈনিক রেস্তোরাঁয় ঢেলে দিলেন অকৃপন ভাবে দ্বিধাহীন চিত্তে—‘খাও খাও, কতো আর খাইবা, আমার এখন অনেক টাকা। হেহ্‌ হেহ্‌ হেহ্‌।’
কিন্তু স্যারের হাসি বেশিদিন স্থায়ী হলো না। মাস না পেরোতেই ফুলে ফেঁপে ওঠা স্যারের টাকাগুলো কাগজ হয়ে গেলো। লাভ তো দূরের বস্তু মূল টাকাটাও প্রায় হাপিস! স্যার দুখী দুখী চেহারা নিয়ে সেই কাহিনি আমাদের শোনান। আমরা উদাস হবার ভান করে থাকি। স্যার তখন আমাদের কাছে সরকার ভাইয়ের পরামর্শের কথাটা বলেন। সরকার ভাই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এইসব শেয়ারের খপ্পরে না পড়ার জন্যে। বলেছিলেন—‘শরীরের সবক’টা অঙ্গ জীর্ণশীর্ণ, অপুষ্টির শিকার। কিন্তু একটি হাত খুবই সুস্থ সবল। এইরকম হওয়াটা মোটেও সুস্বাস্থের লক্ষণ নয়। শেয়ার বাজারে খুব বড় ধরণের একটা ডিজাস্টার হবে। হবেই।’ সায়ীদ স্যার বললেন—সরকার ভাইয়ের কথা না শুনে ভুল করেছি। আসলে লোভ করে ফেলেছিলাম। লোভের শাস্তি তাই হাতে-নাতেই পেয়ে গেছি।

সান্তনা হিশেবে সায়ীদ স্যারকে আমি আমার পরিণতির বিষয়টা বয়ান করি। প্রতিটি তেরো হাজার টাকা দামে সিঙ্গারের তেরোটা শেয়ার আমিও কিনেছিলাম। দাম বাড়তে বাড়তে পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাতে লাফাতে ওটা ছাব্বিশ হাজার হয়েছিলো। আমি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যার মাধ্যমে কিনেছি সে আমাকে অস্থির না হবার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলো—‘আপনার তো মোটে তেরোটা শেয়ার। আমার আছে একশ’টা। আমি তো ধরে রেখেছি। বিক্রি তো করছি না। অপেক্ষা করেন, এটা আরো বাড়বে।’
কিছুদিন অপেক্ষার পর সেই শেয়ার একদিন দেখলাম দুইশ টাকায় নেমে এলো! স্যারকে তো তাও পরামর্শ দিয়েছিলেন দেশের সেরা কিংবদন্তি ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকার। কিন্তু আমাকে কেউ পরামর্শ দেননি। আমিও ধরা খেয়েছি মধ্যবিত্ত-মানসিকতার বোকামিতে। সরকার ভাইকে গোপনে আমার শেয়ার কেলেংকারীর কাহিনিটা বলেছিলাম। খুব আফসোস করেছিলেন তিনি। কারণ সরকার ভাই জানতেন বাড়তি টাকা-পয়সা নেই আমার। গরিব মানুষ আমি। সরকার ভাই বলেছিলেন—কয়েকজন জোচ্চোর টাইপের মানুষের কারণে সাধারণ মানুষেরা সর্বশান্ত হলো। এদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ।

জাতীয় কবিতা পরিষদের সঙ্গেও সরকার ভাইয়ের ছিলো আত্মিক সম্পর্ক। কবিতা উৎসবের পরিচালনা কমিটিতে আমরা তাঁকে রাখতে চাইলে কখনোই তিনি বিমুখ করেননি। কবিতা পরিষদের ফান্ড রেইজিং-এ তাঁর অবদান ছিলো বিপুল। তিনি ছিলেন তরুণদের যে কোনো উদ্যমের সহযাত্রী। সহযোদ্ধা। অভিভাবক। তরুণদের সম্পৃক্ততা চাইতেন তিনি দেশের সকল কর্মকাণ্ডে। তাঁর কল্যাণেই ভিন্ন পেশার মেধাবী তরুণরা ভালো চাকরি পেয়েছিলো ব্যাংকিং সেক্টরে। সিডনি থেকে টেলিফোনে গতকাল সেই কথাই বলছিলো বন্ধু অজয়দাশ গুপ্ত। অজয় বলেছে—‘সরকার ভাইয়ের কারণেই আমরা ব্যাংকে ঢুকতে পেরেছিলাম। আমাদের পথটা তৈরি করে দিয়েছিলেন লুৎফর রহমান সরকার।’ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অজয় এখন ওখানকার বিখ্যাত একটি ব্যাংকের চৌকশ কর্মকর্তা।

সরকার ভাইয়ের সঙ্গে অনেক মজার স্মৃতি জমা রেখেছি আমি আমার স্মৃতির মনিকোঠায়। ২০০০ সালে আগামী প্রকাশিত আমার কোলাজধর্মী গদ্যরচনার সংকলন ‘যত্রতত্র কয়েকছত্র’র একটি অধ্যায়ের বিষয় ছিলেন লুৎফর রহমান সরকার। ওই সংকলন থেকে কিছু অংশ এখানে উদ্ধার করছি—
‘‘আমি কী করি—এই প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়েছিলাম সর্বশেষ, ’৯৬-এর ডিসেম্বরে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীর ডিসেম্বরে। সে বছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে সকাল সাড়ে এগারোটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর লুৎফর রহমান সরকারের কাছে গেলাম। আমার পরনে নীল জিন্স প্যান্ট আর সবুজ-শাদা ঝুরি প্রিন্ট সুতি পাঞ্জাবি। পায়ে কোলাপুরী চপ্পল। আমার বেশ-ভূষা সম্ববত পছন্দ হয়নি গভর্ণরের পিএ বা পিএস বা আর্দালি ভদ্রলোকের। তাই ভেতরের কক্ষে আমার যাওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করলেন তিনি। অবশ্য আমার নামটি শুনে ভদ্রলোক কপাল কুঁচকে রিপিট করতে বললেন—কী নাম বললেন?
আমি আবারো নাম বললাম। আমাদের নামের সাদৃশ্য সম্ভবত কিছুটা অবাক করেছে তাকে। নাম প্রায় একই কিন্তু একজন গভর্ণর আরেকজন শুধুই নর। একারণে তার কথার কোনো নড়চড় হলো না। সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি—স্যার খুব ব্যস্ত, দেখা করতে পারবেননা। এপয়েনমেন্ট করে আসবেন।
বিনয়ের অবতার আমি তাকে অনুরোধ করলাম—একবার অন্তত তাঁকে আমার নামটি বলুন। তিনি দেখা করতে নাচাইলে আমি চলেই যাবো।
আমাকে মিনিট বিশেক বসিয়ে রাখলেন তিনি। এর মধ্যে অনেকেই এলেন গেলেন। তিনিও টেলিফোনে গভর্ণর সাহেবের সঙ্গে কয়েকবার কথা বললেন। কিন্তু আমার নামটি আর বলেন না। আমার পীড়াপীড়িতে অতিষ্ট হয়ে শেষে তিনি মহাবিরক্তিতে তেতো করল্লার মতো মুখভঙ্গিতে রিসিভার তুলে বললেন—‘স্যার, একজন লুৎফর রহমান লিটন নামে......আমি শুধরে দিলাম—লিটন না লিটন না রিটন...
‘আহ্‌’ বলে আমাকে থামতে ইঙ্গিত করলেন তিনি। তারপর মুহূর্তেই খুব বিস্মিত হবার মতো ভঙ্গি করে বললেন—স্যার তো আপনাকে যেতে বলসেন! ভদ্রলোক যারপরনাই হতাশ। আমি খুব কৌতুক বোধ করলাম ভদ্রলোককে হতাশ হতে দেখে।
কুশল বিনিময়ের পর সরকার ভাই আমার আগমন হেতু জানতে চাইলেন। আমি বললাম—কিছু টাকার দরকার। তাই এসেছি।
অবাক হলেন গভর্ণর—কতো টাকা? (জীবনে এই প্রথম আমি তাঁর কাছে টাকা চেয়েছি। তাছাড়া আমি কোনো ঋণখেলাপী নই।
খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে সরকার ভাই টাকার অংকটা জানতে চাইলেন ফের—কতো টাকা লাগবে তোমার?
--দশ টাকা হলেই চলবে।
--মাত্র দশ টাকার জন্যে তুমি আমার কাছে এসেছো?
--জ্বী সরকার ভাই। মাত্র দশটি টাকার জন্যে এলিফ্যান্ট রোড থেকে তিরিশ টাকা স্কুটার ভাড়া দিয়েছি অলরেডি। ফিরতে আরো তিরিশ লাগবে। দশ টাকার জন্যে ষাট টাকা খরচ।
দেশের বাঘা বাঘা ঋণ খেলাপীকে সামাল দিতে পটু সরকার ভাই আমার মতোন একজন নিরীহ ছড়াকারকে সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গেছেন। তা হিশেব যেনো কিছুতেই মিলছে না। হিশেবটা তাই মিলিয়ে দিলাম আমি
--আপনার স্বাক্ষরসহ প্রথম দশ টাকার একটি নতুন নোট আজ ছাড়া হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম। তাই চলে এসেছি আপনার দরবারে। যদি একটা স্মারকচিহ্নসহ দশটি টাকা আমাকে দেন তো ভীষণ খুশি হবো আমি।
আমার কথায় উচ্চ কণ্ঠে হেসে উঠলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর জনাব লুৎফর রহমান সরকার। দুর্ভাগ্য কি সৌভাগ্য ঠিক অই সময়ই আমাকে আটকে রাখা ভদ্রলোকটি কক্ষে প্রবেশ করলেন। সরকার ভাই ড্রয়ার থেকে এক তাড়া চকচকে দশ টাকার নোটের একটা বান্ডিল খুলে ০১ নম্বরযুক্ত প্রথম নোটটি আমাকে উপহার দিলেন। অটোগ্রাফসহ। এই টাকাটা আমি জীবনেও খরচ করবো না।–-থ্যাংকু, আজ যাই সরকার ভাই আরেকদিন আসবো। বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালাম আমি। আমার এরকম পাগলামোতে গভর্ণর সাহেব খুবই মজা পেয়েছেন। এবং স্নেহবশত চেয়ার থেকে উঠে অহেতুক বা অনাবশ্যক সৌজন্য প্রকাশ করলেন তিনি আমাকে দরোজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে। ঘটনাটি চাক্ষুষ করে আমাকে আটকে রাখা ভদ্রলোকটি আগের চেয়ে অধিক বিস্মিত। আমি হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছি। ভদ্রলোক আমার পিছু নিলেন—এই যে স্যার, আচ্ছা আপনি কী করেন?
এলিভেটরে প্রবেশ করতে করতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লোকটাকে আরো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললাম—আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সঙ্গে দেখা করি।’’

সরকার ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া সেই অতিমূল্যবান ঐতিহাসিক দশটাকার নোটটি আজও আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি। নোটটির একপিঠে গভর্ণর হিশেবে লুৎফর রহমান সরকারের মুদ্রিত স্বাক্ষর। অপরপিঠে আমার নাম লিখে তার নিচে কালো কালিতে লুৎফর রহমান সরকারের একই রকম স্বাক্ষর অর্থাৎ যাকে বলে জ্যান্ত অটোগ্রাফ। এই টাকাটা আমি কোনোদিন খরচ করবো না।

গুডবাই প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় লুৎফর রহমান সরকার—আটলান্টিকের এপার থেকে আপনার জন্যে শোকার্ত হৃদয়ের সবটুকু শুভ কামনা। যেখানেই থাকুন না কেনো, ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। যেমনটি আপনি ছিলেন।
২৫ জুন ২০১৩

No comments:

Post a Comment