Friday 17 July 2020

গাছের ছায়ায়, প্রাণের মায়ায়


[উৎসর্গ : রমজান আলী, শাহজাহান মিঞা, আবদুল গফুর ও খলিলুর রহমান-কে, যারা হাত-ভ'রে দিয়ে গেছেন! আমাদের ভিত্তি নির্মাণ করে দিয়েছেন।]

গাছের ছায়ায়, প্রাণের মায়ায়। ... ....

যদিও এখন বানানো গল্প বেশি জনপ্রিয়। একটা জীবনের গল্প বলি ...!

ছোটোবেলায় যখন দাদু বাড়ি যেতাম; দাদু বাড়ির পেছনে গাছের ছায়ায় বসে বলতেন, "পুকুরের ওই পারে কয়টা নারিকেল, সুপারি, ... কী কী গাছ আছে গুনে এসো।" সারি সারি গাছ গুনতে আমরা হিমশিম খেতাম। তখন বুঝিনি। কেন করতেন? কেন এ-খেলা খেলতেন?

আজ ২০২০ সালের করোনাকালে জানতে চেষ্টা করছি-- কেন কোরেছিলেন? কেন এখনো সেই  গাছ গুনছি? কেন হিসেবে মিলছে না? কে, কেন আমাদের স্মৃতি ঝলমল দিনগুলি চুরি করে নিলো!

পুকুর পারের এই গাছের ছায়ায় মায়ায় অনেক ক্লান্ত পথিকের ক্ষণিকের শ্রান্তি জুড়াতে দেখেছি। কত মোহনীয় ছিলো সেই সারি সারি গাছের ডাল-পালার-পাতার 'ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে ...' নৃত্য-গীতি।

দাদু বাড়িতে ছয়টা ঘর ছিল। তার ছয় ছেলের জন্য। সামনের দিক থেকে-- উঠোন, ২+২ = ৪টা ঘর, ভেতরের উঠোন, ২টা ঘর ও বাঁশ বাগান; দুটো পুকুর মিলে একটা বিশাল পুকুর। 'বাঁশ বাগানের মাথা ওপর চাঁদ উঠছে ওই'-- দেখেছি; কবিতা শুনেছি। সামনের ৪টা ঘরের মাঝামাঝি ছিল একটা পেয়ারা গাছ। সেই পেয়ারার ভেতরটা ছিল গোলাপি রঙা। এমন স্বাদের পেয়ারা! আজও ভুলিনি।

এই বাড়ির একজন ছিলেন আমাদের বৃক্ষছায়া! যিনি মায়া ও মমতা দিয়ে আমাদের সবার শিক্ষার ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সুন্দর হাতের লেখা শিখিয়েছেন। ধন্য সেজন্য। যিনি আমার জন্য ওভাল্টিন টিনের কৌটার ভেতরে আম লুকিয়ে রাখতেন! তখন বুঝিনি কেন করতেন? আজ বুঝি। কারণ তিনি ছিলেন অতুলনীয় একজন। এটা ছিল তার ভালোবাসায় বৈষম্যের নীরব প্রতিবাদ।

বাড়ির সামনের উঠোনে ধান মলন-মলার গোরুগুলোর পেছনে ছুটেছি বহুদিন বহুবার। কর্দমাক্ত পচা ভাদ্রেও দৌড়ে গিয়ে তাল কুড়িয়েছি। দাদু গাছ থেকে ডাব পাড়তে দিতেন না। দাদুকে ফাঁকি দিয়ে ডাব চুরি করে খেতাম। এটা ছিল আমাদের কাছে আনন্দময় এক খেলা! বেলা অবেলায় পুকুরে সাঁতার কেটেছি; মাছ ধরেছি! কত রকমের খেলাই না খেলেছি ছেলেবেলায়! আজও, আমি সেইসব স্মৃতির ভেলায় ভেসে বেড়াই!

সেদিন বুঝিনি দাদু প্রকৃতির সাথে নিবিড় প্রেম শেখাচ্ছেন; জীবনের অঙ্ক শেখাচ্ছেন। জানতাম না তার পরবর্তী দুই প্রজন্ম বাংলাদেশ থেকে উত্তর মেরুতে এসে বৃক্ষরোপণ করবে; যা বিশ্ব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে। প্রকৃতির কাছে শিখেছি কীভাবে শর্তহীন ভালোবাসতে হয়। কীভাবে জীবনকে বিলিয়ে দিতে হয়।

আমাদের আঙিনায় জন্মালেও প্রাচীন বৃক্ষগুলো স্থানীয় ও বিশ্ব পরিবেশের সম্পদ। বিদেশে এগুলো কাটতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন। পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া সে অনুমতি পাওয়া একদম সহজ নয়।

পাঁচ-রকমের অজুহাতের গল্প সাজিয়ে গোপনে এই প্রাচীন বৃক্ষগুলো কাটা হয়েছে। শুনবেন কী কারণে? ১. বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ..., ২. শিলাবৃষ্টিতে ঘরের চাল ..., ৩. টেলিফোন টাওয়ার ..., ৪. নারিকেল ধরে না ..., ও ৫. ভাইরাস ...! এই ঐতিহ্য এভাবে নষ্ট করার একক অধিকার তার আছে কী?

কাউকে না জানিয়ে প্রায় শতবর্ষী বৃক্ষগুলো কাটার নিচের ছবিগুলো দেখে আজ ভীষণ কষ্ট পেলাম। প্রাচীন বৃক্ষ কাটা বিশাল অপরাধ নয় কী? জানি না, যারা আজ আমাদের দূর আকাশের তারা, তারা বেঁচে থাকলে এটা মানতে পারতেন কি না! সেই ছোটোবেলার মতো, আমাদের মতো পরবর্তী প্রজন্ম আর কোনোদিন গর্ব কোরে তাদের সাথিদের বলতে পারবে না, "জানিস, আমার নানু/দাদু বাড়িতে একশ'র বেশি গাছ আছে!" আমাদের আগামী-প্রজন্ম হয়ত সেই কথা কোনোদিন জানবেই না। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আজ এই কথাগুলো বলে গেলাম। প্রাচীন বৃক্ষগুলো কাটার তীব্র প্রতিবাদ করছি।

Plant Potential Infogram A. PC Facebook biggani.org Group 20201223

Plant Potential Infogram B. PC Facebook biggani.org Group 20201223

Plant Potential Infogram C. PC Facebook biggani.org Group 20201223

১. এই সেই দাদু বাড়ির সামনের উঠোন। My Click. ১৯৯০?

২. এই সেই দাদু বাড়ির পুকুর পাড়। ২০২০?

৩. এই সেই দাদু বাড়ির পুকুর পাড়। ২০২০?

৪. এই সেই দাদু বাড়ির পুকুর পাড়। ২০২০?
ছবি ২-৪: ড. শরিফুল ইসলাম, জাপান।

৫. দাদু / নানু বাড়িতে জাল দিয়ে মাছ ধরার প্রচেষ্টা। ১৯৮৪?

কৃতজ্ঞতা: ড. এ টি এম শরিফুল ইসলাম, জাপান। যার পোস্ট থেকে প্রাচীন বৃক্ষ কাটার ছবিগুলো পেয়েছি। অনুপম শুভেচ্ছা ভায়লেট হালদার ও শফিকুল ইসলাম বাহার-কে প্রুফরিড করার জন্য।

P.S. As friends of the environment, we plan to plant 1M (planted over 436,858♣) Trees ♣ by 2♣3♣ under the TD Tree Days Program. ♣ TD Friends of the Environment Foundation.


শ. ই.
শফিউল ইসলাম
Shafiul Islam
♣ প্রকাশকাল: ২০২০০৭১৭-১৮
♣ শেষ সম্পাদনা: ২০২০১২২

14 comments:

  1. বৃক্ষকথা ... 🌳🌴🌲🌿
    http://www.chttimes24.com/archives/80883

    ReplyDelete
  2. "সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা নান্দনিক প্রতিবাদ গাঁথা। ভালো লাগলো।"
    ~ ড. এটিএম শরিফুল ইসলাম, Japan

    ReplyDelete
  3. গাছের ছায়ায় প্রাণের মায়ায় জীবন জড়িয়ে আছে।

    ReplyDelete
  4. পড়ে খুব ভাল লাগলো ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্য সেজন্য। অনুপম শুভেচ্ছা। 🌷🍁🌹

      Delete
  5. গাছের ছায়ায় প্রাণের মায়ায়
    লিখাটি দারুণ লেগেছে ।গোছানো ও প্রানবন্ত লিখা
    Eyena khanam

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর। 🍁

      Delete
  6. "কীর্তিনগরের বাড়ীর নারিকেল গাছগুলো কেন, কিভাবে কাটা হলো!!! মৃত্যুর আগে ডাঃ করিম কাকার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম। উনি দুঃখ করে বলেছিলেন, এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত, অথচ উনাকে কোনোকিছুই জানানো হয়নি।"
    ~ Atm Shariful Islam, 20200708

    ReplyDelete
  7. গাছগুলো কাটার কথা শুনে আব্বা অনেক কষ্ট পেয়েছিলে। দাদা বাড়ির পুকুর ন্যাড়া এটা ভাবাই যায় না।

    ReplyDelete
  8. This comment has been removed by a blog administrator.

    ReplyDelete
  9. ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  10. দাদুর বাড়ির স্মৃতি চারণ আমাদের শইশবকে মনে করিয়ে দেয়

    ReplyDelete