Saturday 16 July 2011

মানবতাবাদীতার ফেরিওয়ালা


মানবতাবাদীতার ফেরিওয়ালা

by Naznin Seamon (নাজনীন সীমন) on Friday, July 22, 2011 at 12:25am ·

পৃথিবীতে বরাবরই দুর্বল গোষ্ঠী শিকার হয় শক্তিশালীর, টিকে থাকে শক্তিমানের আধিপত্য। ডারউইন না বুঝেও বা সচেতন না হয়েও জীব জগতের প্রত্যেকে এই তত্ত্বকে নিয়ত প্রমাণ করে চলে। বোঝার মধ্যে আছে মানব প্রজাতি; কিন্তু বই পড়ে, তা নিয়ে ভেবে চিন্তে তো আর আমরা জীবন যাপন করিনা; তাই তাদের ক্ষেত্রেওে এই জ্ঞান থাকে পুঁথিগত বিদ্যার ভেতরে। বহু বহু আগে একসময় নারী পুরুষের তুলনায় দুর্বল এমন কোনো চিন্তা ছিলো না মানুষের। দলবদ্ধ ভাবে সবাই শিকার করেছে, খেয়েছে, ঘুরেছে, সঙ্গমের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করেছে। এই দলবদ্ধতা যতোই সংঘবদ্ধ রূপ নিয়েছে, ততোই নিয়ম কানুন তৈরী হয়েছে। আবার শুরুতে ধর্মের কোনো নাম গন্ধ ছিলো না; মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে বা স্বার্থসিদ্ধির কারণে আরম্ভ করেছে ধর্মীয় আচার নিষেধ। সৃষ্টি হয়েছে অদৃশ্য এক শক্তির এবং তার প্রচারক কিছু মহান অবতারের। ভয় ভীতির মাধ্যমে তারা অপেক্ষাকৃত কম চিন্তাশীল বা সাধারণ মানুষের মধ্যে বসন্ত রোগের মতো ছড়িয়েছে অলৌকিককে শন্কা করার বীজ। এই কাজ করতে গিয়ে এইসব ধর্মীয় পুরুষেরা তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে দুই শ্রেণীর মানুষকে----মুক্তমনা, যুক্তিবাদী, সচেতন ও উৎসুক মানুষ এবং নারীকে। গ্যালিলিও, ব্রুনো থেকে শুরু করে আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদের মতো মানুষেরা প্রথমোক্ত শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত যাদের প্রশ্ন থাকার কারণে অপদস্হ তো বটেই একমাত্র সম্বল জীবনও হুমকির মধ্যে পড়েছে। আর নারীকে দেখানো হয়েছে দুর্বল গোষ্ঠী হিসেবে যার রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে পুরুষদের। এবং ধর্মের শৃঙ্খলের মাধ্যমে এদের যাবতীয় স্বাধীনতা হরণ করে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে বশবর্তী গৃহপালিত জন্তু হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। যুগের বিবর্তনে মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট, স্যিমোন দ্য বোভোয়ার, ব্রন্টে, মিল, এ্যাঙ্গেলস, ব্রাউনমিলার, মিলেট, ডিকিনসন, উলফ, এ্যান্জেলো, মরিসন, ওয়াকার, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সফিয়া খাতুন, লীলা রায়, আমতুস সালাম, মনোরমা বসু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, এম. এন রায়, সরলা দেবী, নজরুল, সুফিয়া কামাল, হেনা দাস, জাহানারা ইমাম, হুমায়ুন আজাদ সহ অসংখ্য মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজস্ব ভাবে এই শিকল থেকে বের হবার প্রেরণা যুগিয়েছেন, বুঝতে শিখিয়েছেন এটি অন্যায় ও অমানবিক, প্রতিবাদ করার চিন্তাসূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন, নিজেরা প্রতিবাদ করেছেন।
    সময় বদলেছে অনেক। এখন আর আগের মতো প্রতিদিন যৌতুকের জন্য নির্যাতনের খবর আসে না, এসিড দগ্ধের সংখ্যা বেড়ে চলে না, ধর্ষণের সংখ্যাও আনুপাতিক হারে কমেছে অনেক। আইনের প্রয়োগই এর অন্যতম কারণ। আবার অন্যদিক চিন্তা করলে দেখা যায়, নতুন ধরনের নির্যাতন পদ্ধতি বেরিয়েছে। কিছু নাম হোলো মানসিক চাপ সৃষ্টি করা, ভাষাগত অত্যাচার, ইভটিজিং, ব্ল্যাকমেইলিং, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও চিত্র প্রকাশ, ফেসবুক সন্ত্রাস প্রভৃতি ----এর বেশ কয়েকটি আবার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। শারীরিক সন্ত্রাসের তীব্রতা কমেছে শ্রেণী বিশেষে, কিন্তু শাসন, ধরে রাখার প্রবণতা, শৃঙ্খলিত করার চেষ্টা কমেনি, বরং নারীদের প্রগতির সাথে সাথে নতুন এক উপসর্গের উদ্ভব ঘটেছে---ভয় ও হিংসার সংমিশ্রণে একটা কিছু যার নাম এখনো নির্দিষ্ট করে প্রকাশিত হয়নি, তবে প্রকাশ অত্যন্ত ভয়ন্কর। সফল, শিক্ষিত নারীদের নিয়ে তাদের পথ চলার পুরুষ সঙ্গীরা এক রকম বিপাকে পড়েছেন---নারীর এইসব গুণাবলী তাদের যেমন পছন্দ সমাজে খাপ খাইয়ে চলার জন্য, ঠিক তেমনি এগুলো তাদের এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখে কখন না জানি নারী সঙ্গী/স্ত্রী ছেড়ে চলে যায়। তারও চেয়ে বড় ভয় ও লজ্জা যদি নারীটি পুরুষটির চেয়ে কোনো অংশে বেশী যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, অনবরত এক ধরনের হীনমন্যতা দহন করতে থাকে এইসব মানুষদের এবং এই অর্ন্তদ্বন্দ্বের বর্হিপ্রকাশ ভীষণ আকার ধারণ করে ক্ষেত্র বিশেষে।
    এরকমই এক ঘটনার মুখোমুখি আমরা হলাম সাম্প্রতিক সময়ে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মারাত্নক নির্যাতনের শিকার হলেন স্বামী কর্তৃক। কারণ তাঁর সাফল্য নাকি অপর পক্ষকে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিলো। ঈর্ষান্বিত, চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভীত হওয়াটাইতো স্বাভাবিক, কারণ তিনি ‘নারী’র পক্ষে যা ‘শোভন’ নয়, তাই-ই করছিলেন। নারী সম্পর্কে আমাদের সনাতন বোধ ও বিশ্বাস অনেকটা অপরিবর্তনীয়ই থেকে যায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, “প্রকৃতিই রমণীকে বিশেষ কার্য্যভার ও তদনুরূপ প্রবৃত্তি দিয়া গৃহবাসিনী করিয়াছেন—পুরুষের সার্ব্বভৌমিক স্বার্থপরতা ও উৎপীড়ন নহে—অতএব বাহিরের কর্ম দিলে তিনি সুখীও হইবেন না, সফলও হইবেন না” (উদ্ধৃত, নারী, ১১৯), এবং নারীমুক্তিবাদী কৃষ্ঞভাবিনী দাসের সাথে স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে নারীমুক্তি বিষয়ে বিতর্কে এভাবেই জোরালো মন্তব্য প্রকাশ করেন তিনি। যখনই একজন নারী সফল বা সঙ্গী পুরুষটি থেকে অধিকমাত্রায় সফল হন, এই সময়েও এমনকি একজন উচ্চশিক্ষিত পুরুষও শন্কা বোধ করেন, হীনমন্যতায় ভোগেন বিবিধ কারণে যার কিছু সামাজিক চাপে, কিছু ব্যক্তিগত সঙ্কীর্ণতা থেকে উদগত। রবীন্দ্রনাথকে এই প্রসঙ্গে আবারও উল্লেখ করতেই হয়। ‘শেষের কবিতায়’ তিনি নিবারণ চক্রবর্তীর মুখে তাঁর নিজস্ব ভাবনার প্রতিধ্বনি তোলেন এই বলে যে, “পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলে নারী আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য ভয়ন্কর”। আমাদের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বোধকরি এখনো এই তত্ত্বেই বিশ্বাস রাখেন যার প্রতিচ্ছবি নিয়ত আমরা চারপাশে দেখতে পাই।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্বামী ভদ্রলোকের দাবী রুমানা মন্জুরকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছিলো, তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, এই কারণেই আবারো কানাডা যেতে চাইছিলেন। বলা বাহুল্য সবই সম্ভব। এবং মনে রাখা আবশ্যক যে নারীকে ঘায়েল করার জন্য সবচে’ মোক্ষম অস্ত্র হোলো তার চরিত্র নিয়ে কথা বলা। চরিত্রের সংজ্ঞায় অবশ্য তেমন কিছু থাকে না, এমনকি সত্যবাদীতাও স্হান পায়না এই তালিকাতে। বরং এখানে একক আধিপত্য করে একজন পুরুষের সঙ্গে নারীটির শারীরিক বা মানসিক সম্পর্ক----বিয়ের আগে বা পরে নির্বিশেষে। এমনকি নারীটি যদি বলাৎকারের শিকারও হন, তাতেও সাধারণত নারীকেই দোষারোপ করা হয় তার চরিত্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। কারণ নষ্ট মেয়ে না হলে কেনোই বা একজন তার দিকে নজর দিতে যাবে। পুরুষ যাতে তার পথ ভুল না করে, তার যেনো কোনো রকম বদ স্পৃহা জেগে না ওঠে, কামনার আগুনে যাতে অঙ্গার না হয় সেজন্য ধর্মীয় গ্রন্হাবলীতে, বিশেষত কোরানে নারীদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যাতে তার সৌন্দর্য আস্বাদনের সাধ কাউকে দহন করে বিপথে চালিত না করে। তো আমরাও নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই বাতলে দেয়া পথে চলি অধিকাংশ মানুষ। এমনকি দেখা যায় কোনো মেয়েকে উত্যক্ত করছে একদল বা একটি বখাটে ছেলে; দোষ কার? অবশ্যই স্ত্রী লিঙ্গধারী মানুষটির। ঠিক তেমনিভাবে এই ঘটনাতেও দাঁড়িয়ে গেলো পক্ষ বিপক্ষ যদিও পক্ষের মানুষের সংখ্যাই বেশী। এর অনেকগুলো সঙ্গত কারণের ভিতর একটি হোলো রুমানা মন্জুরের আর্থ সামাজিক অবস্হান, তাঁর পরিবারের সামর্থ্য মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার। এই যুক্তি অহেতুক নয় এই কারণে যে প্রতিদিন আমাদের সমাজে একাধিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে যার বেশীর ভাগ আমাদের গোচরীভূতই হয়না। যেগুলো হয়, তার মধ্যেও আবার অধিকাংশ ঘটনা এতোটা প্রচার পায়না বা সাড়া জাগায় না; বেশীর ভাগ ক্ষেত্র্রে অপরাধী ধরা তো পড়েই না, অত্যাচারিতকে অপরাধী মন নিয়ে ঘুরতে হয়।
    ঠিক যে সময়ে রুমানার এই ঘটনা আমাদের মর্মন্তুদ ভাবে আলোড়িত করেছে, সেই সময়েই ঘটে যাওয়া আরো হয়তো বেশ অনেকগুলো ঘটনা আমাদের কান পর্যন্ত এসে পৌঁছেনি। কিন্তু যেটির কথা আমরা জেনেছি সেটি হোলো প্রতিবেশী কর্তৃক নোয়াখালির এক গৃহবধূর ধর্ষিত হবার ঘটনা। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, ধর্ষক পরে আবার এসিড ঢেলে পৃরোটা শরীর পুড়িয়ে দিয়েছে এই নারীটির। টিভির পর্দায় আমরা অনেকেই হয়তো দেখে থাকবো সমস্ত শরীরে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এই মানুষটির গোঙানি। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমার দেখা বা জানা মতে একজন মানুষও এই ব্যাপারে কোনো রা করেননি। তা না করতেই পারেন। প্রত্যেকেরই স্বাধীন আচরণের শতভাগ অধিকার রয়েছে। তাছাড়া এইসব অমানবিক ঘটনা যখন আমাদের নিত্যসঙ্গী, তখন কতোই বা অনুভূতি প্রকাশ করা যায়! প্রশ্ন জাগে তখনই যখন প্রথমোক্ত ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ মুখে ফেনা তুলে ফেলেন মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে, আর এক চুলও এসব অত্যাচার সহ্য করবেন না বলে। মানবতার কি শ্রেণী বিভেদ থাকে না থাকা উচিৎ?
    কাউকে কাউকে প্রতিশ্রুত হতে শুনেছি মিলে গেলে নিজের চোখ পর্যন্ত দান করে দেবার। কয়েকজন পুরুষকে শুনলাম রুমানার স্বামীর অণ্ডকোষ কেটে রাস্তায় ঝুলিয়ে দেবার তোড়জোড় করতে, কেউ কেউ আবার কাককে দিয়ে তা খাওয়ানোর সদিচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন। কয়েকজন নারীবাদী নারীকে দেখলাম রুমানার স্বামীর চোখও একইভাবে উপড়ে ফেলার দৃঢ়তা ব্যক্ত করতে। কয়েকজন তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহে যথেষ্ট মৌখিক তৎপরতা দেখালেন। একজন তাঁর কোনো এক সাংবাদিক বন্ধুকে মিনতি করে বললেন তিনি যেনো এটি নিয়ে লেখেন জোরালো ভাবে এবং শুধু তাই নয়, বরং জোর দাবী জানালেন এর উপর বিশেষ সংখ্যা বের করতে যাতে উনি অবশ্যই লেখা দেবেন (নির্লজ্জ দীনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ), কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেন জোর গলায় দেশের সরকারী প্রধান এবং বিরোধী দলীয় প্রধান নারী হওয়া সত্ত্বেও এমন বর্বরোচিত ঘটনা কেমন করে ঘটে যেনো এই প্রথম আমরা নারী নেতৃত্ব দেখছি আর এই প্রথম এ ধরনের নারকীয় ঘটনা ঘটলো। সবচে’ অবাক হলাম যখন আমাদের বর্তমান সরকারী দলে থাকা নারী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য রাস্তায় নেমে এলেন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে। এর বিচার যে হবেই তা তারা নিশ্চিত করতে চাইলেন রাস্তার খররৌদ্রে দাঁড়িয়েই। বিরোধী দলকে অন্ততঃ এই একটি ব্যাপারে আমি ধন্যবাদ দেয়া বাঞ্চনীয় মনে করি যে তারাও রাস্তায় নেমে হঠাৎ করে মানব দরদী হবার প্রয়াস নেননি। অবশ্য আমি জানিনা রুমানা মন্জুর লাল সাদা না নীল দল সমর্থিত এবং এটিও কোনো ভূমিকা রেখে থাকতে পারে কিনা। আমাদের আনন্দে থৈ থৈ করার যথেষ্ট কারণ আছে এই জন্য যে মাননীয় সংসদ সদস্যদের একজন ফুটনোটের মতো একটু করে বললেন, যে কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে সরকার এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবে। শ্রেণী বৈষম্যের কি নির্মম উদাহরণ!
    আমরা সবাই কম বেশী অবগত যে মিডিয়ার কাজই হোল বেছে নেয়া কোন ঘটনাটি প্রকাশ করলে পাঠক/দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে তাদের উপর। আবার আমাদের উপমহাদেশে এবং বিশেষত আমাদের মতো দারিদ্রসংকুল দেশে আইন রক্ষাকারী বাহিনীও পক্ষপাতদুষ্ট। এটি মোটামুটি প্রকাশিত গোপন কথা। কিন্তু এখন আর প্রচার মাধ্যমগুলো বা পুলিশ বাহিনী কেবল নয়, বরং সাধারণ মানুষেরাও ঘটনা বেছে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখান; তাই বোধহয় একই ধরনের ঘটনায় কেউ পান বহুল প্রচার ও যথাযোগ্য বিচার, আর অন্য কেউ হয়তো কারো দৃষ্টিই আকর্ষণ করতে পারেন না। সাম্প্রতিক আরো একটি ঘটনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের এক ছাত্রীর শিক্ষক কর্তৃক নির্যাতিত হওয়ার পাশবিক ঘটনায় আমরা কম বেশী সবাই আন্দোলিত হয়েছি, সবাই এর বিচার চাইছি, শিক্ষক পরিমলকে হাতের কাছে না পেয়ে মুখে তাকে ছিন্নভিন্ন করছি। সবই সঙ্গত, মানুষের মতোই আচরণ করছি আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু খটকা লাগে তখন যখন গ্রামের কোনো এক কিশোরী কন্যাকে বা প্রাথমিক শ্রেণীর এক শিশু ছাত্রীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর পাটক্ষেতে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্হায় ফেলে রাখার ঘটনা আমাদের ততোটা শিহরিত করে না, যেমন আমরা মানবিক হয়ে উঠি না নিম্নশ্রেণীর কোনো নারীর অত্যাচারিত হওয়ার ঘটনা শুনে যেনো এমনই তো হবার কথা অথবা এসব তো হর হামেশাই ঘটছে, কতো আর নজর দেয়া যায় বাপু!
    সবচে’ মজার অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হোল মাসখানেক না যেতেই রুমানা মন্জুরকে নিয়ে অতি উৎসাহীদের সব মাতামাতি থেমে গিয়েছে। সবাই পরবর্তী এ জাতীয় ঘটনার অপেক্ষা করছেন বোধহয় এবং মধ্যবর্তীকালীন সময়ে ‘সাধারণ’ কিছু নিয়ে ব্যস্ত আছেন। যিনি চক্ষুদান করতে চেয়েছেন, কানাডার হাসপাতালে চোখ প্রতি দুটো করে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা রুমানাকে আশার বাণী না শোনাতে পারার পরও তিনি এখন নীরব ভূমিকা পালন করছেন। কারণ অতি আবেগ খুব সাময়িক। পুত্রশোকও নাকি মাসের ব্যবধানে খানিকটা হাল্কা হয়, আর এখানেতো অপরিচিত একজন মানুষ, আর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ভিন্ন, স্বার্থের মাছিতে ভরপুর।
     শুধু তাই-ই নয়, আমরা যে কোনো বিষয়ের হয় এপার, নয় ওপার দেখি মধ্যবর্তী অংশটুকু পুরোপুরি অস্বীকার করে। স্রোত যেদিকে যায়, নাক চোখ, বুদ্ধি সব বন্ধ করে আমরা সে দিকেই ভেড়ার পালের মতো হাঁটি। উপরোক্ত ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে এই সত্য আবারো জ্বলজ্বল করে উঠলো। কোনো এক অনুষ্ঠানে একজন বসে বসে পত্র্রিকা মুখস্ত করছিলেন আর সবাইকে ডেকে ডেকে দেখাচ্ছিলেন রুমানার ছবিটি। পাশে বসা একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ঘটনার বিবরণ। বর্ণনাপ্রসঙ্গে যেই রুমানার স্বামীকৃত মন্তব্যের কথা বললাম, আমাকে তো দু’ চারজন পারলে লবণ তেল মরিচ ছাড়াই চিবিয়ে ফেলেন! আমি যতোই বলি এটি আমার ভাবনা নয়, কেবল ঘটনার বিবরণে প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করছি, ততোই নখে দাঁতে ছিন্নভিন্ন করতে চাইলেন যেনো আমি নিজের দু’আঙ্গুল দিয়ে উপড়ে তুলেছি রুমানার নয়, ঐ ব্যক্তির চোখ দুটো। খুব শানানো গলায় বারংবার একজন বললেন মেয়েদের কিছু হলে মেয়েরাই সে ঘটনাকে সব সময় অন্য খাতে প্রবাহিত করতে চায়, ভূক্তভোগী মেয়েটিকে চরিত্র্রের দোষ দেয়, না থাকলে খুঁজতে সচেষ্ট হয়। তাঁর পুরো ঘটনা শোনার কোনো উৎসাহ বা আগ্রহ  দৃশ্যমান হয়নি। কথা শুনে কেবলি মনে হচ্ছিলো পুরুষমাত্রই নারীকে অত্যাচার করার জন্য মুখিয়ে আছে এবং নারীরা কস্মিনকালেও কিছু করেন না। এই অন্ধত্ব আমাদের অশিক্ষারই পরিচায়ক বৈকি। আমাদের নিজেদের বিবেক বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়ে আমরা ঠিক ততোটা কাজ করিনা যতোটা না অন্যের দেখানো পথে চলি। চিলের কান নেয়ার গল্প বারংবার প্রতিফলিত হয় আমাদের কাজকর্মে। আবার একজনকে দেখা গেলো সবাই যেহেতু রুমানার হয়ে কথা বলছে তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই ঘোষণা দিয়ে হাসানের পক্ষ নিতে কারণ তিনি সব সময় স্রোতের বিপক্ষে থাকেন। কি বিবেচনা বোধ! কি ব্যতিক্রমী ভাবনা! অথচ এদের কাউকেই একথা বলতে শোনা গেলো না যে ঘটনা যাই হোক না কেনো একজন মানুষের সাথে কোনো অজুহাতেই এই ধরনের বর্বর আচরণ করা যায় না, মানুষ হবার অন্যতম শর্ত বিবেকবোধ এবং এই ধরনের আচরণ এই শর্তকে পুরোপুরি ক্ষুণ্ন করে। কেউ এ কথা ভাবলেন না, চোখ উপড়ে নেয়ার শাস্তি চোখ উপড়ে নেয়া বা অণ্ডকোষ কাটা বা অন্য কোনো শারীরিক নির্যাতন হতে পারে না। দুটো আচরণই অমানবিক, দুটোই আমাদের অন্ধকারমুখীতা প্রমাণ করে।
     মানুষ হয়ে আমরা যেমন পারিনা একজন নারীর গায়ে এসিড ছুঁড়ে মারতে, ঠিক তেমনি পারিনা একজন পুরুষের কণ্ঠনালী বা অণ্ডকোষ ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে কেটে নিতে। অথচ এর সবই ঘটছে আমাদের চারপাশেই কেননা আমরা মনুষত্বের পথ পরিক্রমা থেকে বিচ্যুত হয়েছি। অবশ্য এখানেও প্রশ্ন আছে, আমরা কি আদৌ কোনোদিন মনুষত্বকে লালন করেছি সেভাবে? এ ধরনের পাশবিকতা কি আগে ঘটেনি? জাত-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে আমরা এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছি মানুষকে সব সময়ই। অন্ধকার যুগে যেমন, তার পরেও তেমনি এবং এখন এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমরা একই ধরনের অসভ্য আচরণ করছি। শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক চিরদিনের। নীল চাষ করতে যখন বাধ্য করা হয়েছিলো ভারতীয় কৃষকদের তাদের আঙ্গুল কেটে, হত্যা করে, নীলকুঠি যখন অত্যাচারের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, সম্রাট শাহজাহান যখন তাঁর প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন তাজমহল নির্মাণে নিয়োজিত সব শ্রমিকদের (সহস্রাধিক) মাটির নীচে আটকে রেখে মেরেছিলেন যাতে করে এর দ্বিতীয়টি এরা বানাতে না পারেন, জাপানে যখন পারমাণবিক বোমা ফেলেছিলো মার্কিন বাহিনী, জার্মানীতে যখন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে হিটলার ও তার বাহিনী মানুষ মারার নেশায় মেতে উঠেছিলো, একাত্তরে যখন নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকে পাকবাহিনী তাদের বাংলাদেশের দোসরদের সাহায্যে মেরে কেটে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছিলো এবং এমন হাজার হাজার ঘটনার উল্লেখ করা যাবে, তখনও বিবেকের চোখে ঠুলি পরিয়ে এইসব তথাকথিত মানুষেরা হয়ে উঠেছিলো অত্যাচারের প্রতীক, মানবতা হয়েছিলো ভূলুণ্ঠিত, মানবিক বোধ হয়েছিলো পদদলিত। এবং দুঃখের কথা এই যে এ জাতীয় ঘটনার শেষ হবে না, চলতেই থাকবে মানুষ এবং তার সভ্যতা যতোদিন থাকবে। তাইতো একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও গুয়ান্টামো বে-র খবর শুনে আমরা শিহরিত হই আপাদমস্তক, এরশাদ শিকদারের বরফকল আমাদের আমূল কাঁপায়, একুশে আগষ্ট, পিলখানা হত্যাকাণ্ড বোধের ভেতর দ্রুত কড়া নাড়ে, নাড়ায় আমাদের, এবং সুখের কথা, এর মাঝেও সত্যিকার মানবতাবাদী আত্নারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন একাগ্রচিত্তে।
    মানবতাবাদী যদি আমরা হই তো শ্রেণী-ধর্ম-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে হবো। শুধুমাত্র হঠাৎ হঠাৎ যদি আমাদের এই ভাব উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, তাহলে ধরে নেয়া আবশ্যক যে ভেতরে খানিকটা কি যেনো গড়বড় আছে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা প্রাচীন এক পদ্ধতি মানুষের মগজ ধোলাই করবার জন্য। আর মানবতা নিয়ে ব্যবসা বোধ করি নব্য উদ্ভাবন যার আড়ালে মানুষ সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োতে চায়, নিজেকে জাহির করতে চায়। আমরা কি সব সময়েই এমনি করে সস্তা প্রচার পাবার জন্য ছোঁক ছোঁক করতে থাকবো? আমাদের প্রকৃত বিবেক কি কোনোদিনও জাগ্রত হবেনা। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বা সবজির মতো, বা ঋতুকালীন ব্যবসায়ীদের মতো আমরাও কি বিশেষ সময়কালীন মানবতাবাদী হবো, নাকি আমাদের সত্তাকে গড়ে তুলবো প্রকৃত সচেতন মানুষের মতো করে? আম জনতাগণ রাজনীতিবিদদের মতো এই সুযোগ সন্ধানী মনোভাব পরিত্যাগ না করতে পারলে এই নষ্টস্রোত কোথায় আমাদের নিয়ে যাবে সেটি ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সুস্হ ও গভীর মূল্যবোধ ছাড়া অসভ্যতার চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার প্রগাঢ় সম্ভাবনা থাকে। ব্যক্তি নয়, জাতিগত ভাবে এর থেকে উত্তরণের যথার্থ সিঁড়ি আমাদের খুঁজে নিতেই হবে। মানবতাবাদীতা নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো চিৎকার বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব আমাদের সবার।

  · · · Share

    • নীল কন্ঠ
      খুব মনযোগ দিয়ে পড়লাম আপনার এই দরকারি লেখাটা। জাগ্রত হোক মানুষের বিবেক। জাগ্রত হোক মানবতা। মানুষ যখন জ্ঞান বিজ্ঞানে এতোটাই ঝলমল করছে, ভিন্ন গ্রহে বসবাসের চিন্তা করছে সেই যুগে আমাদের দেশে এতো অন্ধকার দেখে চোখ জ্বালা করে ওঠে। এতোটা বর্বর, এতোট
      া নিষ্ঠুর এখনো কি করে আমরা? গ্রামের মুর্খ বা অশিক্ষিত মানুষের দ্বারা এধরনের কাজ ঘটলে চোখ বন্ধ করে বলা হয় ওরা অশিক্ষিত-গন্ডমূর্খ -চাষাভুষা বর্বর অসভ্য মানুষ। এমনটি ঘটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু যখন নির্মম পৈশাচিকতা দেখি একি দেশের উপ্রতলার মানুষ অর্থাৎ যাদের শিক্ষা-দীক্ষা অর্থ-বৈভবের কোনো কমতি নেই--তখন কি বলা যায়? আসলে এটি একটি মানবিক সমস্যা। আমাদের অন্তরে মানবিকতা বোধের ঘটতি তৈরী হচ্ছে প্রতিদিন এবং এর কারন বহুবিধ। মূলতঃ সমাজ ব্যাবস্থা, এর শাসন প্রনালী, জীবনযাত্রা যাপনের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এইসব অমানিবক হয়ে ওঠার বীজ। জীবন যুদ্ধের পরতে পরতে সাধারণ মানুষকে এতোটাই হয়রাণির শিকার হতে হয় যে সে আর তখন কাউকে নিয়ে ভাবতে পারেনা--নিজেকে বাঁচানোর যুদ্ধে একক বোধ এবং বেঁচে থাকাই তার কাছে প্রধান হয়ে পরে এবং মানুষ যখনই বিচ্ছিন্ন হয় তখনই সে হয় দারুন স্বার্থপর এবং মানবিকতাবোধহীন। কেবল নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং ভালমন্দটাই তার কাছে প্রধান করনীয় কাজ। এই বোধ ছড়িয়ে পরে দ্রুতই। এখন আর আমরা কতটা সমাজবদ্ধ জীব? বস্তুতঃ সবাই এখন এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন প্রতিটা মানুষ একা এবং এই একাকীত্ব বোধ মানুষকে সরিয়ে দিচ্ছে মানবিকতাবোধ থেকে। প্রকৃত অর্থে মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। মানুষের পক্ষে একা জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। একে অপরের উপর নির্ভরশীল--এই বোধ যত বাড়বে--ততোই মানুষ একে অপরের মর্ম যাতনা উপলব্ধি করবে। সামাজিক বন্ধন গুলো দৃঢ় না হলে মানবিকতাবোধের মাপাঙ্ক ক্রমশ আরো নিম্নগামী হবার আশঙ্কা বহুগুন।

    • Hasan Mohisopan চমৎকার লেখাটি!!!

    • Naznin Seamon নীল কন্ঠ ও Hasan Mohisopan: অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার এবং অনুভূতি জানানোর জন্য। মানবতা তো লঙ্ঘিত হচ্ছেই, কিন্তু এর প্রতিবাদ করাকেও কিছু শ্রেণীর মানুষ এখন পুঁজি করছে বিশেষ উদ্দেশ্যে। কি ভয়ন্কর সমাজে বাস করছি ভাবলে আমি শিউরে উঠি। আপনাদের প্রেরণার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা।

    • Naznin Seamon Rifat Istiak
      DrAkm Akhtarul Kabir
      Rajat Das Gupta
      অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই।

    • Hasan Mohisopan
      প্রয়োজন শিক্ষার, এ ঘণ ঘোর আঁধার থেকে বেরিয়ে আসতে কিন্তু কথা হল কোন শিক্ষা? আমাদের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি যাকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই বলি তা মানুষকে শিক্ষিতের সনদ দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু পরিচিত করছে কূপমণ্ডুক হিসাবে। প্রয়োজন মুক্ত মনের চর্চা,
      স্বাধীন চিন্তার সন্নিবেশ, প্রসারিত অন্তরদৃষ্টি। এগুলি না হলে শিক্ষার পূর্ণতা মিলবে না কিছুতেই। সামাজিক দুষ্টু চক্র কূটিল ষড়যন্ত্রের যে জাল বুনে রেখেছে চার দিকে তা হল এমন সকল অচলায়তন ভেদি প্রত্যয়ের অন্যতম অন্তরায়। যে জাতি যত শিঘ্র স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটাতে পেরেছে সে জাতি পৃথিবীতে তত উন্নত আজ................আমরা আর কবে পারব...........আর কত যুগ পার হলে?

    • Omer Selim Sher Excellent write up.....only proper education... will bring forth the changes that you advocated. Very strong message to the society and the male counter parts of yours...to make the mankind realize the values instilled in each human.

    • Naznin Seamon I really appreciate your thoughtful comment and time to read my writing. Hope to get your constructive criticism in future too which will help me improve my writing for sure. @ Omer Selim Sher

    • Naznin Seamon Hasan Mohisopan@ You are a great inspiration to me as always. Thank you for your continuous support. Things are changing, but this new phase scares me. Now everything is a show of show off, well almost everything. We need some real people.

    • Naznin Seamon Chondon Anwar, Ahsanul Kabir Ripon@ Thank you very much for inveting your valuable time to read this. Please take care.

    • Shafiul Islam Thanks for your farsighted inspirational thoughts. Nothing glorious than uplifting humanity as we weave our global social fabric together. Nazrul, Sukanto, Preetilata, Bidyasagor, ..., fought for our freedom. Our journey of uplifting humanity continues as we drive our dreams to build a better tomorrow.


মানবতাবাদীতার ফেরিওয়ালা


নাজনীন সীমন 
নিউ ইয়র্ক 
::
c২০১১ জুলাই ১৬
::

No comments:

Post a Comment