গোলাপ প্রেমী
শফিউল
শফিউল
গত বসন্তে তুই যখন এসেছিলি তখন বাড়ির সামনে বড় আম গাছটায় কোকিল ডেকেছিল। ক্যামেরাটা নিয়ে তুই কোকিলের ছবি তুলতে গিয়েছিলি, কিন্তু আম গাছটা এত উচু এবং ঘন পাতায় ছড়ায়ে ছিল যে, অনেক খোঁজা খুঁজি আর ছুটাছুটি করেও চোখের তারায় এনে কোকিলটাকে ক্যামেরায় বন্দী করতে পারিসনি। সেদিন দখিনা বারান্দায় দাড়িয়ে বাবা মা তোর পাগলামো দেখে হেসে আনন্দে কুটি কুটি হয়েছিল। আমিও সেই আনন্দের-আড়ালে সঙ্গী হয়েছিল। এবার বসন্তে তুই এলি, আবার ছাব্বিশ দিনের মাথায় চলেও গেলি। এ বসন্তে তুই চলে যাওয়ার পর, সেই আম গাছটায় আবার ও কোকিল ডেকেছে, কিন্তু আজ আর সেই আনন্দ নেই। বাবা-মাও নেই। ভাগ্যিস এবারে বসন্তে তুই চলে যাওয়ার পর কোকিল ডেকেছে তা নাহলে তো এবারও তোর পাগলামো পেয়ে বসত। সেই পাগলামো দখিনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কে দেখত? তারপর আমি সেই নির্বাসিতা স্মৃতির ভারে একা দাঁড়িয়ে, বোবা চোখে, দনিা বারান্দায়। চৈত্রের দুপুরের মত বুকটা খাঁ খাঁ করে ওঠে। তবু আনন্দ খুঁজি একফোটা ভাল থাকব বলে। জানিস, দখিনা বারান্দার পাশে সেই সিঁদুর গোলাপটা তুই চলে যাওয়ার পর দিনই ফুটেছিল। গোলাপটা একেবারে টকটকে সিঁদুর রং। এত আনন্দ পেয়েছিলাম গোলাপটা দেখে। তুই ছিলিনে বলে, আনন্দটা ফিকে হয়ে গিয়েছিল। তারপর কি হল জানিস, দিনভর গোলাপ গাছটা চোখে চোখে রাখলাম। সন্ধ্যার কোন ফাঁকে যেন গোলাপ চোখে এসে গোলাপ গাছটা একেবারে গোড়া থেকে উপড়িয়ে নিয়ে গেল। মনটা খুব খারাপ হল। তারপর নিজেকে এই বলে বোঝলাম আমি, সে বুঝি গোলাপ চোর নয়, গোলাপ প্রেমী।
-নূরুন্ নাহার / তোর নির্বাসিতা
ছোট আপা।
১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
No comments:
Post a Comment