মোস্তফা আজিজ (১৯২৩) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail
'মোস্তফা আজিজ (১৯২৩) | |||
Mujtafa Aziz
Jhinidah পারিবারিক পরিচিতি : শিল্পী মোস্তফা আজিজের জন্ম ১৯২৩ সালের ১ এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার সন্নিকটে মনোহরপুর গ্রামে। পিতা বরেণ্য কবি মরহুম গোলাম মোস্তফার দ্বিতীয় পুত্র শিল্পী আজিজ।মোস্তফা আজিজের পরের ভাই দেশের একজন স্বনামধন্য পাপেট শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার। শিক্ষাজীবন : ১৯৪৩ সালে কলকাতার বালীগঞ্জের টি. মিত্র হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে এক বছর পড়ার পরই কোলকাতা কলেজ অব আর্টস এন্ড ক্রাফট এ ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ছয় বছরের পরিবর্তে দশ বছরে সেখান থেকে ‘কমার্শিয়াল আর্টস’ এ ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন শিল্পী আজিজ। কর্মজীবন : ঢাকার নওয়াব গভর্ণমেন্ট হাই স্কুলে ড্রয়িং শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এর পর ঢাকা আরমানিটোলা পাইলট স্কুল ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি তেজগাঁও জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটেও কিছুদিন আর্টিস্ট কাম-ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পর তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে চারু ও কারু শিল্পের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপ্রপ্ত হন। পরে মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ এবং পরিশেষে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনার পর ১লা এপ্রিল, ১৯৮০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। শিল্পীজীবন : ছেলেবেলায় শৈলকূপা প্রাইমারী স্কুলে ৪র্থ শেণীতে পড়ার সময়েই শিল্পী মোস্তফা আজিজের ছবি আঁকার ‘হাতে খড়ি’। পরবর্তীতে কলকাতা বালীগঞ্জ গভর্ণমেন্ট হাই স্কুলে ৫ম শ্রেণী হতে ছবি আঁকার উদ্দীপনা বাড়তে থাকে তাঁর বড় ভাই ক্যাপ্টেন মোস্তফা আনোয়ার ও মায়ের অনুপ্রেরণায়। উক্ত বালীগঞ্জ সরকারী স্কুলের হেডমাস্টার পিতা কবি গোলাম মোস্তফা ও তাঁর আর্ট- শিক্ষক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে তাঁর শিল্পীজীবনে ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে। পেন্সিল স্কেচের ক্লানি্তহীন শিল্পী মোস্তফা আজিজ- নিজেকে তিনি “Jack of all trades, master of none!” বলেই দাবি করেন। তাস, পাশা, দাবা, ক্যারাম থেকে শুরু করে হকি, ক্রিকেট, ফুটবল, জুডো, কুস্তি, ঘুষোঘুষির কোনটাই তিনি বাদ দেননি। তাই তো শিল্পী মোস্তফা আজিজ উল্লেখিত সকল স্তরের খ্যাতনামা খেলোয়াড়দেরই ছবি এঁকেছেন শুধুমাত্র দু’টি পেন্সিলের মাধ্যমে। একটি কালো অপরটি ব্রাউন। পল্টন ময়দানে বক্তৃতামঞ্চ থেকে দৃঢ়কণ্ঠে নির্যাতিত শোষিত মানুষের হয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছেন একজন জননেতা, কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে একজন সাংবাদিকের চেতনা কিভাবে ফুটে উঠেছে, আপন ভূবনে সৃষ্টির নেশায় একজন কবি-সাহিত্যিক কিভাবে মগ্ন আছেন, সুরের মূর্ছনায় আপন মনে গাইছেন একজন বাউল, দুর্ভিক্ষ- প্রপীড়িত কোন একজন আদম সন্তান, বিভিন্ন মিলের কুলি- মজুর, কারখানার শ্রমিক, মাঠের কৃষিজীবী, মিউনিসিপ্যালিটির ডোম, মেথর এছাড়া পথে প্রান্তরের নির্যাতিত বুভুক্ষুদের স্কেচ বা অভিব্যক্তিও বাদ পড়েনি শিল্পী আজিজের পেন্সিল স্কেচে। তিনি ছবি আঁকেন শুধু মানুষের। তাও পুরো শরীরখানা নয়- শুধুমাত্র মুখের অভিব্যক্তি। ‘মানুষের মন মুহুর্তে বদলায়’, সেই বদলানো অভিব্যক্তিটি আজকালের একমাত্র ভিডিও ক্যামেরা দিয়েই দেখানো সম্ভবপর, কিন্তু সেই অভিব্যক্তিটি অঙ্কনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সহজসাধ্য নয়। এই দুঃসাধ্য কাজটি কেবলমাত্র পেন্সিলের স্বল্প আঁচড়ে এবং রবারের ঘসা-মাজা ব্যতিরেকে ক্ষণিকের মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পী মোস্তফা আজিজ। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যালামিটি বা দুর্যোগপূর্ণ ঘূর্ণিঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত এলাকার ছবি আঁকা এবং যে কোন দুর্ঘটনায় আহত নিহতের ছবিও এই শিল্পীই আঁকেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, উল্লেখিত যাবতীয় অভিব্যক্তিকে ভিত্তি করে শিল্পী মোস্তফা আজিজ প্রতিবেদনও লেখেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। শিল্পী মোস্তফা আজিজ দীর্ঘদিন ইলাষ্ট্রেশন ও কভার ডিজাইনের ওপর আঁকা শুরু করলেও ‘ফাইন-আর্ট’ অর্থাৎ ‘মানুষের প্রতিকৃতি’ আঁকার পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানারা শিল্পীকে কাফের ফতোয়া দিলেন। গরীবের ছবি আঁকতে পুলিশ আজিজকে কমিউনিস্ট আখ্যা দিয়ে ধর-পাকড় শুরু করলো। আর সাধারণ লোক স্কেচের মর্ম না বুঝে নানান ঝামেলায় ফেলতে লাগল। শিল্পী মোস্তফা আজিজ এ যাবৎ শুধু আট হাজারেরও অধিক মানুষের প্রতিকৃতি এঁকেছেন। কুড়ি বারেরও অধিক শিল্পী মোস্তফা আজিজের একক চিত্র-প্রদর্শনী হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে। এই খ্যাতিমান শিল্পীর অতি মূল্যবান বেশ কিছু ‘পেন্সিল স্কেচ’ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য সরকার লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। ৭০ বৎসর বয়সেও শিল্পী পর্যটকের মত স্কেচখাতা, কন্টি ও সেলুলয়েড্ পেন্সিল ও স্কেচিং-টুলখানা নিয়ে পথ চলতে চলতে, মানুষের চেহারা দেখ্তে দেখ্তে হেঁটে যেতেন। কেউ জোর জবরদস্তি করে চাপ সৃষ্টি করলেও তিনি ছবি আঁকতেন না। কিন্তু তাঁর মনের মত মানুষ পেলে সেই মুহুর্তেই ছবি আঁকতে শুরু করতেন। বৈবাহিকজীবন : ১৯৬১ সালে শিল্পী মোস্তফা আজিজ সাফায়েতুন-নবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরলোকগমন : এই বরেণ্য চিত্রশিল্পী ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখ বুধবার পরলোকগমন করেন। তথ্য সূত্র : যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক লেখক : কাজী শওকত শাহী সম্পাদনা : মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল সবশেষ আপডেট : মার্চ ২০১২' |
|||
No comments:
Post a Comment