এপথে আমি রোজই হাঁটতে বেরুই। বেশ লাগে। নির্জন পথ কান
পেতে শোনে আমার পায়ের শব্দ। কিম্বা আমিই শুনি পথের শ্বাসপ্রশ্বাস। বিকেলের হালকা
রোদ আমাকে সঙ্গ দেয়। নিজের ছায়াকে সম্প্রসারিত হতে দেখি, আবার সঙ্কুচিত হয়ে হয়ে
নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতেও দেখি। দুপাশের সারি সারি ম্যাগনোলিয়া গাছ অভিবাদন জানায় আমাকে। যতবার এসেছি এখানে
ততবারই ম্যাগনোলিয়াদের ছায়ার ভেতর দাঁড়াই দু’চারদণ্ড। অদূরে মিশন পর্বত
সবুজ ঘাসের ভেতর থেকে গ্রীবা তুলে তাকায় আমার দিকে।
পাড়াটি মধ্যবিত্ত। উচ্চ মধ্যবিত্ত। যারা জোরে কথা
বলে না। জোরে গাড়ি চালায় না। যাদের বাড়িতে আয়ারা রাঁধে, কাপড় কাচে, ধোয়ামোছা করে। বাচ্চাকে স্কুলে
আনানেওয়া করে, সন্ধ্যাবেলা পরিবারের ডিনার সাজায় টেবিলে, এবং একশব্দ ইংরেজি বলতে পারেনা। এরা অস্তিত্বহীন
অদৃশ্য প্রাণী। থেকেও নেই, যা সবার জন্যই পরম সুবিধাজনক। এপাড়ার মানুষগুলো
অসম্ভব ভদ্র আর নম্র----এত নম্র যে নুয়ে নুয়ে কথা বলতে বলতে এদের শিরদাড়া বাঁকতে শুরু
করে অচিরেই। এদের বাড়ির উঠোনভরা ফুলের গাছ সারি সারি পটের ওপর নিটোল করে দাঁড় করানো। মোমের পুতুলের
মত, ম্যাদাম তুসোর যাদুঘরে যেমন। এদের বাগানের ঘাস গালিচার মত মসৃণ। পরিষ্কার ধবধবে
পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে এদের গৃহ, বৃক্ষ, মানুষ। এদের বাড়ির দেয়ালে
সময়ের দাগ পড়ে না কখনো----মুছে ফেলা হয় সযত্নে। যারা মোছে তারাও
সেই ছায়ার শরীর----অন্দরবাসী আয়াদেরই মত। তারা মেক্সিকো থেকে এক ঝুড়ি দারিদ্র্য আর একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে
আসে এদেশে। গোপনে, রাতের অন্ধকারে। দিনের আলোকে যাদের গুলি করে মেরে ফেলা সীমান্ত প্রহরীদের
দায়িত্ব। তাদের নাম ইল্লিগাল ইমিগ্র্যান্ট----সবাই তাদের ঘৃণা করে, এবং সবাই তাদের নিয়োগ
করে বাগানের ঘাস কাটার জন্য, দুমুঠো ভিক্ষার বিনিময়ে। সেই ভিক্ষার ধন
নিয়ে তারা কখনো কখনো নিজের দেশে ফিরে যাবার সুযোগ পায়-----হয়ত মেয়ের জন্য একটা জামা
হাতে করে, ছেলের জন্য আমেরিকার রংচঙ্গা কোনও ভিডিও গেম, দুটো বই, স্ত্রীর জন্য ভদ্রমত
একটা পোশাক। এই তো তার স্বপ্ন। যার মূল্য দিতে গিয়ে সীমান্তে গুলি খেতে হয়। তা থেকে কোনরকমে
রক্ষা পেলে সাহেবসুবোদের বাগানের ঘাস কাটতে হয় বা রাস্তা ঝাড়ু দিতে হয়।
এপাড়ার বেশির ভাগই বহিরাগত। তার লক্ষণ ভেতরে
বাইরে সর্বত্র। বড়দিনের মরশুমে এই পাড়াতে কখনোই আমি আলোর ঝালর দেখিনি। এখানে কোন বাড়িতেই
কেউ ক্রিসমাস ট্রি কেনে কিনা সন্দেহ। এপাড়ার আলো সব ভেতরে----বাইরে তার আনন্দ উল্লাসবিহীন কঠিন
দেয়াল। এরা বুদ্ধিজীবি। মাথাওয়ালা মানুষ। নিজের দেশে যারা ব্রেনড্রেন। পরের দেশ আমেরিকাতে
তারা সমাদৃত ব্রেনগেইন। এরা সিলিকন ভ্যালির পেশাজীবি মিলিয়নিয়ার----বার্ষিক বেতনের
দ্বিগুণ যাদের স্টক আর বোনাসপ্রসূত উপার্জন। এরা আমেরিকার নব্যধনী সম্প্রদায়। সিলিকন ভ্যালির
মূল্যবান এসেট। এই এসেটের একজন আমার নিজেরই পুত্র----ক্যানাডায় মানুষ হওয়া, আমেরিকায় শেষ ডিগ্রি
করে সেখানেই থেকে যাওয়া, বেড়ে ওঠা, পুষ্ট হওয়া। ছেলে-বউমা দুজনই চাকরিজীবি। দুটিতে মিলে কত
উপার্জন জানিনা, জানার আগ্রহও নেই বিন্দুমাত্র। শুধু জানি এ-পরিবারের
চারটে মানুষের জন্যে তিনটে গাড়ি----একটি ছেলে নিজে চালায়, আরেকটি বউমার, তৃতীয়টি আমার
সতেরো বছরের নাতির দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যে। আমার ছেলের বাড়িতে
তিনটে গাড়ি---ভাবতে কেমন অদ্ভুত লাগে। বিব্রত বোধ করি বলতে, মৃদু একটা অপরাধবোধও যে জায়গা করে নিচ্ছে
না মনের এক কোনেতে, তা’ই বা বলি কেমন করে। নিশ্চয়ই প্রয়োজনের খাতিরেই এক চার-সদস্য পরিবারের তিনটে গাড়ির
আয়োজন হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনটাও তো মানুষেরই তৈরি এক মনগড়া জিনিস, তাই না? আমি যার সন্তান
তার তো রিক্সাভাড়ার পয়সাও ছিল না। এবং তাঁরও পিতা যে ছিলেন, আমার পিতামহ, তাঁর দৌড় ছিল মাটির
ঘর থেকে ক্ষেতের লাঙ্গল। অতএব তিন প্রজন্মের ভেতর অর্জন মোটামুটি মন্দ হয়নি, কি বলেন?
আজ সকালে ঘুমের ঘোরেই মনে হচ্ছিল ছাদের
ওপর অনেকগুলো পায়ের শব্দ। সূর্য ওঠেনি তখনো। ঘরের ভেতর চাপ চাপ অন্ধকার। এসময় শরীর আমার
আপনা থেকেই জানান দেয়। ঘন্টা বাজতে শুরু করে স্নায়ুতে----উঠবার সময় হল বলে শিরাতে
এলার্ম বাজে। শরীরটাকে কোনরকমে বিছানা থেকে ছাড়িয়ে জানালার কাছে দাঁড় করাই। ভেনেশিয়ান ব্লাইণ্ডসের
দুটি পাত ফাঁক করে ঘুমকাতর চোখদুটিকে বাইরে পাঠিয়ে খবর সংগ্রহ করি। ওমা, বৃষ্টি! সকাল
হতে না হতেই বৃষ্টি। তাইতো। ক্যালিফোর্নয়ার এ-অঞ্চলে তো শীতকালই বৃষ্টির ঋতু। মনটা তৎক্ষণাৎ ময়ুরের পাখার মত ছড়িয়ে পড়ল। তাড়াহুড়ো করে বাথরুম
সেরে জানালাটা পুরোপুরি খুলে ফেললাম। না, আলো জ্বালিনি। ছিঃ বৃষ্টিতে কেউ আলো জ্বালে নাকি। সকালবেলার বৃষ্টির
সঙ্গে বিদ্যুতের আলো একেবারেই মানায় না। আমি সেই বৃষ্টিকাজল অন্ধকারকে সাথে করে বসে থাকি জানালার
পাশে। বাইরে মেঘের মধ্য থেকে ঊষার রং ফুটতে শুরু করে একটু একটু করে। রাস্তায় জমে-থাকা
পুঞ্জ পুঞ্জ জলের ওপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি রচনা করে এক অনবদ্য দৃশ্য। মনে হয় লাস ভেগাসের
বিলাজিও হোটেলের কৃত্রিম হ্রদের পানিতে সিনক্রোনাইজড ঝর্ণা দেখছি। কিম্বা নিউ ইয়র্কের
ব্রডওয়েতে বিরাট আকারের কোনও ট্যাপ ডান্সের প্রদর্শনী। ছেলের বাড়ির সদ্য-ছাঁটা
ঘাসের তৃণদলগুলোও যেন সজীব হয়ে উঠেছে। যেন বৃষ্টির সাথে তারা কোনও অপার্থিব কোরাসে মেতে গেছে। আমার চোখের সামনে,
জানালা থেকে তিন চারগজ দূরে, একটা বিবর্ণ চেরিগাছ। পাতাগুলো প্রায়
মরাই মনে হচ্ছিল কাল বিকেলে। আজ সকালে বৃষ্টির স্বাদ পেয়ে তারাও উত্তাল। কাঁপছে, দুলছে,
খেলছে। এই যে এত উৎসব এত আনন্দ বহির্বিশ্বে
তার কতটুকুই বা প্রবেশ করতে পারছে আমাদের ইন্দ্রিয়তে, আমাদের অনুভবের মধ্যে।
স্মৃতি। বিগত প্রেম। জানিনা এগুলোর
কি সংযোগ সকালবেলার একাকী বৃষ্টির সঙ্গে। কিন্তু তারা আসে। দূরবর্তী দ্বীপের পাখিদের মতই তারা চলে আসে মাঝে মাঝে। অতীতের কোনও অবলা
দুটি শব্দ। একটি ছেঁড়া তার। বাজে কোনও প্রেমের কবিতার শেষ দুটি লাইন। একটি দীর্ঘশ্বাস। কিম্বা কেবলই কারো
অতলান্ত দুটি চোখের শেষ বেলাকার পেছন-ফিরে-তাকানো চাহনি। তারা আসে। অসময়ে ভিড় করে
দাঁড়ায় জানালার বাইরে, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। চেরি গাছটির ভিরু পাতাগুলোর মত কাঁপে, থিরথির করে কাঁপে। কাজের জীবন থেকে
তারা তুলে নিয়ে যায় মানুষকে, আলগোছে, অন্য কোনখানে, মেঘলোকের অপার অসীমতার মধ্যে।
এমনি এক অঝোর বৃষ্টির দিনে এক বদ্ধ
পাগল নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, সে-গল্প বলিনি বুঝি আগে? তাহলে বলছি।
গল্পটা এদেশের নয়, আফ্রিকার কোনও মুসলিম-প্রধান
দেশের। এক আফ্রিকান বন্ধুর কাছে শোনা। পাগলের গল্প। বদ্ধ পাগল। বেশির ভাগ সময় একেবারে দিগম্বর হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াত উদ্দেশ্যবিহীনভাবে। তার পেছ পেছন ছুটত
একঝাঁক মাছি আর একঝাঁক অসভ্য ছেলেপিলে। বেচারাকে কি জ্বলাতনটাই না করত তারা। ঢিল ছুঁড়ে মারা,
লম্বা কাঠি দিয়ে খোঁচানো, কুকুর-বেড়ালের বিষ্ঠা ছোঁড়া, বিশ্রী গালাগাল করা। যতভাবে ক্ষেপানো
যায় তাকে। ও যতই ক্ষেপত ওদের তামাশাও জমত তত। ব্যতিক্রম কেবল বৃষ্টির সময়। বৃষ্টি শুরু হলেই
যেন সে চুপসে যেত একেবারে। রীতিমত কান্না জুড়ে দিত। কান্না মানে কান্না। ঝোপঝাড়ের আড়ালে,
একা একা, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। যতক্ষণ বৃষ্টি ততক্ষণই। তারপরই সেই পুরনো
পাগলের মধ্যে ফিরে যাওয়া। এ এক অদ্ভুত গল্প। নিশ্চয়ই একটা পশ্চাত কাহিনী আছে এর সঙ্গে। বন্ধু বলল, হ্যাঁ,
আছে।
ছেলেটি পাগল হয়ে জন্মায়নি। জন্মেছিল সেই গ্রামেরই
সবচেয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তিশীল ধনী পরিবারের ছেলে হয়ে। উত্তরাধিকারসূত্রে
পারিবারিক বিষয়সম্পত্তির একটা বড় অংশ তার ভাগেই আসার কথা। ছেলের বাবা পড়াশুনার
জন্যে তাকে বিলেতে পাঠিয়ে দেন। প্রথমে বোর্ডিং স্কুল, পরে সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস
করে লণ্ডন স্কুল অফ ইকমক্সিএতে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়া। ছুটিছাটাতে দেশের
বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া বড়লোকের নন্দনের জন্যে এমন কোন ব্যাপারই নয়----এশিয়া-আফ্রিকার
সব বড়লোকদেরই রেওয়াজ ছিল এটা একসময়। এমনি এক বেড়াতে-যাবার কালে ঘটে এক অকল্পিত ঘটনা। ছেলেটি প্রেমে
পড়ে যায় এক সুন্দরি মেয়ের সাথে। এমন এক মেয়ে যে তার সামাজিক মানমর্যাদার সঙ্গে মোটেই খাপ
খাওয়ার মত নয়। তাদেরই পারিবারিক পরিচারিকার ষোড়শী কন্যা। মানে গুণে বিত্তে
বংশে, কোনভাবেই দুই পরিবারে কোনরকম বৈবাহিক সম্পর্কের কথা কল্পনা করা যায় না, এমনি
এক নিষিদ্ধ জলাশয়তে ডুব দিয়েছে সেই ছেলে।
ছেলের বয়স ২২, মেয়ের ১৬। সংযম আর সাবধানতার
বয়স সেটা নয়। তবুও মেয়ের দিক থেকে সাবধানতার অভাব ছিল না। রক্ষণশীল সমাজের
গরিব মেয়েদের এই সাবধানতাটুকুই একমাত্র রক্ষাকবচ। ছেলেদের প্রেমে
পড়া আর মেয়েদের প্রেমে পড়া ঠিক এক জিনিস নয়। ছেলেরা বেপরোয়া হতে পারে, মেয়েরা পারেনা। এই বড়লোকের ছেলেটিও
অন্যান্য প্রেমে-পড়া ছেলের মত বেপরোয়া হবার সবরকম ছলাকলা ব্যবহার করার চেষ্টা করে। সমস্যা ছিল একটাই----বেচারি
আসলেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল মেয়ের, মানে ‘তোমাকে ছাড়া বেঁচে-থাকা-অসম্ভব’ জাতীয় প্রেম।
একদিন, বিলেতে ফিরে যাবার ঠিক আগের
দিন, সন্ধ্যায়, খামারঘরের নির্জনতায়, ছেলে তার প্রেমিকার আঙ্গুলে বিয়ের আংটি পরিয়ে
নতজানু হয়ে, খৃষ্টানদের মত আনুষ্ঠানিকভাবে, বিয়ের প্রস্তাব জানিয়ে ফেলল। এর পর কি কোনও
ষোল বছরের যুবতীর পক্ষে ‘না’ বলা সম্ভব? না, সম্ভব নয়, বিশেষ করে যেখানে তার নিজের
মনও দুর্বল হয়ে উঠছিল দিনের পর দিন।
তারপর বেশ ক’টা মাস কেটে যায়। পড়াশুনার ভয়ঙ্কর
চাপ। প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা দেশবিদেশের সেরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। সামান্য গাফিলতি
মানে তলায় গড়িয়ে পড়া। তাই দেশের কোনও খবর নেওয়ার সুযোগ বা সময় হয়নি। ইতোমধ্যে একদিন
তার বাবার চিঠি এসে উপস্থিত। তাতে লেখা ক’টি তীক্ষ্ণ বাক্যঃ
“যদি পারো একবার বাড়িতে এসো। শেষবার যাবার আগে
তুমি যে ছোটখাট একটা সমস্যা সৃষ্টি করে গিয়েছিলে তার সন্তোষজনক মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে চিন্তা
করার কোন কারণ নেই”।
চিঠি পড়ে ওর প্রায় মাথা খারাপ হবার
অবস্থা। কি সমস্যা? কি’ই বা ‘মীমাংসা’? সব কেমন ধাঁধার মত মনে হচ্ছিল তার। অজানা আশঙ্কায়
বুক কাঁপতে শুরু করে।
পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই সে দেশে গিয়ে
উপস্থিত। বাড়ির উঠানে পা দেবার আগেই কানাঘুষাতে শুনতে পেয়েছিল যা শোনার। তার প্রিয়তমা,
যাকে নিয়ে জীবন গড়বে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে, আংটি পরিয়েছিল আঙ্গুলে, সে আর জীবিত
নেই। ঘটনাটি ছিল এরকম। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে গরিবের ঘরের এক অবিবাহিত মেয়ের
পেটে বাচ্চা ঢুকিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে অমুক পরিবারের ছাওয়াল। ব্যস আর যায় কোথায়। ছেলের ক্ষমতাবান
বাবার সুপারিশেই সালিশ বসে যায় যথারীতি----শরিয়ামতে দুশ্চরিত্র মেয়ের শাস্তির ব্যবস্থা
করা দরকার। একেতো অসতী, তার ওপর মিথ্যা অপবাদের দায়ে অভিযুক্ত করা তার গোটা পরিবার যেবাড়ির
নিমক খেয়ে জীবনধারণ করছে, সেপরিবারেরই এক নির্দোষ নিষ্পাপ ছেলেকে। কত বড় আস্পর্ধা।
যেমন অপরাধ, তেমন শাস্তি। পুরোপুরি শরিয়ামাফিক। অর্ধেক শরীর মাটিতে
পোঁতা অবস্থায় আমৃত্যু প্রস্তর নিক্ষেপ। এভাবেই মেয়েটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সেদিন ছিল সারাদিনব্যাপী
বৃষ্টি। যেন প্রকৃতি নিজেই সংযম হারিয়ে ফেলেছিল। ওই বধ্যভূমিতে
গিয়ে ছেলে স্বচক্ষে দেখতে পায় সেই আমৃত্যু নিক্ষিপ্ত পাথরগুলো এখনো পড়ে আছে প্রায় অটুট
অবস্থায়। সেই পবিত্র পাথরগুলো।
তখন থেকেই আস্তে আস্তে পতন হতে শুরু
হয়। সে আর কখনোই বিলেতে ফিরে যেতে পারেনি। ওই অবস্থাটাই ছিল
না তার। তার বাবা একসময় ত্যাজ্যপুত্র বলে ঘোষণা করে দেন ওকে। মানসিক রোগের ইতিহাস
হয়ত আগেই ছিল ওই পরিবারে। সুতরাং পরিচিত পিচ্ছিল পথের ঢাল বেয়ে গভীর খাদে পড়ে যেতে
কতই বা সময় লাগবে।
একদিন সেই পড়াটুকুও শেষ হয়ে যায়। কোন এক বৃষ্টির
দিনে পাগল যে কোথায় উধাও হয়ে গেল কেউ জানল না।
তাই বৃষ্টি এলে, বিশেষ করে সারাদিনব্যাপী
লেগে-থাকা বৃষ্টি এলেই, আমার মনে পড়ে যায় আফ্রিকার সেই অভাগা প্রেমিকদ্বয়ের কাহিনী।
২৩শে ডিসেম্বর,’১২
ফ্রিমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া
মুক্তিসন ৪২
মীজান রহমান
সত্যি অসাধারণ! গল্প বলার ঢঙ্গ, বর্ননা সব মন ছুঁয়ে গেলো, এখন আমি নিশ্চিত এমন কোনো বৃষ্টিমুখর দিনে এই গল্পটি আমারও মনে পড়ে যাবে---
ReplyDeleteCHARU Kantha,
ReplyDeleteThanks for your proactive thoughts.
Glad you enjoyed the featured article....