Friday 30 January 2015

স্মৃতিতে ও কৃতিতে ড. মীজান রহমান

টিটো খন্দকার  

জীবনের ভিন্ন ভিন্ন ধাপে তিনি নতুন নতুন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ছোট বেলায় তিনি কবিতা লিখতেন। অসাধারণ মেধা এবং কঠোর অধ্যবসায়ের সম্মিলন ঘটিয়ে কেরানী বাবার নিম্ন আয়ের অভাবের সংসারে বড় হয়েও তিনি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ছাত্রত্বের প্রতিটি ধাপে।

ঢাকার ফৌজদারি কোর্টের সৎ এবং গরীব কেরানী বাবা মোহাম্মদ আলীর বড় ছেলে মীজান রহমান।পুরান ঢাকার কলতাবাজারের ছোট্র কুঠরিতে বেড়ে উঠেছিলেন। তার ভাষায়, “সেখানে বড় বড় দেয়াল ছিল। সূর্য উঠত কি উঠত না বোঝাই যেত না।দেয়ালগুলো শেওলায় ঢাকা থাকত। দেয়াল ফুঁড়ে বটের চারা গজাত। সেখানে ছিল বিরাট ছাদ। রাস্তায় বেরুনোর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেতাম খোলা পায়খানা থেকে গামলা ভেঙে মল বেরিয়ে আসছে। সেই দুর্গন্ধ ঢাকতে নাকেমুখে কাপড় গুঁজে দৌড় দিতাম সেখান থেকে। আমার বোনেরা যে কিভাবে এই পরিবেশে স্কুলে যেত, কিভাবে মানুষ হয়েছে তা এক নিদারুণ অভিজ্ঞতা!”

মীজান রহমানরা ছিলেন নয় ভাইবোন। অভাবের সংসারে পাঠশালায় যাওয়ার সুযোগ তার হয়নি। মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি। মায়ের কথা বলতে গিয়ে একটি সাক্ষাতকারে তিনি বললেন “She was like a shadow, lived like a shadow, died like a shadow. ‘মা’ এমন একটা সম্পর্ক, যতদিন ‘মা’ জীবিত থাকে ততদিন তাকে আমরা লক্ষ্যই করি না। তাকে বুঝতে চাই না। তার ভেতরে যে কষ্ট আছে তা ভাবি না। যখন নিজেদের কষ্ট মোচন করার কথা ভাবি, তখনই মায়ের কাছে যাই। মা আমাদের কষ্টের ওপর মলম মেখে দেয় তার কথা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে। কখনই আমরা ভাবি না তিনি শুধু মা’ই নন, তিনি একজন নারী। আমাদের সবচাইতে বড় দুর্বলতা বা ফাঁক হলো এখানেই। আমরা মায়ের বাইরেরটাই দেখি, কিন্তু তার ভেতরের খবর একেবারেই রাখি না। আমার ‘মা’ হচ্ছেন তেমনই একজন মানুষ।

তার বাবার স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে বলেছেন, “বাবা ছিলেন স্বল্প বেতনের চাকুরে। কেরানি। বাবার একটা ত্রুটি ছিল। উনি ছিলেন একজন সৎ কেরানি। সৎ কেরানি হলে তার পরিবারের যে কি দুর্গতি হয় সেটা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ঐ যে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া, জীবন আমি সেটাকেই বলি ‘অভাবের সিন্ধুক’। সেই অভাব থেকেই আমাদের স্বপ্নের জন্ম। আমাদের জীবনে যতকিছু প্রেরণা, তাড়না, বাসনা, আকাক্সক্ষার যে প্রচণ্ড স্ফূর্তি সবকিছুর মূলেই হলো সেই ‘অভাব।’ সেই অভাবের মধ্যে আমরা নয় ভাইবোন একসঙ্গে থেকে নিজেদের মধ্যে জড়াজড়ি করে, শেয়ার করে বড় হয়েছি। একই বিছানায় হয়ত চারজন করে থাকতাম, একটা টেবিলে প্রায় পাঁচজন একত্রে বসে একটা হারিকেনের আলোতে পড়তাম। এভাবে কষ্ট করে করে আমরা মানুষ হয়েছি।”

স্কুল জীবনের কথা বললেন, “কলতাবাজারের মুসলিম হাইস্কুলে পড়েছি। আমরা সব ভাই ঐ একই স্কুলে পড়েছি।মুসলিম হাইস্কুলে যাবার দুটি কারণ ছিল। প্রথমত এটা বাসার একেবারে কাছাকাছি। হেঁটে যাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত এটা ছিল মুসলিম হাইস্কুল। বাবা, সনাতন সেই কালের মানুষ। সেই কালে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে একটা সামাজিক টেনশন ছিল। সুতরাং সে সময় মুসলমানরা মুসলমানদের জায়গায়, হিন্দুরা হিন্দুদের জায়গায় যেত। এটিই ছিল আমাদের রেওয়াজ। Two nations, two solitudes.”

মুসলিম হাই স্কুলে থাকতে দুটো বৃত্তি পেতেন, একটা ছিলো স্কলারশিপ আরেকটা পুওর ফান্ডের বৃত্তি। এই  মুসলিম হাইস্কুল থেকেই এসএসসি পাস করলেন ১৯৪৮ সালে। বাবা অসুস্থ ছিলেন, হার্ট প্রোব্লেম, প্রচন্ড অভাবের সংসা্‌র, চিকিৎসার ব্যবস্থা আর সেবা শুশ্রূষা করতে যেয়ে তার মধ্যে মানসিক শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিয়েছিলো,  ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি, তাই মেধা তালিকায় ১২তম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে।

এস এস সি পাশ করার পর আর্থিক  অস্বচ্ছলতার কারণে বাড়ির পাশের জগন্নাথ কলেজেই যেতে হলো তাকে, বাস বা রিক্সা ভারা দিতে পারতেন না বলে ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে পারলেন না তিনি। একটা সাইকেল কিনে দেবার পয়সাও ছিলো না তখন তার বাবার।

স্কুল জীবন থেকেই ভাষা চর্চা করতেন। বাঙলা এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই ভাল দখল ছিলো তাঁর। ইংরেজী ভাষাকে সাধারণ মুসলমান ছাত্রদের মত শত্রুর ভাষা বলে উপেক্ষা করেননি কখনো। “অনেকে ভুল করে যে, ইংরেজি একটা সাম্রাজ্যবাদী ভাষা। এটা ঠিক না। সেটা তখন হিন্দুরা বুঝেছিল কিন্তু মুসলমানরা বোঝে নাই। অবশ্য দুঃখের বিষয় আমরা এখনও ভালো করে সেটা বুঝি না।”

জগন্নাথ কলেজে সায়েন্স নিয়েছিলেন, হয়তো বাবার ইচ্ছায়। কিন্তু তার মধ্যে একসময় একটা রিয়ালাইজেশন এসেছিলো। তিনি ভাবলেন তার সাহিত্য পড়া উচিৎ ছিলো। শেষ জীবনে এসেও কিন্তু আক্ষেপ করে বলতেন, “আমি যদি বিদেশে জন্মগ্রহণ করতাম সম্ভবত আমি ম্যাথমেটিশিয়ান হতাম না। I am a very poor mathematician. I think I could be a better writer.”

“জগন্নাথ কলেজে আমার তখন ১৬/১৭ বছর বয়স। টিনএজার। কলেজে যেয়ে আড্ডা মারতে, সিগারেট খেতে শুরু করি। সাহিত্য করতে শুরু করি। নারীদের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়ে যায়। ফলে, পড়াশোনা গেল রসাতলে। বাবার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল”। এসব কারণ অনেক মেধাবী ছাত্র হবার পড়েও কিন্তু ১৯৫০ সালে সাধারণ একটা প্রথম বিভাগ নিয়ে এইচ এস সি পাশ করলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হলেন ফিজিক্স অনার্স কোর্সে, সিদ্ধান্ত নিলেন, “এখন থেকে আমি বদলে যাব। I want to challenge myself.” সে সময় খুব মেধাবী ছাত্ররাই ফিজিক্সে পড়তে আসতো। বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ, বিশেষ করে আণবিক বিজ্ঞান ও পারমানবিক বোমা আবিস্কার এবং আমেরিকা কর্তৃক ১৯৪৫ সালে তার সফল ব্যবহার  দেশে দেশে ভাল ছাত্রদেরকে তখন ফিজিক্‌স এর ব্যপারে অধিক মাত্রায় আগ্রহী করে তোলে। 

এক পর্যায়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার নেশা তাঁকে এমন ভাবেই পেয়ে বসলো যে তিনি এক দূঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। ম্যাথমেটিক্স ও ফিজিক্সে ডাবল অনার্স করবেন ঠিক করলেন। এবং তিনিই ছিলেন  একমাত্র ছাত্র যে ১৯৫৩ সালে ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্সে ডাবল অনার্স-এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। আজও সে রেকর্ড ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কেউ গড়তে পারেনি শোনা যায়।  

মাস্টার্স করলেন অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্সে। ১৯৫৪ সালে শেষ করার কথা থাকলেও ভাষা আন্দোলনের কারণে তা গিয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত গড়ালো। আবার প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলেন তিনি। শুধু তাই নয়, অবিশ্বাস্যরকম উচ্চ নাম্বার নিয়ে এবার গোল্ড মেডেলও পেলেন। তখন থেকেই আসলে নিজের ভেতরকার গণিতজ্ঞ সত্বাকে আবিস্কার করতে শুরু করলেন মীজান রহমান। সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে লেখাপড়া এবং গবেষনা কাজে সম্পূর্ণ ভাবে মনোনিবেশ করলেন। 

সাহিত্য চর্চা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও, কবি সাহিত্যিকদের সাথে তার মেলামেশা কিন্তু কখনোই বন্ধ হয়নি। এই সার্কেলে তার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান এবং শহীদ কাদরী। 

বন্ধু ও সহপাঠী ড. হারুন অর রশীদ একদিন এসে খবর দিলেন যে তিনি পাকিস্তান সরকারের মেরিট স্কলারশিপে পড়তে যাছেন বিদেশে। সে সুবাদে চলে গেলেন  ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে। ক্যামব্রিজ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিলেন, অনেক ভাল রেজাল্ট করলেন। হার্ভার্ড বিশবিদ্যালয়ে বৃত্তির সম্ভাব্য অফার অগ্রাহ্য করে দেশে ফিরলেন ১৯৫৮ সালে। দুটো কারণে দেশে ফিরেছিলেন, পরিবারের টান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কমিটমেন্ট। ফিরে এসে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডি্পারটমেন্টে শিক্ষকতা শুরু করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেন ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। ১৯৬১ সালে তিনি বিয়ে করেন। 

১৯৬২ সালে চলে এলেন ক্যানাডার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ব্রানসউইক-এ। তিনি পিএইচডির ছাত্র হয়েও সেখানে  লেকচারার হিসেবে পড়ানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন ক্যাম্ব্রিজের স্ট্রং রিকমেণ্ডেশনের কারণে। দুটো অফার পাওয়ার কারণেই তিনি স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব নিউ ব্রানসউইকে তিনি ১৯৬৫ সালে পিএইচডি করলেন 'কাইনেটিক থিওরি অব গ্যাসেস অ্যান্ড প্লাজমাজ' বিষয় নিয়ে।

তবে স্ত্রীর গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর দেশে ফিরে যেতে পারলেন না মীজান রহমান। এ নিয়ে তাঁর দূঃখের অন্ত ছিলো না। অনেক কস্ট করেছেন ড. মীজান রহমান তাঁর শিক্ষকতার জীবনে এসেও। তার স্ত্রী আগাগোড়াই শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, “ভাবতে পারেন, আমার স্ত্রী হাসপাতালে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। ছেলেদের স্কুলে নিয়ে যেতে হবে, আনতে হবে। তাদের জন্য রান্না করতে হবে। আমার নিজের খাবার রান্না করতে হবে। আমি কি এসব কাজ করার জন্য একজন সুপারম্যান? এক হাতে সব করতে পারব? অথচ ৩০ বছর ধরে আমাকে এসব কাজ করতে হয়েছে।”

১৯৬৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত একটানা ৩৩ বছর কানাডার অটোয়া কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে শিক্ষক জীবন শুরু করেন। ১৯৬৮-এ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, তারপরে ১৯৭৮-এ এসে ফুল প্রফেসর হন। ১৯৮৬ সালে কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষক পদকে ভূষিত হন তিনি। সেখানে তিনি Distinguished Research Professor হিসেবেও  স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শিক্ষকতা এবং গবেষনায় তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৯৮ সালে তাঁকে কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় ‘এমিরিটাস প্রফেসর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কাগজে কলমে অবসর নিয়েছিলেন বটে, কিন্তু কাজ তাঁর কখনো থেমে থাকেনি। সম্মানিত এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিয়মিত কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। গণিতের বিখ্যাত জার্নালগুলোতে  প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য গবেষণাপত্র। ড. মীজান বার্কলে ইউনিভার্সিটির নামকরা প্রফেসর আলবার্তো গ্রুনবাম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের বেডফোর্ড কলেজের প্রফেসর মাইকেল হোর এবং নেদারল্যাণ্ডের গণিতবিদ এরিখ কোয়েলিংক প্রমুখের সঙ্গে গণিত নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। বলতে গেলে সারাটা জীবন তিনি এই অধরা শাস্ত্রের জটিল গ্রন্থিসমূহ উন্মোচনে নিরলস সাধনা করে গেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে  জীবনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন গণিত শাস্ত্র অধ্যয়নে। আমাদের অধিকাংশের কাছেই গনিত একটি রসখসহীন দুর্বোধ্য বিষয়। মীজান রহমান কিন্তু বলতেন, সম্পূর্ণ উল্টো কথা। তিনি বিশ্বাস করতেন রিচারড ফাইনম্যানের সেই অমর উক্তিতে, “Not knowing mathematics is a severe limitation in understanding the world. To those who do not know mathematics it is difficult to get across a real feeling as to the beauty, the deepest beauty of nature ... If you want to learn about nature, to appreciate nature, it is necessary to understand the language that she speaks in.”

মিজান রহমান মনে করতেন, ‘গণিত আছে প্রকৃতি ও মানব অভিজ্ঞতার কেন্দ্রে’।আর তাইতো মহাবিশ্বের রহস্য এবং জটিলতাগুলোকে বুঝতে হলে গনিতের জটিল সূত্রগুলো উদ্ধার করতেই হবে আমাদের। প্রখ্যাত সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিজান রহমান বললেন, ‘গণিত আসলে সর্বত্র। নদীর ঢেউ, গাছ ও পাতার বিন্যাস, শব্দতরঙ্গ অথবা মৃত্তিকার স্তরভেদ—এসবের জটিল গ্রন্থিসমূহ উদ্ধার করতে হলে গণিতের নিয়মতান্ত্রিকতা প্রয়োগ করতে হবে।’

মীজান রহমান গণিতজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত একটি নাম। এ জগতে যারা পন্ডিত তারা তাকে চিনতেন গণিত শাস্ত্রের শাখা, ‘হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ’ এর ‘মাস্টার’ হিসেবে। এ শাখার আরেক পন্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন ‘বেসিক হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ’ নামের একটি বই। বিশ্বখ্যাত গণিতজ্ঞ উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড এশকি মিজান রহমান ও জর্জ গ্যাসপারের গ্রন্থের ভূমিকা লিখতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, গণিতের এই শাখায় ‘এটিই শ্রেষ্ঠ বই।’ ১৯৯০ সাল থেকে এই বই পৃথিবীর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের মাস্টার্স কোর্সের ছাত্রদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।

কিউ সিরিজ ও অরথোগোনাল পলিনমিয়ালস এর এই শাখা গণিত শাস্ত্রে কোন নতুন কিছু নয়। জার্মান বিজ্ঞানী হাইনরিশ আউগুস্ট রথ ১৮১১ সালে কিউ-বাইয়োনোমিয়াল থিওরেম নামে এই বিষয়ে আলোচনার সুত্রপাত ঘটান। ১৮৪৬ সালে জার্মান গণিতবিদ এডোয়ার্ড হাইন বেসিক হাইপার জিওমেট্রিক সিরিজ বিষয়ে বই রচনা করেন। বিংশ শতাব্দীর দুই বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ভারতের রামানুজান ও জার্মানির আইনস্টাইনও একসময়ে এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন।

২০০ বছর ধরে গণিতের এই শাখায় গবেষণা ও অধ্যয়নের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, মিজান রহমান ও জর্জ গ্যাসপার তাঁদের লেখা পাঠ্যপুস্তকে তা সহজবোধ্য ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন।

বেসিক হাইপার জিওমেট্রিক সিরিজের প্রায়োগিক কার্যকারিতা রয়েছে বিজ্ঞানের নানা শাখায়। পদার্থবিজ্ঞানে আলো ও শব্দের তেজ এবং কম্পনাঙ্ক পরিমাপ করতে হলে এপ্রোক্সিমেশন বা উপান্তিক ধারণা দরকার হয়।আর সেই উপান্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে এই জিওমেট্রিক সিরিজের প্রায়োগিক ব্যবহার প্রয়োজন। মহাকাশ গবেষণা থেকে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তিতেও এই তাত্ত্বিক সিরিজের ব্যবহার অপরিহার্য।

গণিতজ্ঞ পরিচয়ের পাশাপাশি  তিনি ছিলেন একজন সুসাহিত্যিক। নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন যে ক্যানাডায় আসার পরে  সুদীর্ঘ তিরিশ বছরেরও বেশী সময়কাল থেকে তিনি বাংলা ভাষার চর্চা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তারপরও এই নিভৃতচারী লেখক বাংলায় লিখে গেছেন বিস্ময়কর সাহিত্য মানসম্পন্ন বেশকিছু বই। তিনি একজন ধর্মমোহমুক্ত সত্যিকার মুক্তমনা মানুষ. তিনি বলেছেন, “মানুষের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো, মনের দরজা খোলা রাখা-Keep the mind open.” তিনি ছিলেন  একজন সত্যিকারের ‘স্কেপ্টিক’ বা সংশয়বাদী। তিনি অন্য অনেকের মত ধর্মগ্রন্থ সমূহের বানীগুলোকে তাচ্ছিল্যভরে ছুঁড়ে না ফেলে প্রকৃত অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেগুলোর বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করেছেন। সে কারণেই তিনি বিজ্ঞানীদের মধ্যে যারা সংখ্যালঘু ক্রিয়েশনিস্ট, তাদের মতো করে মহাভারতে কিংবা বাইবেলের বানী বা কোরানের আয়াতের মধ্যে বিগ ব্যাং-এর ব্যাখ্যা খুজে পাবার অপচেষ্টা  কখনো করেননি। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং ব্লগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার লেখা বহু প্রবন্ধ। যেমন,  ‘ইনশাল্লাহ,’  ‘কোথায় স্বাধীনতা,’ ‘হতবুদ্ধি, হতবাক,’ ‘আউট অব্ কন্টেক্সট,’ 'বিকৃতি নয় প্রকৃতি,' 'বাগান থেকে মহাকাশ,' এসব প্রবন্ধে মীজান রহমানের প্রগতিশীল এবং সংশয়বাদী দার্শনিক অভিজ্ঞার সন্ধান পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানের মানুষ হয়েও কিন্তু ডঃ মীজান রহমান সংশয়ী ছিলেন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রনহীন অগ্রযাত্রার ব্যাপারে। তিনি ভাবতেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রচ্ছন্ন বিপদ নিয়ে। তিনি ছিলেন স্টিফেন হকিং এর দলে, যিনি মনে করেন মানুষের সমকক্ষ কিংবা তারচেয়েও বেশি বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র তৈরির চেষ্টা শেষ পর্যন্ত পুরো মানবজাতিকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলতে পারে। 

এবার আমি বাংলা ভাষায় লেখা তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি,  ২০১২ সালে তাঁর লেখা ‘শুন্য’ বইটির উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করতে চাই। গণিতের সবচাইতে বড় গোলক ধাঁধা  গুলোর একটি হচ্ছে – ‘শূন্য।’  হাজার বছর ধরে অধরা এই শূন্যকে ধরার চেষ্টা শুধু গনিতবিদেরা নন, করেছেন সবাই - ধার্মিকেরা, দার্শনিকেরা, শিল্পীরা। গানিতিক শূন্য আবিস্কার এবং ব্যবহার চলছে যদিও বহু শতাব্দী ধরেই। কিন্তু এই শূন্যের ব্যপারটা আদৌ পুরাতন হতে পারেনি। বর্তমানেও আধুনিক পদার্থবিদ্যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের  সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন নিয়ে যে কাজগুলো করছে সেখানেও এই শূন্যেরই বড্ড বাড়াবাড়ি রকমের উপস্থিতি। স্টিফেন হকিং, স্টিফেন ওয়েনবার্গ, অ্যালেন গুথ, আঁদ্রে লিণ্ডে, আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিন, মিচিও কাকু, নীল ডিগ্র্যাস টাইসেন এবং লরেন্স ক্রাউস সহ মূলধারার প্রায় সকল পদার্থবিজ্ঞানীরাই আজ মনে করেন, কোয়ান্টাম স্তরে শূন্যতার মধ্য দিয়ে এক সময় মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল, কিংবা নিদেন পক্ষে ব্যাপারটা অসম্ভব কিছু নয়। এ বিশ্বাস থেকেই বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউস লিখেছেন তার অতি জনপ্রিয় বইটি- Universe from Nothing- যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’। আমাদের মীজান রহমানও এই ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ শিরোনামেই বাংলায় আরেকটি বই যৌথভাবে লিখেছেন আমেরিকা প্রবাসী তরুণ বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, প্রকৌশলী ডঃ অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে।বইটি খুব শীঘ্রই হয়তো বাজারে আসবে, অধীর আগ্রহে তিনি অপেক্ষা করছিলেন বইটি প্রকাশের জন্য। কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতি তাকে এরই মধ্যে কেড়ে নিয়ে গেলো, তিনি দেখে যেতে পারলেন না। 

ফিরে আসা যাক মূলত গাণিতিক শূন্য নিয়ে লেখা ড. মীজানের ‘শূন্য’ বইটির আলোচনায়- 

বিশ্ববিখ্যাত বাঙালী পদার্থবিজ্ঞানী প্রয়াত সত্যেন্দ্রনাথ বোস বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অনীহা দেখে একবার মন্তব্য করেছিলেন, “যারা বলেন বাংলায় চর্চা সম্ভব নয় তারা হয় বাংলা জানেননা অথবা বিজ্ঞান বোঝেন না”!শূন্য বইটি লিখে তিনি যেন সত্যেন বোসের এই অমর উক্তির যথার্থতাই আবার প্রমাণ করলেন। অর্ধ শতাব্দী কালের প্রবাস জীবনে প্রায় তিরিশ বছর ‘বাংলা সাহিত্য চর্চা মোটামুটি ছিলোই না’ বলে তিনি তার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন। অথচ কি উঁচুমানের বাংলা গদ্য রচয়িতা তিনি ছিলেন, তার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই তার এই বইটিতে। 

এটা বিরাট বড় কোন বই নয়, এটি পড়ার জন্য গণিত শাস্ত্রে বড় ডিগ্রী থাকার কোন প্রয়োজন নেই। সাধারণ পাঠকদের গনিত বিষয়ে চিন্তা বা ধারন ক্ষমতাকে মাথায় রেখেই অনেকটা গল্প বলার ঢঙে তিনি বিটা রচনা করেছেন। মূলত কাদের জন্য তিনি লিখেছিলেন বইটি? ভূমিকায় তিনি পরিস্কার ভাবে লিখে দিয়েছেন, 

‘এ বইটি লিখবার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য আমার – বাংলাভাষাভাষী জগতের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকেও আমার নিজের কৌতূহল এবং আগ্রহকে সংক্রমিত করে তোলা। আশা করি শূন্য এবং গণিতকে একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করবে ওরা বইটা পড়ার পর। ‘গণিত’ কোন ভীতিকর জন্তুর নাম নয় – গণিত জীবনের প্রতি আনাচে কানাচে বন্ধুর মতো, প্রিয়জনের মতো, প্রতিক্ষণে উপস্থিত।’

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শুধু নয় যে কোন বয়সী, যে কোন পেশার শিক্ষিত অনুসন্ধিৎসু মানুষেরই বইটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, বলে আমার মনে হয়েছে। বন্ধু প্রকৌশলী স্বপন বিশ্বাস, যিনি নিজেও একজন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, মন্তব্য করেছেন, “এটি একটি ছোট মহাগ্রন্থ”। কি নাই এর মধ্যে? সাবলীল এবং প্রাঞ্জল ভাষায় খুব সহজ সরল উদাহরণ দিয়ে তিনি চেস্টা করেছেন, গণিতে শূন্য আসলে কি তা বুঝাতে। 

শূন্যের উতপত্তির ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, 

প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে-সংখ্যাটির কখনো প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ (এবং সাধারণভাবে, এখনও করেনা), সেটা হল ‘শূন্য।’ ক্ষেতের চাষীকে কখনো ‘শূন্য’ সংখ্যক বীজ বপন করতে হয়না, ‘শূন্য’ গরুর দুধ দোয়াতে হয়না, ‘শূন্য’ সন্তানের মৃত্যুতে কাতর হতে হয়না। এমনকি ১ এর ডানপাশে একটা শূন্য বসালে যে দস্তুরমত একটা পূর্ণসংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় সে বোধটুকু উদয় হতে অনেক, অনেক যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছিল মানুষকে।

বিস্ময়কর গদ্য রচনার যাদুকরী ব্যবহার করে তিনি এঁকেছেন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা থেকে আজকের বিগ ব্যাং পর্যন্ত শূন্যের দীর্ঘ ভ্রমনের মানচিত্র। কিভাবে গ্রীকদের ধর্মবিশ্বাস শূন্যের চিন্তা থেকে গ্রীক সভ্যতাকে হাজার বছর ধরে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো সেকথাও উঠে এসেছে তার বর্ণনায়।  তার বর্ণনায় উঠে এসেছে কিভাবে মেসোপটেমিয়া থেকে ব্যাবিলন হয়ে শূন্য একটি সংখ্যা হিসেবে তার পূর্ণতা পেলো ভারতবর্ষে এসে। তিনি দেখালেন কি ভাবে বানিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে আরবরা  ভারতীয়দের কাছ থেকে নিয়ে তাঁদের এ্যারাবিক নিউমারালস-এ স্থান দিয়ে শূন্যের সাথে পরিচিত করালো ইওরোপিয়ানদেরকে তাদের রেনেসাঁর সময়ে।

বইটিতে তিনি বর্ণনা করেছেন গণিতের সাথে দর্শন এবং ধর্মের আন্তঃসম্পরকের ক্ষেত্রে শূন্য এবং তাঁর বিপরীতে অসীমের গুরুত্বের জটিল বিষয়গুলোকে। 

‘শূন্য ও অসীম – একই সাথে পরস্পরের প্রতিচ্ছবি এবং প্রতিপক্ষ। দুয়েতে মিলে রচনা করেছে সংসারের গূঢ়তম রহস্য’।‘শূন্য আর অসীম, এরা একে অন্যের যমজ। যেখানে শূন্য সেখানেই সীমাহীনতা। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবলে যেখানে কিছু নেই সেখানেই সবকিছু। শূন্য দ্বারা বৃহত্‌কে পূরণ করুন, বৃহত্‌ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই একই শূন্য দ্বারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রকে ভাগ করুন, ক্ষুদ্র অসীমের অঙ্গধারণ করবে। শূন্য সবকিছু শুষে নিয়ে অসীমের দরবারে পাঠিয়ে দেয়’।

স্বপন বিশ্বাস তার পাঠানো নোটটিতে লিখেছেন, “স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বিজ্ঞান সাহিত্যের লেখক হিসেবে যারা সুপরিচিত, সঙ্গত কারণেই মীজান রহমানের নাম এখানে অনুপস্থিত। তার প্রবাসে অধ্যাপনা ও বসবাস এবং প্রচারবিমুখতা এর মূখ্য কারণ। তাছাড়া জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে লিখলেন এই শূন্য নামের বইটি।বাংলাদেশে প্রকাশিত হওয়া সত্যেও বিজ্ঞানামোদী মহলে বইটি তেমন একটা প্রচার পায়নি।” সত্যিই বিষয়টি বেদনাদায়ক। মীজান রহমানকে আমরা প্রবাসীরা যতটুকু জানি, বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজ ততটা জানে না। এই স্মরণ সভার কাছে তাই আমার বিনীত অনুরোধ, আসুন আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ নেই যেগুলোর মাধ্যমে আমরা মীজান রহমানের লেখনী এবং গবেষনা কর্মগুলোকে তাঁর প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি। 

ধন্যবাদ আপনাদের মনোযোগের জন্য।





 (^-^) Posters Design and Composition by 
Asma Sultana
. Vision Creates Value Blog 20150117-18


More Information: 

http://visioncreatesvalue.blogspot.com/2012/06/amazing-visionary-journey-of-dr-mizan.html

http://visioncreatesvalue.blogspot.com/2015/06/dr-mizan-rahmans-keynote-speech.html

Dr Mizan Rahman's Memoirs, Interviews and Articles Archive: http://visioncreatesvalue.blogspot.com/search/label/Mizan%20Rahman

নায়কঃ মীজান রহমান (১৯৩২-২০১৫) :: দেশী টেলিভিশন, ক্যানাডা https://www.youtube.com/watch?v=77_TMZDqdAI&feature=youtu.be

Mizan Rahman Memoirs Archive ♥♪♥ মীজান রহমান স্মৃতি সম্ভার

https://www.facebook.com/media/set/?set=a.10152678631419503&type=3

♥♪♥

VCV is delighted to publish Dr Mizan Rahman's memoirs. Many thanks to Mr Swapan Biswas for his generous support and technical communications ....

শফিউল ইসলাম :: Shafiul Islam

Vision Creates Value Team

Swapan Biswas <swapan.bib@gmail.com>
To:shafiul_i@yahoo.com
Thu, Oct 29 at 5:57 PM
Hello Dr Shafiul

This article was written and typed by Tito Khandaker immediately after the death of Dr Mizan Rahman (2015) and delivered at a commemoration meeting. It was published nowhere. The software used for tying was BENGALI (INDIA) under GOOGLE INPUT TOOLS. You can easily download from GOOGLE INDIC KEYBOARD. The usage is pretty similar to Avro. Please do not feel any obligation to publish it. If there is any difficulty to read font, It is alright not to publish it. For publishing in FACEBOOK, this font seems OK.

Swapan


File Received: 20201020

File Converted: https://www.unicodeconverter.info/ Online Avro to Unicode Converter, 20201029

Edited and proofread: 20201029

Photo Added: 20201029

Published: c20150130

Last updated: 20201029

No comments:

Post a Comment