রিয়া দাশগুপ্তা :: Ria Dasgupta
আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর জন্মদিন (সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ই আগস্ট, ১৯২৬ - ১৩ই মে, ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।)
আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর জন্মদিন (সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ই আগস্ট, ১৯২৬ - ১৩ই মে, ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।)
আজ যদি তিনি আমাদের মাঝে জীবিত থাকতেন তবে তাঁর বয়স হতো অনেক, কিন্তু তিনি যে প্রৌঢ়ত্বের কবি নন। আমরা মনে করি কবি তিনি আঠারোর।অবাধ্য, স্পর্দ্ধিত, দুর্যোগ প্রতিপালিত আঠারোর দীপ্ত জয় ঘোষণা তিনি নিজেই করে গেছেন তাঁর কবিতায়। আঠারো তিনি পার হয়েছিলেন, মারা গেছেন একুশে, কিন্তু আঠারো অক্ষয় হয়ে আছে তাঁর বক্তব্যে, ভাষায়, ছন্দস্পন্দে, উপমায়। তারুণ্যের মধ্যে গুণ আছে, কিন্তু ঋণও আছে এক প্রকারের। তারুণ্য চপল হতে জানে, সে হতে পারে বুদ্ধিতে অপরিণত, আবেগে অশিক্ষিত। কিন্তু সুকান্তের তারুণ্যে গুণ আছে, ঋণ নেই। তাঁর মধ্যে তারুণ্যের উদ্দীপনা ও উত্তেজনা আছে, কিন্তু উদ্দীপনা ও উত্তেজনাকে তিনি কাব্যের শৃঙ্খলার ভেতর রেখেছেন, যেমন রেখেছিলেন নজরুল ইসলাম, আরো অনেক বেশি সময় নিয়ে, আরো অনেক অধিক সংখ্যক কবিতায়।
রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরনীয় নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য। দাদামশাই সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৮২ নং মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়ির দোতলায় একটি ছোট্ট ঘরে জন্মগ্রহন করেন সুকান্ত, ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট (বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩০ শ্রাবণ), পিতা নিবারণ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুনীতি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র তিনি। জেঠতুতো দিদি রাণীদি নাম রাখের সুকান্ত, ‘রমলা’ খ্যাত সাহিত্যিক মনীন্দ্রলাল বসুর গল্প ‘সুকান্ত’-এর নামে। বাগবাজারের নিবেদিতা লেনের বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। এরপর সেই বাড়ি ছেড়ে আসা হয় বেলেঘাটার ৩৮ নং হরমোহন ঘোষ লেনে। -
সুকান্ত তাঁর সংগ্রামী চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন তাঁর অবিস্মরনীয় সাহিত্য-সৃষ্টির মাধ্যমে। দেশের মানুষকে বিদেশী শাসনের বিরূদ্ধে উৎসাহিত করেছিলেন তাঁর লেখনীর দ্বারা। বিদ্রোহী কবি সুকান্ত গেয়েছিলেন জীবনের জয়গান। গোলাম কুদ্দুস সম্পাদিত ‘একসূত্রে’সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সুকান্তের ‘জনযুদ্ধের গান’, বাংলা ১৩৫১ সালের মন্বন্তর-এর ফলশ্রুতি হল ‘আকাল’নামক কবিতা সংকলন। সাথে সাথে তাঁর রাজনৈতিক কর্মীজীবনে তিনি সারা বাংলার কিশোরদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘কিশোর বাহিনী’।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আমরা যে ভবিষ্যৎ কবির সন্ধান পাই, তাই মূর্ত হয় সুকান্তের মাধ্যমে -
“এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক মনের।
মর্মের বেদনা যত করিয়ো উদ্ধার”।
বিশ্বকবির এই দায়িত্ব পালনে ব্রতী সুকান্ত লিখলেন-
“যে শিশু ভূমিষ্ট হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে”
অথবা
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”
সুকান্তের সমস্ত জীবনটাই ছিল কবিতার সাথে একাত্ম। তাঁর আগুন-ঝরানো কলমে ফুটে ওঠে বিদ্রোহের গান-
“আমার দিন পঞ্জিকায় আসন্ন হোক
বিস্ফোরণের চরম, পবিত্র তিথি”
তাঁর বিদ্রোহ সকল মানুষের জন্য, জীবনের জন্য –
“হে সূর্য।
তুমি আমাদের স্যাঁতসেতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে”
জনগণের কবি সুকান্তের সমাজ-সচেতনতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী কলমে তাঁর শক্তির প্রকাশের সাথে যদি যুক্ত হত তাঁর বয়সের পূর্ণতা ও অভিজ্ঞতা, তাহলে বাংলা সাহিত্য জগৎ বৃহৎ ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ করতে পারতো। তা সত্ত্বেও সুকান্ত তাঁর অপরিণত যৌবনেই এমন কবিতা লিখে গেছেন যা সুপরিণত এবং এই সকল রচনার মাধ্যমেই তিনি চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি, সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি’। সুকান্ত ছিলেন সেই মাটির কবি, তাই তাঁর কবিতা আমাদের হ্রদয়ের এত কাছাকাছি।
পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
জন্মদিনে আমাদের এই প্রিয় কবিকে জানাই প্রণাম ও বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।।
রিয়া দাশগুপ্তা :: Ria Dasgupta
কোলকাতা
২০১৩ অগাস্ট ১৫
ভালো লাগল পড়ে
ReplyDelete