নাজনীন সীমন
মানবতা বিরোধী
অপরাধ কি সাধারণ কোন অপরাধ যে প্রচলিত ধারায় এর বিচার কার্য সম্পাদিত হবে? ১৫,০০০
সাক্ষী সংযোজন—এটি কোন অপতৎপরতার অংশ এটা বুঝতে কি কারো মহাজ্ঞানী হবার দরকার আছে?
বর্তমান সরকারের সাড়ে ৩ বছর পার হয়ে গিয়েছে; বাকী সময়ে কি বিচার কার্য সম্পন্ন করা
সম্ভব? একজন পালিয়েছে বোরখা পরে একাত্তরের পুনরাবৃত্তি করে; অন্যরা বয়স, রোগ, শোক,
ধর্মের দোহাই দিয়ে সতত নিয়োজিত আছে ফাঁক ফোকর খুঁজতে আর তাদের বিষবৃক্ষের ফসলেরা দেশে
বিদেশে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ধেড়ে শয়তানগুলোকে নির্দোষ প্রমাণ করে গাঁদার মালা দিয়ে
কারাগার থেকে বের করে সাম্রাজ্য সুখ উপভোগের সুযোগ তৈরীতে। এদের মাথায় শুধু
কূটবুদ্ধি আছে তাই-ই নয়, বরং অর্থ বিত্ত, তেলপ্রধান বিত্তশালী দেশ সমূহের পূর্ণ
সমর্থন, পূর্বকৃত অসমাপ্ত নীলনক্সা, বীজ ফুটে বের হওয়া নতুন ছানাপোনা, সুদীর্ঘ সময়
ধরে বাড়িয়ে চলা জঙ্গি আক্রমণে, রগ কাটায় দক্ষ কর্মী বাহিনী, অন্ধ সমর্থক, ধর্মকে
হীন স্বার্থে ব্যবহার কৌশল, রং বদলানোর অসম্ভব ক্ষমতা, ঠোঁটের আগায় থাকা অসত্য
ভাষণ, হিংস্রতা, বর্বরতা, পাশবিকতা ইত্যাদিতে অত্যন্ত পারঙ্গম এরা। এর প্রমাণ ’৭১
থেকে এ পর্যন্ত বাঙালী জাতি বারবার দেখেছে।
বর্তমান সরকার
ব্যতীত অন্য কোন সরকার এসে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেবে
না, উপরন্তু এদের নির্দোষ প্রমাণিত করে আবারো রক্তস্নাত লাল সবুজ পতাকা এদের হাতে
তুলে দেবে এবং জোটভূক্ত হয়ে কেবল ’৭১ এর বা ’৭৫ ও ’৯০ পরবর্তী হিংস্রতা নয়, বরঞ্চ
এর সম্মিলিত রূপ দেখতে পাবে জাতি, তাতে সন্দেহের ন্যূনতম অবকাশ নেই। আবার আগামী
নির্বাচনে কোন দল সরকার গঠন করবে তাও আগাম বলা সম্ভব নয়। ফলতঃ যা করার তা দ্রুত
বাস্তবায়ন করতে হবে নিয়ম মেনেই। কিন্তু এই নিয়মের মধ্যে কোন অবস্হাতেই জনপ্রতি গড়ে
১০০০ জন সাক্ষী নিয়োগ পড়ে না। ২১৬ টি শুনানীর পর ন্যুনেমবার্গ ট্রায়ালের রায় যদি
ঘোষণা এবং কার্যকর করা যায়, বিশ্ব বিবেক যদি এতে উৎকণ্ঠিত না হয়, তবে ঘাতক দালাল
রাজাকারদের ক্ষেত্রে এতো শ্লথগতি, রাজাকারদের পক্ষে প্রমাণের আধিক্য কেনো?
ভূক্তভোগী, চাক্ষুষ, পত্রিকা, ছবি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও
কেনো আদালতকে হাস্যকর পর্যায়ে নিতে হবে যেখানে তাদের পক্ষের আইনজীবীগণ প্রমাণে
সচেষ্ট হবেন ঐ চিহ্নিত রাজাকার আসলে সেই সময়ে নাবালক ছিলো, অথবা জন্মই নেয়নি বা
মাত্র বোল ফুটেছে মুখে কিংবা সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার স্বপক্ষে? কেনো
এই প্রহসন? তাছাড়া এই যে ১৫,০০০ সাক্ষী এবং রাজাকারদের আইনজীবী—এদেরকেই কেনো আইনের
কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবেনা যেহেতু এরা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করছে যুদ্ধাপরাধী
বাঁচাতে?
যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার কোন যাত্রাপালা নয় যে হাস্য তামাশা থাকবে, ঢোলের বাড়িতে মঞ্চে এসে সং সেজে
হাসাবে একজন সবাইকে; এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের সাথ অঙ্গাঙ্গি জড়িত; বাঙালী জাতির
আত্নমর্যাদা, অস্তিত্ব, এবং উন্নয়ন এর সাথে ওতপ্রোত সম্পৃক্ত। অতএব এ প্রক্রিয়ায়
১৫,০০০ নতুন ভাঁড়ের কোনো সংযোজন প্রয়োজন নেই; সাকার মতো একটি চিড়িয়াই যথেষ্ট।
শহীদদের ঋণ শোধ করার জন্য, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের এতোটুকু শান্তি দেবার
জন্য, বাঙালী জাতীয়তাবোধ বাস্তবায়নের জন্য এসব বর্বর ঘাতকদের যতো দ্রুত সম্ভব
বিচার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সময় সত্যি বেশী নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার বাংলার মাটিতে হতেই হবে, হবেই হবে। জয় বাংলা।
নাজনীন সীমন
::
নিউ ইয়র্ক
c২০১২ জুলাই ২১
c২০১২ জুলাই ২১
No comments:
Post a Comment