Monday, 7 January 2013
Sunday, 6 January 2013
S M Sultan :: এস. এম. সুলতান
SM Sultan - Wikipedia, the free encyclopedia
Artist SM Sultan
S.M. Sultan | Facebook
Footage of S.M.Sultan - YouTube |
Courtesy of: http://smsultan.com/biography.html
Biography
Sheikh Mohammed Sultan (Bengali: শেখ মোহাম্মাদ সুলতান) (1923–1994), better known as SM Sultan(এস এম সুলতান), was a painter from Bangladesh. Sultan was born on 10 August 1923 in Masimdia, Narail district, Bangladesh. He was declared the Man of Asia in 1982 by University of Cambridge.
Biography
After only five years of schooling in Victoria Collegiate School in Narail, Sultan joined his father to work as a mason. He began to draw the buildings his father used to work on and developed an artistic disposition. He wanted to go to Kolkata to study art, but his family did not have the means to send him there. Eventually, Sultan went to Kolkata in 1938 with monetary support from the local zamindar (landlord).
Having inadequate qualifications for admission into the Art School in Kolkata, Sultan only managed to get in through the help of the poet and art criticHasan Shahid Suhrawardy (1890–1965, Who introduced Jamini Roy to the world) a member of the governing body of the School also known as elder brother of Shahid Suhrawardy, former Prime Minister of Pakistan. Sultan also stayed at Suhrawardy’s house and was allowed use of his library. Sultan, however, never completed his education.
After three years in the school, his Bohemian nature had the better of him and he went travelling around India and working as a freelance artist. During his travels, he made a living by drawing the portraits of allied soldiers who had camped at the place he was visiting. In this period, his first exhibition was held in Simla, though none of these works have survived, mainly due to Sultan’s own indifference towards preserving his work. After living and working in Kashmir for a while, Sultan returned to Narail in the wake of the Partition of India, Narail now part of Bangladesh.Then again, in 1951, he left for Karachi. There he taught as an art teacher at a school, and came in contact with artists like Abdur Rahman Chughtai and Shaker Ali, with whom he developed lasting friendship. In 1950 Sultan had gone to USA – exhibiting his work in New York, Washington, Chicago, and Boston, and later in London. In 1953 he returned to Narail. There he built a school for children, and a menagerie. He lived in a house full of cats and snakes. Except for occasional visits to Dhaka (where he had his first exhibition in 1976) he lived in the quiet isolation of his house.
A confirmed bachelor, Sultan settled down in an abandoned building in Narail overlooking the river Chitra, where he lived ever since with an adopted family and pets of his own including dogs, mongoose and monkeys. Sultan would later build a mini-zoo near his home. Apart from occasional visits toDhaka, the capital, Sultan only once left Narail for any substantial period of time. He became interested in a ruined house in Sonargaon, pretty much like his own home in Narail, and lived there for a period.
Sultan’s first exhibition in Dhaka was in 1976, inordinately late for a painter of his stature. Sultan died in 1994.
Accolades
SM Sultan won the “Ekushey Padak” in 1982, Bangladesh Charu Shilpi Sangsad award in 1986 and the “Independence Award” in 1993. In 1989, Tareque Masud directed a 54 minute documentary film on SM Sultan’s life, called Adam Surat (The Inner Strength). Masud started filming it in 1982 with the help of the painter, and traveled with him all around Bangladesh with Sultan. According to Masud, Sultan agreed to cooperate only on the condition that “… rather than being the film’s subject, he would act as a catalyst to reveal the film’s true protagonist, the Bengali peasant”. Bangladesh government recently completed the construction of Sultan memorial complex though it hasn’t yet been inaugurated. Sultan, of course, had a special relation with Narail. He was known to the locals as “Lal Mia”, a most informal and homely name only to be given to a close person. Chetona Theatre from Narail has staged Aango Lal Mia (Our Lal Mia) on Sultan. In 2005, famous Bangladeshi photographer Nasir Ali Mamun published a book named Guru with 68 photographs of Sultan. These were selected from thousands of photographs taken by Mamun in the period from 1978, when he first met Sultan until his death.
Awards
- Ekushey Padak, 1982
- Independence Day Award, 1993
- Declared Man of Asia by University of Cambridge, 1982
Information Sources:
1. Wikipedia
1. Wikipedia
Courtesy of: http://smsultan.com/biography/biography-bengali.html
জীবন বৃত্তান্ত
শেখ মোহাম্মদ সুলতান, যিনি এস. এম. সুলতান নামে সমধিক পরিচিত, (১০ আগস্ট, ১৯২৩ - ১০ অক্টোবর, ১৯৯৪) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।[১] তাঁর জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তাঁর শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণীর দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তাঁর ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জীবনী
এস. এম. সুলতান ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্টে তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোরের নড়াইলের মাছিমদিয়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিলো এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ মেছের আলী, তিনি পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী।[২] শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। তাঁকে বিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো অতোটা সামর্থ্য তাঁর বাবার ছিলো না। বহু কষ্ট হওয়াসত্ত্বেও তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তিনি এখানে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এরপর স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। রাজমিস্ত্রীর কাজ করার পাশাপাশি তিনি সেই দালানগুলোর ছবি আঁকতেন। ১০ বছর বয়সে যখন তিনি স্কুলে পড়েন তখন ড: শাম্যপ্রসাদ মুখার্জ্জী স্কুল পরিদর্শনে এসে তাঁর আঁকা ছবি দেখে প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিলো ছবি আঁকা শিখবেন, এজন্যে দরকার হলে কলকাতায় যাবেন। কিন্তু এরকম আর্থিক সঙ্গতি তাঁর পরিবারের কখনোই ছিলোনা। এসময় তাঁর এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। জমিদারের সাহায্য নিয়ে সুলতান ১৯৩৮ সালে কলকাতা যান।
তাঁর ইচ্ছা ছিলো কলকাতায় গিয়ে অর্থ উপার্জনের কোনো চেষ্টা করার পাশাপাশি চিত্রশিল্পের শিক্ষা চালিয়ে যাবার। এই ইচ্ছা নিয়েই তিনি প্রথমে ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের কলকাতার বাড়িতে উঠেন। এসময় তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দী, সুলতানকে সব ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তাঁর গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিলো। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা না থাকাসত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর চেষ্টায় তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। এখানে তিনি তিন বছর পড়াশোনা করেন। পাশ করে একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
আর্ট স্কুলে পড়লেও সেখানকার বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি তাঁর জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলোনা। তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে এবং ছন্নছাড়া। প্রকৃতিকে তিনি সবসময় রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছেন। আবার যান্ত্রিক নগর জীবনকে সেরকমই ঘৃণা করেছেন। ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনেযোগ দিয়েছিলেন। এর অব্যবহিত পরেই বেরিয়ে পড়েন এবং উপমাহাদেশের পথে পথে ঘুরে তাঁর অনেকটা সময় কেটে যায়। তখন ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্য ছিলো ভারতে। তিনি ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে তা সৈন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবেই তিনি সেসময় জীবনধারণ করেছেন। মাঝে মাঝে তাঁর ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে পার্থিব বিষয়ের প্রতি যে অনীহা এবং যে খামখেয়ালীপনা ছিলো তাঁর কারণে সেই ছবিগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর কোনো আলোকচিত্রও এখন পাওয়া যায় না। এছাড়া তিনি কখনও এক স্থানে বেশি দিন থাকতেন না। তিনি বলেন
একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেলো। ‘৪৮-এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি।
তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তাঁর আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর এস এম সুলতান কিছু দিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে কিছুদিন থেকেই করাচিচলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর চাকুরি করেছিলেন। সেখানে চাকুরিরত থাকা অবস্থায় তাঁর সাথে পরিচয় হয় চুঘতাই এবং শাকের আলীর মত বিখ্যাত শিল্পীদের। এর কিছু আগে ১৯৫০সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো এবং বোস্টনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। এরপর লন্ডনেও তিনি প্রদর্শনী করেছিলেন।১৯৫৩ সালে আবার নড়াইলে ফিরে আসেন। এবার এসে তিনি শিশু শিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন যা নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিলো। শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় তুলেছিলেন। এছাড়া সেখানে “নন্দন কানন” নামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং “নন্দন কানন স্কুল অব ফাইন আর্টস” নামে[১] একটি আর্ট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন।
অনেকটা সময় তাঁর নড়াইলেই কেটে যায়। ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি প্রায় সকলের অজ্ঞাতেই ছিলেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তাঁর কিছু শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তাঁর আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অবশ্য আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে বাধ্য হোন। তাঁর কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিলো তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে একটি বড় আকারের নৌকাও তৈরি করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিলো শিশুরা সেই নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে। আশির দশকের শেষদিকে তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তাঁর সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সে বছরেরই আগস্ট মাসে নড়াইলে ঘটা করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালেরই ১০ আগস্ট তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
শিল্পকর্ম
পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিলো। অনেক শিল্পীই সেখানে নব নব শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এস এম সুলতান সেসময়ও নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। এর কারণ অবশ্য গ্রামীণ জীবনের প্রতি তাঁর চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতা। তাঁর শিল্পকর্মের স্বরূপটিও খুঁজে পাওয়া যায় এই গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। তাঁর সে সময়কার ছবিগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এর কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য হলো
আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা…। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। …আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রু্গ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।
তাঁর ছবিতে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপলাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তাঁর এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রুর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তাঁর এরকম দুটি বিখ্যাত ছবি হচ্ছে: হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল(১৯৮৮)।
১৯৭৬ সালে তাঁর আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তাঁর শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং জটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাঁর অনেক ছবিরই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রুক্ষেপ করতেন না।
এস এম সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর তেমন কোনো অনুসারী ছিলোনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তাঁর মতো করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তাঁর মতো মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তাঁর কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিলো তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তাঁর জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন
১৯৭৬ সালে তাঁর আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তাঁর শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং জটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাঁর অনেক ছবিরই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রুক্ষেপ করতেন না।
এস এম সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর তেমন কোনো অনুসারী ছিলোনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তাঁর মতো করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তাঁর মতো মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তাঁর কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিলো তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তাঁর জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন
তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিলো জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিলো ‘আধুনিকতা’, অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে।
শিল্পী এস এম সুলতান শেষ জীবনে বলে গিয়েছেন
আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
প্রদর্শনীসমূহ
একক
সিমলা, ভারত (১৯৪৬)
লাহোর, পাকিস্তান (১৯৪৮)
করাচী, পাকিস্তান (১৯৪৯)
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, শিকাগো ও বোস্টন (১৯৫০)
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা (১৯৭৬)
এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী : ফুকুওকা মিউজিয়াম, জাপান (১৯৮১)
গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা (১৯৮৭)
গ্যালারি টোন, ঢাকা (১৯৯৪)
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাঁর ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিলো।
লাহোর, পাকিস্তান (১৯৪৮)
করাচী, পাকিস্তান (১৯৪৯)
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, শিকাগো ও বোস্টন (১৯৫০)
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা (১৯৭৬)
এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী : ফুকুওকা মিউজিয়াম, জাপান (১৯৮১)
গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা (১৯৮৭)
গ্যালারি টোন, ঢাকা (১৯৯৪)
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাঁর ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিলো।
যৌথ
এছাড়াও লন্ডনে পিকাসো, মার্টিন ও ডালির সাথে যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
তিনি ১৯৮০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কাছ থেকে পান শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার।[২] তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কে, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন৷ এছাড়াও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হোন৷
বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে পদক (১৯৮৬)
বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৩)
বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে পদক (১৯৮৬)
বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৩)
প্রামাণ্যচিত্র
এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ফাহিম মিউজিকের ব্যানারে “লাল মিয়া” নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন আমিরুল ইসলাম। এতে এস এম সুলতানের স্মৃতিবিজড়িত নড়াইলের বিভিন্ন স্থান, চিত্রা নদী, শিশুস্বর্গ, বিভিন্ন সময়ে তাঁর আঁকা ছবি ও দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে। এছাড়া আছে এস এম সুলতানের পাঁচ মিনিটের একটি সাক্ষাত্কার।
অন্যান্য
এস এম সুলতান ছিলেন একজন সুর সাধক, তিনি বাঁশি বাজাতেন।
মৃত্যু
এস এম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪ টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷
তথ্যসুত্রঃ
একঃ বাংলা উইকিপিডিয়া
একঃ বাংলা উইকিপিডিয়া
Saturday, 5 January 2013
The Greatest Speech Ever Made
Greatest Speech Ever Made - Charlie Chaplin The GreatDictator Full HD Best Version
"I’m sorry but I don’t want to be an Emperor – that’s not my business – I don’t want to rule or conquer anyone. I should like to help everyone if possible, Jew, gentile, black man, white. We all want to help one another, human beings are like that.
We all want to live by each other’s happiness, not by each other’s misery. We don’t want to hate and despise one another. In this world there is room for everyone and the earth is rich and can provide for everyone.
The way of life can be free and beautiful.
But we have lost the way.
Greed has poisoned men’s souls – has barricaded the world with hate; has goose-stepped us into misery and bloodshed.
We have developed speed but we have shut ourselves in: machinery that gives abundance has left us in want. Our knowledge has made us cynical, our cleverness hard and unkind. We think too much and feel too little: More than machinery we need humanity; More than cleverness we need kindness and gentleness. Without these qualities, life will be violent and all will be lost.
The aeroplane and the radio have brought us closer together. The very nature of these inventions cries out for the goodness in men, cries out for universal brotherhood for the unity of us all. Even now my voice is reaching millions throughout the world, millions of despairing men, women and little children, victims of a system that makes men torture and imprison innocent people. To those who can hear me I say “Do not despair”.
The misery that is now upon us is but the passing of greed, the bitterness of men who fear the way of human progress: the hate of men will pass and dictators die and the power they took from the people, will return to the people and so long as men die [now] liberty will never perish…
Soldiers – don’t give yourselves to brutes, men who despise you and enslave you – who regiment your lives, tell you what to do, what to think and what to feel, who drill you, diet you, treat you as cattle, as cannon fodder.
Don’t give yourselves to these unnatural men, machine men, with machine minds and machine hearts. You are not machines. You are not cattle. You are men. You have the love of humanity in your hearts. You don’t hate – only the unloved hate. Only the unloved and the unnatural. Soldiers – don’t fight for slavery, fight for liberty.
In the seventeenth chapter of Saint Luke it is written ” the kingdom of God is within man ” – not one man, nor a group of men – but in all men – in you, the people.
You the people have the power, the power to create machines, the power to create happiness. You the people have the power to make life free and beautiful, to make this life a wonderful adventure. Then in the name of democracy let’s use that power – let us all unite. Let us fight for a new world, a decent world that will give men a chance to work, that will give you the future and old age and security. By the promise of these things, brutes have risen to power, but they lie. They do not fulfil their promise, they never will. Dictators free themselves but they enslave the people. Now let us fight to fulfil that promise. Let us fight to free the world, to do away with national barriers, do away with greed, with hate and intolerance. Let us fight for a world of reason, a world where science and progress will lead to all men’s happiness.
Soldiers – in the name of democracy, let us all unite!"
Original video: http://www.youtube.com/ watch?v=WibmcsEGLKo
The Great Dictator 1940 October
The Greatest Speech Ever Given
"I’m sorry but I don’t want to be an Emperor – that’s not my business – I don’t want to rule or conquer anyone. I should like to help everyone if possible, Jew, gentile, black man, white. We all want to help one another, human beings are like that.
We all want to live by each other’s happiness, not by each other’s misery. We don’t want to hate and despise one another. In this world there is room for everyone and the earth is rich and can provide for everyone.
The way of life can be free and beautiful.
But we have lost the way.
Greed has poisoned men’s souls – has barricaded the world with hate; has goose-stepped us into misery and bloodshed.
We have developed speed but we have shut ourselves in: machinery that gives abundance has left us in want. Our knowledge has made us cynical, our cleverness hard and unkind. We think too much and feel too little: More than machinery we need humanity; More than cleverness we need kindness and gentleness. Without these qualities, life will be violent and all will be lost.
The aeroplane and the radio have brought us closer together. The very nature of these inventions cries out for the goodness in men, cries out for universal brotherhood for the unity of us all. Even now my voice is reaching millions throughout the world, millions of despairing men, women and little children, victims of a system that makes men torture and imprison innocent people. To those who can hear me I say “Do not despair”.
The misery that is now upon us is but the passing of greed, the bitterness of men who fear the way of human progress: the hate of men will pass and dictators die and the power they took from the people, will return to the people and so long as men die [now] liberty will never perish…
Soldiers – don’t give yourselves to brutes, men who despise you and enslave you – who regiment your lives, tell you what to do, what to think and what to feel, who drill you, diet you, treat you as cattle, as cannon fodder.
Don’t give yourselves to these unnatural men, machine men, with machine minds and machine hearts. You are not machines. You are not cattle. You are men. You have the love of humanity in your hearts. You don’t hate – only the unloved hate. Only the unloved and the unnatural. Soldiers – don’t fight for slavery, fight for liberty.
In the seventeenth chapter of Saint Luke it is written ” the kingdom of God is within man ” – not one man, nor a group of men – but in all men – in you, the people.
You the people have the power, the power to create machines, the power to create happiness. You the people have the power to make life free and beautiful, to make this life a wonderful adventure. Then in the name of democracy let’s use that power – let us all unite. Let us fight for a new world, a decent world that will give men a chance to work, that will give you the future and old age and security. By the promise of these things, brutes have risen to power, but they lie. They do not fulfil their promise, they never will. Dictators free themselves but they enslave the people. Now let us fight to fulfil that promise. Let us fight to free the world, to do away with national barriers, do away with greed, with hate and intolerance. Let us fight for a world of reason, a world where science and progress will lead to all men’s happiness.
Soldiers – in the name of democracy, let us all unite!"
Original video: http://www.youtube.com/
Friday, 4 January 2013
যদি আলোকিত মানুষ হতে চাও ♥♪♥
[ উত্সর্গ : সুকান্ত ]
যদি স্বপ্ন দেখতে চাও
স্বপ্নসঞ্চারী প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতির পরিধি জেনে
পথ চলো ।
যদি আলোকিত মানুষ হতে চাও
অন্ধ বিশ্বাসের বৃত্ত ভেঙ্গে
বেরিয়ে এসো ।
যদি মানব-প্রেমের রাজনীতি শিখতে চাও
প্রীতিলতার দেশপ্রেম
জেনে নিয়ো ।
যদি ভালো শিক্ষক হতে চাও
কি, কেন, কিভাবে, কে, কোথায়, কখন
প্রশ্নগুলো যত্নসহকারে শিখে নিয়ো ।
যদি জীবনের গল্প শুনতে চাও,
শব্দের শব্দ, রং, ঢং, সীমানা ও
সুকান্তকে জেনে নিয়ো ।
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, অন্টারিও, কানাডা
২০১৩ জানুয়ারী ০৪
যদি স্বপ্ন দেখতে চাও
স্বপ্নসঞ্চারী প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতির পরিধি জেনে
পথ চলো ।
যদি আলোকিত মানুষ হতে চাও
অন্ধ বিশ্বাসের বৃত্ত ভেঙ্গে
বেরিয়ে এসো ।
যদি মানব-প্রেমের রাজনীতি শিখতে চাও
প্রীতিলতার দেশপ্রেম
জেনে নিয়ো ।
যদি ভালো শিক্ষক হতে চাও
কি, কেন, কিভাবে, কে, কোথায়, কখন
প্রশ্নগুলো যত্নসহকারে শিখে নিয়ো ।
যদি জীবনের গল্প শুনতে চাও,
শব্দের শব্দ, রং, ঢং, সীমানা ও
সুকান্তকে জেনে নিয়ো ।
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, অন্টারিও, কানাডা
২০১৩ জানুয়ারী ০৪
শব্দের শব্দ শুনি ♥♪♥ বিশ বছর বেঁচেও চিরজীবি ~ কিভাবে?
[ উত্সর্গ : প্রীতিলতা ]
যদি জীবনের গল্প শুনতে চাও,
শব্দের শব্দ, রং, ঢং, সীমানা ও
সুকান্তকে জেনে নিয়ো ।
ছোট্ট একটা জীবন,
প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতির বেড়াজালে;
মাত্র বিশ বছর - সীমিত সময় ।
জীবন-সৈকতে শব্দ নিয়ে খেলা
শব্দ চয়নে জীবনের ছন্দ ফুটিয়ে তোলা
বলতে পারো - ক'জন পেরেছে এমন?
শোনো তাহলে, জীবনের গল্প;
সুকান্তের জীবনবোধ ও সমানুভুতির
এক টুকরো সংলাপ:
'...এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে' ।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে । ....'
শব্দের শব্দ ও রং-এ জীবন ছুঁয়ে যায় ...
আর তাই,
মাত্র বিশ বছর বেঁচেও সুকান্ত চিরজীবি।
স্বপ্নসঞ্চারী ...।
Sukanta Bhattacharya, সুকান্ত ভট্টাচার্য
(15 August 1926 – 13 May 1947)
ছবি: প্রথম-আলো
- Banglapedia: Bhattacharya, Sukanta
- Works of Sukanta Bhattacharya
- Shukanto Bhattacarya - known as a young Bengali poet of hunger and revolution By Upali sramon
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, অন্টারিও, কানাডা
২০১৩ জানুয়ারী ০৪
Wednesday, 2 January 2013
চোখবাঁধা চোখে দুটো দিন ~ মীজান রহমান
জীবনে এই প্রথম চোখবাঁধা অবস্থায়
পথে নামার অভিজ্ঞতা। না, সত্যি সত্যি কেউ আমার চোখ বেঁধে রাখেনি, তবে মনে হয়েছে
সেরকমই।
গাড়িতে পাঁচজন যাত্রী। বড় ছেলে বাবু,
ওর স্ত্রী সোফিয়া, ওদের সতেরো বছরের ছেলে মীজান, তেরো বছরের মেয়ে লায়লা, আর আমি। পাঁচটি সুস্থসবল
মানুষের মধ্যে কেবল একজনেরই জানা ছিল আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি এবং ক’দিনের জন্যে। সোফিয়া। কিছুতেই ফাঁস করবে
না কিছু, নিজের স্বামীর কাছেও না। একসময় আমি নিজেও একই খেলা খেলেছি আমার পরিবারের সঙ্গে। হঠাৎ করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বলতামঃ চল। বউ বেচারি থতমত
খেয়ে বলত কোথায়। বাইরে। বাইরে কোথায়। যেদিকে দুচোখ যায়। ভীষণ ক্ষেপে যেত সে। আমি হাসতাম। হেঁড়ে গলায় হয়ত
একটা গানের কলি ছুঁড়ে দিতাম। তখন সেই ক্ষ্যাপা মুখ বিকেলের বৃষ্টিধোয়া রোদের মত ফিক করে
ফুটে উঠত। ও আমার পাগলামির খবর জানত।
সেই একই খেলা আজকে, শতযুগ পরে, খেলতে
শুরু করেছে আমার বৌমা। শুধু এটুকু ইঙ্গিত পেলামঃ একটা সারপ্রাইজ। কাকে উদ্দেশ্য
করে? আপনাকে। মানে আমি। উপলক্ষ? বলব না। রহস্য আমার সবসময়ই ভাল লাগে। কোথায় যাচ্ছি সেটা
জানতে না পারার মাঝে একটা রোমাঞ্চ আছে। বয়সে ভারি হলেও সে-রোমাঞ্চ অনুভব এবং উপভোগ করার মন এখনও
হারাইনি। সোফিয়া সেটা জানে। ছেলের বৌ হলেও শ্বশুরের স্বভাব বোঝার মত মন তার আছে। আমার জীবনের প্রায়
কোনকিছুই ঠিক গতানুগতিক নয়---বৌমার সঙ্গে সম্পর্কটি, তা’ও না।
খুব সকালেই রওয়ানা হয়ে গেলাম। অনুমানে বুঝে নিলাম
জায়গাটি খুব নিকটবর্তী কোনও শহর নয়----তাহলে এত বোঁচকাপত্র সঙ্গে নেবার প্রয়োজন হত
না। তাছাড়া ছুটির দিনে এত সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়ার মত বোকা ওরা নয়। বাচ্চাদের তো কথাই
নেই। অতএব দিল্লি অনেক দূর। তাহলে তো আরো মজা।
কিছুক্ষণ পর সোফিয়া তার রহস্যপুরির
একটা প্রাথমিক আভাস প্রকাশ করে দেয়ঃ “নেপচুন”।
পেশায় আমি গণিত করি, গোয়ান্দাগিরি
নয়। পেরি মেসন আর ডব্ল্-ও-সেভেনের গল্প পর্দায় দেখে মজা লাগত খুবই, কিন্তু বৌমার
‘নেপচুন’এর মাথামুণ্ডু উদ্ধার করার মত সরস মাথা আমার নয়। সৌভাগ্যবশতঃ আমার
অন্য তিনজন সহযাত্রী, তাদের উর্বরতর মস্তিষ্ক থেকেও কোন সাড়াশব্দ বের হল না।
একঘন্টা পর দেওয়া হবে দ্বিতীয় ক্লুটি,
বিজয়গর্বে ঘোষণা করলেন আমার রহস্যময়ী পুত্রবধূ। বিশ্ববিদ্যালয়ের
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে ধাঁধায় ফেলার চেয়ে বড় মজা আর কি হতে পারে। বুঝলাম যে গন্তব্যটি
অন্তত দু’তিন ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত। মনে মনে এয়ারলাইন ট্র্যাফিকের মত চাকা ঘুরিয়ে আন্দাজ করার
চেষ্টা করলাম কোথায় হতে পারে সোফিয়ার সেই রহস্যনগর। কোনটার সঙ্গেই
‘নেপচুন’ শব্দটিকে ধারেকাছে দাঁড় করাতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত কি
আশির শনিতে ধরেছে আমাকে? মাত্র তিনমাস আগে নিউইয়র্ক আর টরণ্টোতে ওরা বেশ ঢাকঢোল বাজিয়ে
আমার আশিতম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করল। আশি একটা বড়রকমের মাইলফলক সন্দেহ নেই। আমার দৃষ্টিকোন
থেকে কেবল বড়রকম মাইলফলকই নয়, সম্ভবত শেষ ফলক। অর্থাৎ এর পর আর কোন ফলক নেই ভাই। আর কোনও কেক কাটা
হবে না, জন্মদিনের কার্ড পাঠানো হবে না ‘মেনি হ্যাপি রিটার্ন্স’ নামক কতগুলো ভাওতা
শব্দ জুড়ে দিয়ে। এই অবস্থাটিতে, কারো অজানা নয়, যে আশিবাবুর মাথার মগজ কোরবানির গরুর কোপতাকরা
মগজের মতই কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। সুতরাং আমার এই গোবর মাথাটিকে নিয়ে আর খেলা করিস না রে মা।
ঘন্টা কাবার হতে-না-হতেই সোফিয়ার দ্বিতীয়
ক্লুঃ “মৌট”।
মৌট? সে আবার কি জিনিস। সাথে গুগল বা ওয়েবস্টার
কোনটাই ছিল না। হাইস্কুলের ছাত্রাবস্থায় শব্দটার সঙ্গে আবছা পরিচয় হয়েছিল----সম্ভবত দুর্গ জাতীয়
কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু দুর্গ কোথায় আমেরিকায়? আচ্ছা মেয়ে তো! এ কোথায় নিয়ে
যাচ্ছে আমাকে? ভাগ্যক্রমে আমার তরুণতর সহযাত্রীদের
মুখ দেখে বুঝলাম ওরাও একই রকম দিশেহারা। বৌমা, তুমি তোমার “মৌট” নিয়ে থাক, দয়া করে এই ধাঁধার যন্ত্রণা
থেকে রেহাই দাও আমাদের।
আধঘন্টা পর তৃতীয় ক্লুঃ “হলিউড”।
সুন্দর বোধগম্য একটা শব্দ। কিন্তু তাতে লাভ কি হল। ধাঁধা তো ধাঁধাই
থেকে গেল। নেপচুন, মৌট আর হলিউডের সঙ্গে সম্পর্কটা কোথায়? তবে হলিউড বলাতে একটু আলো দেখতে
পেলামঃ হয়ত হলিউডের কোনও চরিত্রের সংগে জড়িত। আমার কোপতা-হয়ে-যাওয়া
মগজের ভেতর সাঁড়াশী ঢুকিয়ে খোঁজা শুরু করলাম কিছু ক্লু পাওয়া যায় কিনা। নাহ, লাভ হল না। মাথা একেবারেই
ভোঁতা হয়ে গেছে। তাছাড়া হলিউডের নামধাম আগের মত এখন আর মনে রাখতে পারিনা, দরকারও পড়ে না। এবয়সে যে নিজের
নাম মনে আছে এই যথেষ্ঠ----তারকাদের নাম মুখস্ত করে কি লাভ আমার।
মজার ব্যাপার যে এবারও বাবু বা নাতি-নাতনি তিনজন ঠিক আমারই মত মাথা চুলকাতে
থাকল। বৌমার শেষ তিনটে ক্লু ঘন ঘন বেরিয়ে গেলঃ “ নিউজপেপার”, “কিডন্যাপিং”, “প্যাটি”। দেখলাম, বাবু মুচকি
মুচকি হাসতে শুরু করেছে। তাতে মনে হল হয়ত ও বুঝে ফেলেছে। না বোঝার কারণ
নেই। ওদের জন্ম এদেশে, লেখাপড়া করেছে এদেশে, বন্ধুবান্ধব সব এদেশে, তারা তরুণ, তাজা
মন, ওরা মনে রাখবে না তো কারা রাখবে। আমি হলাম একাধারে বাঙ্গাল, অঙ্কের মাস্টার, আশি-পূর্ণ-হওয়া
ত্থুত্থুরে বুড়ো। মগজে যা কিছু ছিল সব পাখিরা খেয়ে ফেলেছে।
যাই হোক, ছেলের বউএর কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হলাম। না মা, আমার মাথা
খালি। তুমিই বল কোথায় যাচ্ছি। আমার করুণ অবস্থা দেখে বোধ হয় একটু মায়া হল তার। আরো একটা ক্লু
দিল শেষবারের মত----ঘটনাটা ৭০ দশকের। হঠাৎ করেই যেন একটা
সুইচ জ্বলে উঠল। হ্যাঁ হ্যাঁ, প্যাটি হার্স্ট কিডন্যাপ হয়েছিল ১৯৭৪ সালে----অবশ্যই। এবার সব যোগ করতে
পারছি। এবং ওর ঘটনাকে অবলম্বন করে পরে একটা ছবি হয়েছিল হলিউডে। হ্যাঁ, মনে পড়েছে।
সবার হয়ত মনে নেই ঘটনাটা----আমারও
যে ছিল তা নয়। একটু উস্কে দেওয়াতে ছবিটা ভেসে উঠল, এই যা। ১৯৭৪ সালের মে
মাসের কোন একদিন সন্ধ্যাবেলা বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্ম থেকে প্যাটি হার্স্ট নামক
একটি ১৯ বছরের ছাত্রীকে জোর করে, বন্দুকের মুখে, অপহরণ করে নিয়ে যায় এসএলএ (Symbionese
Liberation Army) নামের একদল সশস্ত্র ও দুর্ধর্ষ দস্যুদল। “দস্যু” অবশ্য
পুলিশ আর গোয়েন্দাবাহিনীর দৃষ্টিতে। ওদের নিজেদের দৃষ্টিতে, বিশেষ করে ওদের বড় নেতা ডিফ্রিজ নামক
এক দাগী জেল-খাটা আসামীর দৃষ্টিতে, ওরা আদর্শবাদী বিপ্লবী। বিশ্বজোড়া যত সর্বহারা,
যত শোষিত শাসিত লাঞ্ছিতদল, তাদের হয়ে তাদের এই সংগ্রাম----এই দুঃসাহসী অভিযান বিশেষ
করে আমেরিকারই শ্বেতপাথরনির্মিত প্রাসাদবাসীদের বিরুদ্ধে। অপহরণের জন্যে
১৯ বছরের একটি ছাত্রীকে বাছাই করার কারণ? প্যাটি কোনও সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিল না, ছিল
আমেরিকার সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তিশীল এক পরিবারের সন্তান, যার সূত্র ধরে
এই বিপ্লবের বিষয়টি গোটা আমেরিকা শুধু নয়, সমস্ত পৃথিবীশুদ্ধ মানুষের কাছে জানাজানি
হয়ে যাবে। প্যাটি হার্স্টের পিতামহ ছিলেন উইলিয়াম র্যাণ্ডলফ হার্স্ট, যাঁর পূর্বপুরুষ
ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডরাশ-এর যুগে বিপুল ধনরত্নের মালিক হয়ে উঠেছিলেন। র্যাণ্ডলফ হার্স্টের
জন্ম ১৮৬৩ সালে, মৃত্যু ১৯৫১। ভীষণ সৌখিন ও সুখবিলাসী মানুষ ছিলেন তিনি। উত্তরাধিকারসূত্রে
প্রাপ্ত অর্থের পরিমান এতই অগাধ ছিল যে ইচ্ছে হলে হয়ত গোটা ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যটিই কিনে ফেলতে পারতেন। সে চেষ্টা অবশ্য
তিনি করেননি, তবে আড়াই লক্ষ একর এলাকাজুড়ে একটা র্যাঞ্চ কিনে নিয়েছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের
উপকূলঘেঁষা একটি পাহাড়ী অঞ্চলে, যেখানে সেসময় জনমানব প্রায় ছিল না বললেই চলে। সেই জায়গাটিকে
তিনি আস্তে আস্তে দালানকোঠা তৈরি করে বাসযোগ্য করে তোলেন। শুধু তাই নয়। সেখানে, ১,৬০০
উচ্চতায় অবস্থিত এক পাহাড়ের চূড়ায় এক আলিশান প্রাসাদ তৈরি করেন, জুলিয়ান মর্গান নামক
এক নামকরা স্থপতির সাহায্যে। সেই প্রাসাদেরই নামকরণ হয়েছে হার্স্ট ক্যাসেল। র্যাণ্ডলফ হার্স্টের
মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার নিজেরা ভোগ করার পরিবর্তে সমস্ত সম্পত্তিটা দান করে দেন ক্যালিফোর্নিয়া
সরকারকে----অর্থাৎ ক্যালিফোর্নিয়াবাসীদের
আনন্দ উপভোগের জন্যে। ও হ্যাঁ, আরেকটা বড় বিষয় তো উল্লেখই করা হল না----উইলিয়াম
র্যাণ্ডলফ নিজে কিন্তু স্বর্ণব্যবসায়ী ছিলেন না, ছিলেন সংবাদপত্রের মালিক। একটা-দুটো নয়,
অনেকগুলো। তাঁকে সারা আমেরিকাশুদ্ধ মানুষ জানত ‘নিউজপেপার ম্যাগনেট’ হিসেবে। অতএব বুঝতে পারছেন
সোফিয়ার ক্লুতে ‘প্যাটি’ ‘নিউজপেপার’ ‘হলিউড’---এগুলোর তাৎপর্য কি। বাকি ক্লুগুলোর মধ্যে ‘কিডন্যাপিং’টা তো প্রথমেই বোঝা গেল। বাকিগুলো সেই ক্যাসেলের
ভেতরকার যাবতীয় সরঞ্জামের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এগুলো আমার জানবার কথা নয়। বড়লোকের সখের প্রাসাদ
নিয়ে কৌতূহল আমার কোনদিনই ছিল না। অনেকটা সেকারণেই সোফিয়ার ক্লুগুলোর কোনও মাথামুণ্ডু আমি উদ্ধার
করতে পারছিলাম না। তবে প্যাটি হার্স্টের অপহরণের চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলো ৭০ দশকের অনেকটা সময় ধরেই
একটা বড় খবর ছিল। ঠিক যা আশা করেছিল সেই দস্যু বা বিপ্লবী দল। কিন্তু আসল মজার
ঘটনা ঘটেছিল পরে, যখন একসময় এসএলএর তরফ থেকে একটা টেপ করা ঘোষণা এসে পৌঁছায় পুলিশের
দপ্তরে, যাতে প্যাটির পরিষ্কার গলায় প্রচারিত হয় যে সে বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে,
কারণ ওদের চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতির সঙ্গে সে সম্পূর্ণ একমত। সেটা রীতিমত একটা
বোমাবর্ষণের মত কাজ করে সমস্ত আমেরিকায়। র্যাণ্ডলফ হার্স্টের নাতনি বিপ্লবী দলের সদস্য? যারা তাকে
জোর করে ধরে নিয়ে গেল কলেজের হোস্টেল থেকে তারাই হয়ে গেল তার সহবিপ্লবী? বুঝতেই পারেন
খবর-পাগল পত্রিকা-পড়ুয়ারা তখন কোন খবরটা সবচেয়ে আগে পড়তে চাইতেন। সবচেয়ে খুশি তখন
কারা? বিপ্লবীরা, স্বভাবতই। ব্যাপক প্রচারণাই তো তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
ভেবেছেন কেচ্ছা শেষ হয়ে গেল? মোটেও
না। শুরুমাত্র।
অপহরণ হয়েছিল এপ্রিলের ৩ তারিখে। সেই মাসেরই ১৫
তারিখে সান ফ্রান্সিস্কোর হাইবারনেইয়া নামক
এক ব্যাঙ্কে এক চাঞ্চল্যকর ডাকাতি। বন্দুকধারী একদল দস্যু দারোয়ানগুলোকে কাবু করে ব্যাঙ্ক থেকে
অনেক টাকা তুলে নিয়ে যায়। ব্যাঙ্কের ক্যামেরাতে সমস্ত ঘটনাটাই সবিস্তারে ধরা পড়েছিল। সারা বিশ্বের কৌতূহলী
দর্শকের বিস্ময়বিস্ফারিত চোখের সামনে দেখা গেল আমেরিকার আদরের দুলালি প্যাটি হার্স্ট
স্বয়ং বন্দুক উঁচিয়ে রেখেছেন। এর পরের দিনই সেই টেপকৃত স্বীকারোক্তি পুলিশের দপ্তরে এসে
হাজির হয়। সেই টেপে প্যাটি নিজেকে প্যাটি হার্স্ট না বলে নতুন নামে ভূষিত করেঃ তানিয়া। এটি তার বিপ্লবী
নাম! সে চে গুয়েভারার ভক্ত। ইত্যাদি ইত্যাদি। সমস্ত আমেরিকা হতভম্ব। হতবাক।
এফ বি এ স্বভাবতই এই দলটির পেছনে লেগে
ছিলেন বহ আগে থেকেই। প্যাটি হার্স্টের এ-কাণ্ডটির পর তাদের তল্লাশীর মাত্রা অনেকগুণ
বেড়ে যায়, এই যা। শেষ পর্যন্ত একটা বাড়িতে পুরো দলটাকেই ঘেরাও করা হয়। দুপক্ষে তখন লেগে
যায় তুমুল গেরিলা যুদ্ধের মত গোলাগুলি বর্ষণ। তাতে প্রায় সবগুলো
বিপ্লবীই হতাহত হয়, বড়কর্তা ডিফ্রিজসহ। কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয় প্যাটি ও তার এক
সহকর্মী। অনেকদিন পর্যন্তই ওরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। অবশেষে সংসারের
সব পালার মত তাদের পালানোর পালাও সাঙ্গ হয়ে যায়, ’৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। হাতকড়া পরানো অবস্থায়
যুক্তরাষ্ট্রের বীরপ্রতিম ব্যক্তি র্যাণ্ডলফ হার্স্টের নাতনি প্যাটি হার্স্ট সান ফ্রান্সিস্কোর
বিচারকের সামনে হাজির হয়। ওর কৌঁসুলী মগজ-ধোলাই, ভয়জনিত সাময়িক মানসিক বৈকল্য ইত্যাদি
নানারকমের অজুহাত দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছিলেন, কাজ হয়নি তাতে। এদেশে সাধারণত
খাতিরে খালাশ পাওয়ার নজির খুব কম। অপরাধ অপরাধই। তার কোন ছোট বড় কিছু নেই----বিচার অন্ধ, যা হওয়া উচিত একটা
সভ্য দেশে। প্যাটি হার্স্ট সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। সেই সাতবছরের দুবছর
জেল খাটার পর ’৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাকে বেকসুর ক্ষমা করে দেন। আজকে সেই চাঞ্চল্যসৃষ্টিকারী
বিপ্লবী মেয়ে প্যাটি হার্স্ট ক্যাম্বেল নামে সমাজের মান্যগণ্য সম্ভ্রান্ত মহলে সুপ্রতিষ্ঠিত।
পাহাড়ী পথ দিয়ে এঁকেবেঁকে যখন গাড়ি
এসে পৌঁছালো হার্স্ট ক্যাসেলের টুরিস্ট সেন্টারে বেলা তখন প্রায় ১১ টা। বাথরুম সেরে একটু
সাফসুফো হয়ে আমরা সরকারি বাসে করে রওয়ানা হলাম আসল জায়গার দিকে----পর্বতচূড়ায় অবস্থিত
শ্বেতপাথরের মূর্তির মত দেখতে দূর থেকে, র্যাণ্ডলফ হার্স্টের স্বপ্নসৌধ হার্স্ট ক্যাসেল। টুরিস্ট সেন্টারের
দুরবীণ দিয়ে মনে হচ্ছিল, বাহ বেশ কাছেই তো, আবার খালি চোখে সেই একই জায়গাকে দেখাচ্ছিল
নীলাকাশের এক কোণেতে গালে হাত দিয়ে বসে-থাকা কারো আদরিনী কন্যার মত।
বাসে করে যাত্রী পরিবহণের সুযোগ ছিল
বলে রক্ষে----নইলে ১,৫০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে ওঠার সখ আর যার’ই থাক আমার
ছিল না, বয়সে তরুণ হলেও থাকত না। বড়লোকের সখের বাড়ি দেখার জন্যে এত কষ্ট করতে আমি রাজি নই। তবে এটা মানতেই
হয় যে ভদ্রলোকের কেবল অঢেল টাকাই ছিল না, দূরদৃষ্টিও ছিল প্রচুর। সাথে সাথে বিস্তর
শৈল্পিক সৌন্দর্যবোধ, উঁচুমানের রুচি, কোনকিছুরই অভাব ছিল না। তার স্বাক্ষর প্রতিটি
কাজের মধ্যে, এমনকি রাস্তাগুলো যেভাবে আঁকাবাঁকা পথে সেই উঁচু প্রাসাদের দিকে উঠে গেছে
সেই পরিকল্পনার মাঝেও। সর্পিল পথ ধরে ধীরে, অতি ধীরে, একরকম কাব্যিক আবেশের মধ্য
দিয়ে যেতে যেতে, অবশেষে যখন ওই স্বপ্নসৌধের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছুলাম তখন মধ্যাহ্নের
সূর্য আমাদের অভিবাদন জানিয়ে স্মিতহাস্যে দাঁড়ালো সেখানে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে
উঠতে শুরু করলাম আমরা। এতগুলো সিঁড়ি ভাঙ্গতে পারব আমি আশি বছরের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত
পায়ের ওপর সে-ভরসা আসলে ছিল না আমার। শেষ সিঁড়িটা পার হয়ে যখন পা বাড়ালাম মূল ভবনের চত্বরে তখন
মনে মনে একটা ছোট্ট থ্যাঙ্ক-ইউ জানিয়ে দিলাম আমার ঘুণে-ধরা হার্ট মহাশয়কে। বেচারির ওপর অনেক
অত্যাচার হয়ে গেল।
চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এক টুর গাইড
আমাদের দলটাকে একঘর থেকে আরেকঘরে অতীব দক্ষতার সাথে পরিচালিত করে নিচ্ছিলেন। কোন জিনিসটার কি
ইতিহাস, ওতে র্যাণ্ডলফ মশাইর অগাধ কল্পনাশক্তির কতখানি ছাপ, সবগুলো গল্পই উনি প্রায়
তোতাপাপখির মতই অনর্গল বলে যেতে লাগলেন। কোন্ আসবাবটি আনা হয়েছে কোন্ সালে, স্পেন থেকে না পর্তুগাল
থেকে, কোন্ ছবিটা কার আঁকা, কার সংগ্রহ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল ওটা, সব খবরই যেন তাঁর
নখদর্পণে। আয়তনে হয়ত পৃথিবীর বৃহত্তম অট্টালিকাগুলোর সঙ্গে তুলনায় দাঁড়াবে না, কিন্তু
এর শিল্পসম্ভারে, আভ্যন্তরীণ শানশওকতে, আলঙ্করিকতায়, সম্ভবত ইংল্যাণ্ডের বাকিংহাম প্যালেসের
সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। ভদ্রলোক সৌখিন ছিলেন বটে। ভবনটির একেবারে
ওপর তলায় অবস্থিত সেই নেপচুন দিঘি----বিশাল আকারের নীল জলে ভরা টলটলে সুইমিং পুল। এর একদিকে মহারাজ
নেপচুনের শ্বেতশুভ্র মূর্তিকে ঘিরে আছেন দুজন রূপসী সাঁতারসঙ্গীর মূর্তি। উল্টোদিকে রোমান
সম্রাটদের মত করে তৈরি করা একটি বিশ্রামাগার। বর্ণে গন্ধে রূপে
জায়গাটিতে প্রাচীন রোমানদেরই পায়ের শব্দ যেন জীবন্ত হয়ে আছে। (নেপচুন কেবল
একটি গ্রহের নামই নয়, রোমানদের সমুদ্র দেবতারও নাম)। রোমানরা জানতেন
কিভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। গোড়াতে র্যাণ্ডলফ হার্স্টসাহেব পুরো এলাকাটির নামকরণ করেছিলেন
‘
The Enchanted Hill’ ( বিমোহিত পর্বত)। যদিও শব্দটা ঠিক ইংরেজিতে ছিল না, ছিল স্প্যানিশ ভাষায় (La Cuesta
Encantada)। অবশ্য বেশির ভাগ সময় তিনি শুধু ‘র্যাঞ্চ’ ই বলতেন জায়গাটিকে। তার সঙ্গত কারণও
ছিল। এই যে বিশাল এলাকাজুড়ে সম্পত্তি তাঁর যেখানে জনবসতি বলতে গেলে একেবারেই ছিল না
কিছু, কেবল তাঁরই নিযুক্ত কর্মচারীরা ছাড়া, সেখানে বেশ কয়েক হাজার গরু পালন করতেন তিনি----পুরোদমে
একটা ক্যাটেল-র্যাঞ্চ যাকে বলে। এবং এইসব কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গের খাওয়াপরার জন্যে
প্রয়োজনীয় সব খাদ্যবস্তু এই র্যাঞ্চের উর্বর জমিতেই উৎপন্ন হত, এবং এখনও হয়। এমন কোনও স্থানীয় ফলমূল আর সবজি নেই যা সেখানে উৎপন্ন হয়না, নেই এমন কোনও মাছ বা অন্যান্য জলজ খাদ্য যা সেখানে
সুলভ নয়। অর্থাৎ এই আড়াই লক্ষ একর জমির
পুরোটাই একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামের মত, যেখানে শুধু একটা পরিবারই থাকে----হার্স্ট
র্যাঞ্চ বা ক্যাসেলের সংগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীবৃন্দ।
সোফিয়া ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে----অতএব
এগুলো সে ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে, হয়তবা দেখেও এসেছে। সে তুলনায় আমি
একেবারেই মূর্খ। থাকি ক্যানাডায়, জীবনে কোনও র্যাঞ্চের ধারেকাছে যাইনি, র্যাণ্ডলফ হার্স্টের
নাম হয়ত আদৌ জানতাম না যদি তাঁর আদরের নাতনি ওই চাঞ্চল্যকর কাণ্ডটি না করে বসতেন সত্তর
দশকে। আমি কেমন করে সোফিয়ার ক্লু আঁচ করতে পারব বলুন।
হার্স্ট ক্যাসেলের আরেকটা বড় আকর্ষণ
ছিল-----বিরাট এক চিড়িয়াখানা। শীতকাল ছিল বলে সেটা ভাল করে দেখা সম্ভব নয় ডিসেম্বরের
শেষ সপ্তাহে, তার ওপর আমাদের সময়ের অভাব। কেবল একটি জিনিসই না-দেখে-যাওয়া-যাবেনা’র তালিকায় ছিল বলে অল্পক্ষণের জন্যে গেলাম সেখানে।
ভাগ্যিস গিয়েছিলাম। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
সময়টা ছিল সীলহস্তীর সন্তানপ্রসবের ঋতু। সীলহস্তী আমি ছায়াছবিতে দেখেছি, বইপত্রেও দেখেছি
বিস্তর, কিন্তু নিজের চোখে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি কখনো। এবার হল, সোফিয়ার কল্যানে।
এটিও আসলে হার্স্ট সাহেবেরই কীর্তি। ক্যাসেল থেকে রাস্তার ঠিক বিপরীত প্রশান্ত মহাসাগরের
উপকূলে একটা সুরক্ষিত বীচ, হার্স্ট র্যাঞ্চেরই অন্তর্গত। সেখানে দলে দলে, অসংখ্য,
সীলহস্তী এসে রোদ পোহায়, বিশ্রাম নেয়, পোয়াতি মায়েরা আসে বাচ্চা প্রসব করতে। ভাগ্য
ভাল হলে চোখের সামনে দেখা যায় বাচ্চা বেরিয়ে আসছে মায়ের পেট থেকে। আমরা ঠিক সেই মুহুর্তে
গিয়ে পৌঁছুতে পারিনি, কিন্তু আমরা দেখেছি, সদ্যজাত শিশু তার মায়ের স্তন থেকে দুধ চুষে
খাচ্ছে। গাইডকে জিজ্ঞেস করে জানলাম শিশুটির জন্ম এর আগের দিন। বিশাল বিশাল শরীর এদের। দেখতে দারুণ মনোহর হয়ত বলা যাবে না----রীতিমত কুৎসিৎ বললেও খুব অন্যায় হবে না হয়ত। স্থলহস্তীর সঙ্গে খুব একটা
মিল নেই-----সামান্য একটু গনেশ আকারের শূঁড় ব্যতিরেকে। যাই হোক একটা অভিজ্ঞতা হল। গল্প
করা যাবে কোথাও।
দেখেটেখে যখন ফিরে এলাম টুরিস্ট সেন্টারে
তখন বেলা পড়ে গেছে। সন্ধ্যার দীর্ঘ ছায়া উপত্যকার গায়ে গায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে ছাইভস্ম
কিছু মুখে দিয়ে আমাদের গাড়ি আবার পথের ওপর। কোথায় যাচ্ছি এবার? না, বলব না। ওই একই জবাব আমার
রহস্যময়ী পুত্রবধূর। ঠিক আছে। চল যাই। তোমরা যদি পাহাড়ে পাহাড়ে হারিয়ে যেতে রাজি থাক রাতের অন্ধকারে,
আমি তাতে দ্বিমত করব কেন। হারাতে তো আমারও ভাল লাগে, বয়স যতই হোক।
রীতিমত ঘুটঘুটে অন্ধকার তখন। উঠতি-পড়তি পাহাড়ী
পথ। তার ওপর নামলো বৃষ্টি। অচেনা রাস্তা। বৌমা তবুও বলতে নারাজ কোথায় যাচ্ছি। বললেই বা কি। আমি তো এ-অঞ্চলের
কিছুই চিনিনা। এদিকে কিঞ্চিৎ ঘুম ঘুমও লাগছিল বটে,
অস্বীকার করব না। আমি সামনের সীটে। গাড়ির চালক তখন বাবু। আগের বার ছিল সোফিয়া। আমি নিশ্চিন্তে
চোখ বুঁজে রইলাম। ঘুম যদি আসে, আসুক। জাগবার সময় হলে জাগব। কি আসে যায় তাতে।
জানি না কতক্ষণ চোখ বুঁজে ছিলাম। বিছানা ছাড়া সচরাচর
আমি ঘুমুতে পারিনা----প্লেনে নয়, ঘরে নয়, গাড়িতেও নয়। তন্দ্রা আসে, কুয়াসার
মত করে একটা মিহিন অবসাদ আসে, কিন্তু ঘুম আসে না। সেই অবসাদের ঘোর
থেকে বেরিয়ে চোখ মেলে দেখি সেই একই অন্ধকার, একই ঝির ঝির বৃষ্টি, একই পাহাড় বেয়ে নিরুদ্দেশের
পথে ছোটা। আর কতক্ষণ রে মা? এবার একটু করুণা হয় মেয়ের। বেশি নয় আব্বু,
আর ঘন্টাখানেকের মাঝেই পৌঁছে যাব। ঘন্টাখানেক অবশ্য টেনেটুনে পৌণে দুঘন্টাতে দাঁড়িয়ে গেল। তবুও পথের শেষপ্রান্তে
অবশেষে পৌঁছেই গেলাম। একটা জমকালো হোটেল----ভয়ঙ্কর এক নিরালা জায়গায়, যেখানে দিনের
বেলায় কি থাকে জানি না, রাতের বেলায় মনে হচ্ছিল বন্য জন্তু ছাড়া আর কারো পক্ষে থাকা
সম্ভব নয়। শুধু হোটেলের অভ্যন্তরকে বাদ দিয়ে। সেখানে সবকিছুই টিপটপ। ভ্যালে পার্কিং,
সারি সারি উর্দিধর পরিচারক। কেবল এস্কেলেটার আর এলেভেটার ব্যতিরেকে। বোঝা গেল এটা একটা
সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রমোদালয়, যাকে বলে রিসর্ট হোটেল। একটা ভবন নয়, ভবনগুচ্ছ----নাম
দিয়েছে ‘ভিলা’। এক থেকে দশ নম্বর ভিলা। এবং তারা একই লেভেলে নয়। যেন একই পাহাড়ের
গায়ে খোদাই করে বসানো হয়েছে কতগুল বাড়ি, স্তরে স্তরে। আমাদের ভিলাটি
ছিল চার নম্বর। খাবার ঘর থেকে সেখানে যেতে ঢালু পথ, গড়িয়ে গড়িয়ে অনায়াসে যাওয়া যায়, কিন্তু
ওঠার সময়ই কোমর আর হাঁটুর ওপর দারুণ চাপ। হার্টের তো কথাই নেই। যে কোনসময় বাই
বাই বলে ছুট দিতে পারত। দেয়নি, সেটাই অবাক।
রুমে মালপত্র রেখে খেতে যাবার সময়
বাইরে চাপ চাপ অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখিনি। কিন্তু সকালবেলা যখন নাস্তা খেতে যাই সেখানে তখন সারা বিশ্ব
উজাড় করে আমার চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো শান্ত, সুশীল প্রশান্ত মহাসাগর। রেস্টুরেন্টের
জানালা দিয়ে নিচে তাকালেই দেখতে পাই বিরাট জলাশয় সূর্যের অপেক্ষায় কাজল চোখে চেয়ে আছে। সে এক অসাধারণ
অনুভূতি। বুঝলাম পুত্রবধূ কেন আমাকে নিয়ে গেছে সেখানে। ও হ্যাঁ, আসল কথাটা
তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সন্ধ্যাবেলা ঘরে ঢোকার পর ও আমাকে কোণার একটা ছোট টেবিলের
কাছে নিয়ে যায়। সেখানে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটা খামে-ঢাকা কার্ড। ওটা আমার হাতে
দিয়ে সোফিয়া বললঃ আব্বু, এটা খুলে দেখুন। রহস্যটা বেশ জমে উঠল। খুললাম। ওমা! সেকি। আমাকেই লক্ষ করে
স্বাগতবাণী----শুভ জন্মদিন ডক্টর রহমান। চালাকিটা এবার পুরোপুরি খোলসা হল। বাবু-সোফিয়া আমার
কোন অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে পারে নি। এটা অপারগতা পূরণেরই বিলম্বিত প্রয়াস। এবং এতটা নাটকীয়তার
সাথে। মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়, বলুন?
হোটেলটি এতই বড়লোকী কায়দার যে সকালবেলা
ঘরে ঘরে পত্রিকা দিয়ে যাওয়া হয়----রীতিমত নিউ ইয়র্ক টাইমস বা লস এঞ্জেলেস টাইমস। ক্যানাডা থেকে
বেরিয়েছি দুসপ্তাহের ওপর। পত্রিকা দেখিনি কোথাও। আমার ছেলেরা পত্রিকার
ধার ধারে না। এযুগের ছেলেমেয়েরা মনে করে খবরের কাগজ পড়ে কেবল আশি বছরের বুড়োরা, যারা কম্পিউটারে
আঙ্গুল বসাতে ভয় পায়। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যা, তা বলছি না আমি। সেকারণেই তো দশবারো
বছর আগেই আমি লিখেছিলাম একজায়গায় যে পত্রিকা বলে কোন জিনিস থাকবে না একসময়, হয়ত কাগজের
ব্যবহারও সীমাবদ্ধ থাকবে টয়লেট আর হার্ড কপিতে। যাই হোক হোটেলের
দরজাতে খবরের কাগজ পেয়ে তো আমি আনন্দে আত্মহারা। আত্মহারা শুধু
পত্রিকার জন্যে বয়, ওতে আমেরিকার বাইরে যে ১৯৫ টা দেশ আছে পৃথিবীতে তাদের সম্বন্ধেও
দুচারটে সংবাদ জানা যাবে। আমেরিকার টেলিভিশনে খবর মানে আমেরিকারই খবর----এর বাইরে যে
বৃহত্তর একটা পৃথিবী আছে তা গোণার মধ্যে পড়ে না। অতএব খবরের যোগ্য
নয়, যদিনা তাতে কোনও আমেরিকান সরকারি স্বার্থ বা ব্যক্তিগত স্বার্থের ব্যাপার থাকে----যেমন
আফগানিস্তান বা পাকিস্তান। তাই নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাতায় যখন মালি নামক একটি আফ্রিকান
দেশের খবর পেলাম তখন আমার খুশি দেখে কে। যদিও আমার স্বদেশের খবর পেলে হয়ত একটু বেশি খুশি হতাম, সেটা
বাংলাদেশই হোক আর ক্যানাডাই হোক। উভয় দেশের ব্যাপারে আমাদের এই আঙ্কেল স্যাম সমান উদাসীন। বাংলাদেশের খবর
না পাওয়া একবারে খারাপ তা অবশ্য নয়। বাংলাদেশের খবর না থাকাই আমি মনে করি ভাল খবর----অর্থাৎ অসম্ভব গুরুতর কিছু ঘটেনি সেখানে। রক্ষে! তখন স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলি।
রেস্টুরেন্টে নাস্তা শেষ করে, প্রশান্ত
মহাসাগরের কাছ থেকে আপাতত বিদায় নিয়ে আমি গোটা জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখব বলে সিদ্ধান্ত
নিলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় আটটা। ছেলে-বৌমা বা ওদের ছেলেমেয়েদের আরো দুঘন্টা বাকি ‘সকাল’ হতে। সুতরাং একা একা
ঘুরে বেড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ। অসাধারণ সুন্দর পরিবেশ, নিঃসন্দেহে। একদিকে মহাসাগরের
ঢেউগুলো উপকূলের বালিতে এসে আছড়ে পরছে, আরেকদিকে সারি সারি ওক গাছ কালের সাক্ষী হয়ে
স্থির দাঁড়ানো পথের দুধারে। সেখানে নানারঙ্গের পাখিদের আনাগোনা। একটি পাখির পুরো
শরীরটা গাঢ় নীল, কেবল পেটের নিচেই একটু সাদা পালক----যেন বেবি পাউডার লাগিয়েছে সেখানে। কি নাম পাখিটার?
ব্লুযে নাতো? নাকি ব্লুবার্ড? কি হবে নাম দিয়ে? রূপে যার জুড়ি নেই তার গায়ে নাম লিখার
কি প্রয়োজন?
হোটেল কর্তৃপক্ষ কায়দা করে ছোট্ট একটা
গ্রাম্য পথ তৈরি করে রেখেছেন অতিথিদের প্রমোদ বিহারের জন্য। সেখানে ঘন সবুজ
ঘাস। এখানে ওখানে বেতের চেয়ার পাতা। উঁচু জায়গা বলে কাঠের বেড়া দেওয়া, যাতে ছোট বাচ্চারা গড়িয়ে
পড়ে না যায়। সে এক অবিশ্বাস্যরকম প্রশান্তিময় পরিবেশ। ওপরে গাঢ় নীল আকাশ,
নিচে সীসার পাতের মত সীমাহীন সমুদ্র----দূর দিগন্তে তাদের নিবিড় আলিঙ্গন আমার শিরায়
শিরায় শিস দিয়ে যায়। আমি সেই বেড়ার কাঠের ওপর কনুই পেতে দাঁড়িয়ে থাকি মহাবিশ্বের
এক তুচ্ছতম বিন্দুর আকার নিয়ে। নিচে, অনেক নিচে সাগর তার ফেনার প্রসাদ ছড়িয়ে যায় বালুর তটে। মন চায় জুতো খুলে
সেই ভেজা বালুর মধ্যে পা ডুবিয়ে রাখি।
কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে জানিনা। সম্বিত হল যখন
পেছনে কোনও পরিচিত হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম----আমার ছেলে। বাপকে খুঁজতে এসেছে। ওরা নাস্তা খেয়ে
নিয়েছে। শহর দেখতে যাবে। কতদূর রে বাবা? বেশি নয়, মিনিট পনেরোর বেশি লাগবে না। মাইলবিশেক, বড়জোর। ঠিক আছে, চল। শহরের নামটাও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করিনি। নাম জানা যায় যে-কোন
সময়।
পুরো দুটো ঘন্টা আমরা শহরের এক মাথা
থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত উদ্দেশ্যহীনভাবে, অনর্থক, অকারণে, ঘুরে বেড়ালাম। গাড়ি থাকলে যা
হয়----কারণ ছাড়াই মানুষ কারণ সৃষ্টি করে নেয়। শহরটির নাম সান্টা
বারবারা। শহরটি দেখতে ছোটখাটো ছিমছাম, সেতুলনায় তার ইতিহাসটি অনেক লম্বা। ১৩,০০০ বছর
আগে থেকেই এখানে থাকত কতগুলো ইণ্ডিয়ান ট্রাইব। তারপর ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু হয় ইউরোপিয়ান
সাম্রাজ্যবাদীদের আনাগোনা, একের পর এক। প্রথমে পর্তুগীজ, তারপর স্প্যানিশ, শেষে আমারিকান।
(শহরের নামটি দেওয়া হয় ১৬০২ সালে, ক্যাথলিকদের প্রিয় সেইন্ট বারবারার সম্মানার্থে)
স্প্যানিশ অর্থাৎ মেক্সিকানদের রাজত্ব টেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত, যখন তারা হেরে যায়
আমেরিকানদের কাছে, ঐতিহাসিক মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে। এর পর নানা যুগে নানা ভাবে
শহরটির বহুবিচিত্র বিবর্তন ঘটে। অবশেষে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এর শেষ মূর্তিটি অনেকটা
স্থায়ীভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে----- বড়লোকের লীলাভূমি। পয়সাওয়ালাদের প্রমোদাগার-----ইংরেজিতে
যাকে বলে রিসর্ট টাউন। বাবু-সোফিয়া আমাকে সান্টা বারবারার একটা নৌঘাট দেখতে নিয়ে গিয়েছিল।
সেখানে দেখলাম বড়লোক কাকে বলে। অন্তত কয়েক হাজার সমুদ্রগামী বজরা নৌকা, ইয়াট, সেখানে
পার্ক করা। সেই ঘাটের ওপর টুরিস্টদের সুবিধার জন্য গাড়ি পার্কের সুব্যবস্থা। রেস্টুরেন্ট।
ফিস এণ্ড চিপ্স। মৎসশিকারীদের জন্য প্রয়োজনীয়
সব সরঞ্জাম----কি নেই সেখানে? সবই ওই ভাসমান ভেলার ওপর। মানে এলাহী কাণ্ড। দূর থেকে
দাঁড়িয়ে গোটা শহরটারই একটা মোটামুটি ছবি আন্দাজ করা গেল। পুরো একটা পাহাড়, সমুদ্রের
মুখোমুখি, কেটে কেটে খোদাই করে করে, পাখির নীড়ের মত বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, স্তরে স্তরে,
ওপর থেকে আরো ওপরে। প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা সেই উচ্চতার জন্যে---কে কার চেয়ে কত ওপরে বাড়ি
করতে পারে সেই অন্ধ, উন্মাদ, প্রতিযোগিতারই এক নগ্ন চিত্র ফুটে উঠতে দেখলাম সেখানে।
সেই একই ছবি আমি দেখেছি স্পেনে, ফ্রান্সে, চট্টগ্রামে, মুম্বাইতে। কতগুলো মৌলিক জায়গাতে
পৃথিবীর সব দেশের মানুষই আসলে এক।
সবশেষে দেখা হল সান্টা বারাবারা বিশ্ববিদ্যালয়।
সেটাও বিশাল, বিপুল। অন্তত ওপরের খোলশটা। ভেতরের খবর তেমন জানা নয় আমার। তবে ক্যাম্পাস
হিসেবে আকর্ষণীয়, নিঃসন্দেহে। উঁচু পাহাড়ের ওপর সমাসীন এক ধ্যানমন্দির যেন। চারদিকে
সারি সারি গাছ, বৃক্ষলতায় ছাওয়া এক আদর্শ বিদ্যানিকেতন। এর সঙ্গে যখন মেলানোর চেষ্টা
করি ঢাকার গোটা বিশেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে তখন একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস চলে আসে আপনা
থেকেই।
পরের দিন দুপুরবেলা আমরা ফিরতি পথে
রওয়ানা হয়ে গেলাম। চোখবাঁধা চোখের দেখা সাঙ্গ হয়ে গেল। দুটো দিন যেন স্বপ্নের ঘোর।
বাস্তবের মাঝে অবাস্তবকে পাওয়া কাকে বলে তার কিছুটা আভাস পাওয়া গেল। ধন্যবাদ সোফিয়া।
ফ্রিমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া,
২ জানুয়ারি, ‘১৩
মুক্তিসন ৪২
মীজান রহমান
Subscribe to:
Posts (Atom)