ফড়িং-ধরা বিকেল
নূরুন্ নাহার
ফড়িং-ধরা বিকেল
:: নূরুন্ নাহার
স্বত্ব: লেখক ও প্রকাশক
প্রকাশক: ‘Vision Creates Value’
প্রচ্ছদ: মানযারে শামীম
প্রকাশকাল:
২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৪।
Forring-Dhora Bikel :: Nurun Nahar
Composition & Illustration: ‘Vision Creates Value’
Publisher: ‘Vision Creates Value’
Proofreading: Shafiqul Islam Bahar
Proofreading: Shafiqul Islam Bahar
Audio Illustration and Recitation: Shafiqul Islam Bahar
Copy Right: Author & Publisher
e-Book Composition & Illustration: ‘Vision Creates Value’ and 'weDevs'
Pictures Credit: Facebook, Internet, Travel Trail Tales Album, Shafiul Islam, Shakila Haseen, Probir Saha, Biddyut Saha, Tapashi, Bismita, Kangkhita, Joy, Shuvo, ....
Pictures Credit: Facebook, Internet, Travel Trail Tales Album, Shafiul Islam, Shakila Haseen, Probir Saha, Biddyut Saha, Tapashi, Bismita, Kangkhita, Joy, Shuvo, ....
2014 February 04.
Courtesy of ‘Vision Creates Value’
ISBN:
উৎসর্গ: পাঠককে।
স্মৃতিরা সবসময়
পেছনের হয়। সেই পেছনের স্মৃতিগুলো সামনে এনে পাঠকের সাথে একাত্মতাই আমার এ-লেখার উদ্দেশ্য।
আমার কথা
আমি সবার ছোট-বড়
কষ্টের সারাবেলার মানসিক সাথি।
নূরুন্ নাহার
“ওড়ার ইচ্ছে জাগলে
মনে
মনের পাখায় হও না
ফড়িং।”
::
সূচি
উৎসর্গ
আমার কথা
যাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ
মনের ভেতর মনের কথা - ১
মনের ভেতর মনের কথা - ২
মনের ভেতর মনের কথা - ২
মনের ভেতর মনের কথা - ৩
মনের ভেতর মনের কথা - ৪
প্রকাশকের কথা
মনের ভেতর মনের কথা - ৪
প্রকাশকের কথা
১. ফড়িং-ধরা
বিকেল
২. ফিরে যাই
আবার স্মৃতির ভাটায়
৩. আবিষ্কারের খেলা
৪. পাল্টে যাওয়ার খেলা
৫. রেলের গার্ড সাহেবকে সালাম
৬. নিরাপত্তার ছাউনি
৭. প্রথম শূন্যতা
৮. বেনাপোলের একটা নিদারুণ মন-ছোঁয়া ঘটনা
৯. তালগাছ
১০. কাঁটাতারের বেড়া
১১. পুকুরে সাঁতার
১২. আচার-খাওয়া
দুপুর
১৩. রজনীগন্ধার সাথে প্রথম পরিচয়
১৪. ছোছরা পাতা
১৫. ভাঙা চুড়ি
১৬. রেডিও শোনা
১৭. ভয়ঙ্কর সেদিন
১৮. বিহারী পরিবার
১৯. বিহারী পরিবারের দুর্দিনে
২০. খেলার সাথী ফরহাদের সাথে
২১. পাওয়ার হাউস
২২. শেওড়া গাছ
২৩. যেনো দূরে কোথায়
২৪. বার বার মন ফিরে যায়
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’-এ সময় পরিক্রমায় অতীত ও বর্তমানের সুস্পষ্ট তফাৎ অত্যন্ত সুচারু ও পরিশীলিত ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন নূরুন্ নাহার। অতীতের আনন্দময় স্মৃতি যেমন তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, ঠিক তেমনি এর অম্লস্বাদও তিনি উপেক্ষা করেননি একেবারেই এবং এখানেই লেখক হিসেবে তাঁর সততা ও পরিপক্কতার পরিচয় মেলে। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি স্মৃতির প্রতিটি সিন্দুক খুলেছেন, হেঁটে বেড়িয়েছেন তাঁর স্বর্ণালী অতীতের চোরাগলিতে। "স্মৃতিরা চোখ মেলতেই দেখেছিলাম বেনাপোল বর্ডার, বাবার রচিত কাস্টম-কলোনি, রেললাইনের ধার, সবুজ মাঠ আর ফড়িং-ধরা বিকেল" - - এভাবেই তিনি শৈশবের উঠোনে চঞ্চল পদচারণা করেন। ফেলে আসা জীবনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন তিনি যেনো সেখানে রয়েছে অমৃত ভান্ডার যার সংস্পর্শে ঝেড়ে ফেলা যায় যাবতীয় পঙ্কিলতা, অপ্রাপ্তি কিংবা যন্ত্রণার আখ্যান। "জীবন ঘষা আগুনের জ্বলন্ত উত্তাপের জ্বালাপোড়া থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে টুপ করে ডুব দিতে ইচ্ছে করে বর্ষায় ডোবা-ডোবা টলটলে দিঘি ভরা-জলে" - এতোটাই সরল ও আন্তরিক তাঁর চাওয়া।
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ নূরুন্ নাহারের স্বকীয় লেখনীর অসামান্য স্মৃতিকথা।
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’-এ সময় পরিক্রমায় অতীত ও বর্তমানের সুস্পষ্ট তফাৎ অত্যন্ত সুচারু ও পরিশীলিত ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন নূরুন্ নাহার। অতীতের আনন্দময় স্মৃতি যেমন তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, ঠিক তেমনি এর অম্লস্বাদও তিনি উপেক্ষা করেননি একেবারেই এবং এখানেই লেখক হিসেবে তাঁর সততা ও পরিপক্কতার পরিচয় মেলে। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি স্মৃতির প্রতিটি সিন্দুক খুলেছেন, হেঁটে বেড়িয়েছেন তাঁর স্বর্ণালী অতীতের চোরাগলিতে। "স্মৃতিরা চোখ মেলতেই দেখেছিলাম বেনাপোল বর্ডার, বাবার রচিত কাস্টম-কলোনি, রেললাইনের ধার, সবুজ মাঠ আর ফড়িং-ধরা বিকেল" - - এভাবেই তিনি শৈশবের উঠোনে চঞ্চল পদচারণা করেন। ফেলে আসা জীবনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন তিনি যেনো সেখানে রয়েছে অমৃত ভান্ডার যার সংস্পর্শে ঝেড়ে ফেলা যায় যাবতীয় পঙ্কিলতা, অপ্রাপ্তি কিংবা যন্ত্রণার আখ্যান। "জীবন ঘষা আগুনের জ্বলন্ত উত্তাপের জ্বালাপোড়া থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে টুপ করে ডুব দিতে ইচ্ছে করে বর্ষায় ডোবা-ডোবা টলটলে দিঘি ভরা-জলে" - এতোটাই সরল ও আন্তরিক তাঁর চাওয়া।
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ নূরুন্ নাহারের স্বকীয় লেখনীর অসামান্য স্মৃতিকথা।
যাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ
১/ যে আমাকে বহু যোজন দূর থেকে, মধ্য রাতে, যখন পৃথিবীর সব প্রাণের সাড়া
থেমে যায়, সেই সাড়াহীন সময়ে মুঠো ফোনে শব্দ ছড়িয়ে আমাকে রাতের পর রাত অনেক
আন্তরিকতার ছোঁয়ায় লেখার পেছনে প্রেরণা দিয়েছে। এ প্রেরণার দায়ভার ছিল অনেক। এ
দায়ভার আমাকে ওর কাছে রীতিমত ঋণী করে তুলেছে। প্রেরণার এমন তুলনা আর কোথাও মেলে না।
কখনো
হয়তো লিখতে পারছিনে, মাথা কাজ করছে না, কাজের ব্যস্ততা অথবা
শরীরটা খুব খারাপ। সেই অবস্থায় ও হয়তো বলছে, “আপা লিখছো তো? লেখা কতদূর?" ওকে খুশি করতেই
এবং ওর প্রেরণার মূল্যায়ন করতেই বার বার বলেছি, “হ্যাঁ চেষ্টা করছি।”
ওর তুলনাহীন প্রেরণার পরিমিত ঋণ পরিশোধ করতেই
অনেক কারণে আমার থেমে যাওয়া কলম আবার হাতে ধরেছি।
শফিউল হলো
আমার ভাইদের সারিতে দ্বিতীয়।
ড: শফিউল ইসলাম
টেক্সটাইল
ইঞ্জিনিয়ার
কানাডা প্রবাসী
২/ আবার যে আমাকে তাঁর সংগ্রহ থেকে কিছু বই পড়তে দিয়ে আমার এ-লেখার মাপকাঠিতে অভিজ্ঞতা দিয়েছে। যেমন-
·
বিদিশার - শত্রুর সাথে বসবাস।
·
এ ই হোশনার। অনুবাদ -
খায়রুল আলম সবুজের-- সোফিয়া লরেন, তাঁর
আপন কথা।
·
নূরজাহান বোসের - আগুনমুখার মেয়ে।
নাহার হলো আমার মায়ের
মতো বড়বোন।
ডা: শামসুন্ নাহার
ডেন্টিস্ট
ঢাকাতে বসবাস
৩/ এরপর যে আমকে
হুমায়ুন আজাদের ‘কিশোরসমগ্র’ উপহার দিয়ে
এ-লেখার ধারাবাহিকতায় ছন্দ ফোটাতে সহযোগিতা করেছে এবং আমার এ
স্মৃতিকথার ভূমিকা লেখার জন্য তাঁর ছকে বাঁধা সময় থেকে কিছুটা সময় চুরি করে ছুটে গেছে খুব ব্যস্তময় মানুষ প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক
এবং নাট্যকার আনিসুল হকের কাছে।
বাহার হলো আমার ছোটভাই।
শফিকুল ইসলাম বাহার
বিশিষ্ট আবৃত্তিকার, উপস্থাপক, ঘোষক, সংবাদ পাঠক, গীতিকার ও
নাট্যশিল্পী - বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন
৪/ তারপর যে আমাকে তার ডাগর ডাগর চোখ কম্পিউটরের
পর্দায় রেখে ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে এ-লেখা ইমেল করে কানাডাতে
পাঠিয়ে আমাকে ধন্য করেছে।
তাপসী হলো আমাদের পরিবারের
ছোটবউ।
তাপসী মুনির
৫/ সবশেষে যিনি
আমাকে তাঁর সবরকম ব্যস্ততার ভার মাথায় রেখে এক চিলতে সময়ের সুযোগ করে নিয়ে আমার এ-লেখার ভূমিকায় কালির আঁচড় টেনেছেন, তিনি হলেন
বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক এবং নাট্যকার আনিসুল হক।
তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞতায়
একেবারে নত।
এ ছাড়াও প্রকাশনার
কাজে যাঁরা আমাকে অনাবিল সময়, শ্রম, ও উপদেশ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সবার কাছে
আমি সমানভাবে কৃতজ্ঞ।
মনের ভেতর মনের
কথা - ১
নূরুন্ নাহারের
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ একটা অপূর্ব গ্রন্থ-অপরূপ
ও অভিনব! শৈশবের স্মৃতিকথাই লিখেছেন লেখক, কিন্তু লিখেছেন নতুনতর এক আঙ্গিকে, আর মর্মস্পর্শী
ভাষায়। স্মৃতিমেদুর এই লেখা পাঠক মাত্রকেই স্পর্শ করবে, স্মৃতিকাতর করে তুলবে, নস্টালজিয়ায়
আচ্ছন্ন করবে। লেখক শৈশব কাটিয়েছেন বেনাপোলের সীমান্ত এলাকায়, পিতার চাকরির সূত্রে।
সেখানকার উদার প্রকৃতি, সবুজ মাঠ, নীল আকাশ, ঘাস, ফড়িং, লতাপাতা আর মানুষজন ভিড় করে আছে এই লেখায়। ছোট ছোট মানবিক সম্পর্ক, তার টানাপড়েন লেখার গুণে অসাধারণ
হয়ে উঠেছে। এত সুন্দর গদ্য-- চমৎকার ছোটবড় বাক্য, কোথাও কোথাও একটু কাব্যিক-- আমি
বহুদিন পড়ে উঠি নি।
নূরুন্ নাহারকে অভিবাদন এত চমৎকার একটি বই আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
~*~
আনিসুল
হক
লেখক, সাংবাদিক ও নাট্যকার
প্রথম আলো
ঢাকা, বাংলাদেশ
লেখক, সাংবাদিক ও নাট্যকার
প্রথম আলো
ঢাকা, বাংলাদেশ
মনের ভেতর মনের কথা - ২
স্মৃতিকথা কেবলমাত্র লেখককেই যে পাঠকের সামনে তুলে ধরে তা নয়, বরঞ্চ তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কাল, সংশ্লিষ্ট মানুষ, তাদের আশা ভালোবাসা হতাশা আনন্দ দুঃখ প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সাফল্য ব্যর্থতা প্রেম বিরহ পাওয়া না পাওয়া প্রভৃতির উপাখ্যান হয়ে ওঠে লেখাটি। অনেকেই মনে করে থাকেন আত্নজীবনী রচনা সাহিত্যের সহজতর শাখা যেহেতু নিজ জীবনই লিপিবদ্ধ করতে হয় এখানে। আদতে এটি কঠিনতর কেননা অতীত খুঁড়ে কেবল স্বর্ণালী নয় বরং কষ্টমেদুর ঘটনাপঞ্জীও উঠে আসে এখানে যা স্মৃতিভারাক্রান্তই করে না, কখনও কখনও চাপা পড়া কষ্টকে আলোড়িত করে। আবার অসংখ্য আনন্দময় ঘটনার সম্মিলনও বটে আত্নজীবনী। এই টক ঝাল মিষ্টি কিঞ্চিৎ তেতোর একত্রিত স্বাদ পাওয়া যায় নূরুন্ নাহারের “ফড়িং-ধরা বিকেল” শিরোনামের গ্রন্থটিতে।
বইটির ঘটনার ক্রমানুসারে অনায়াসে যেমন ঘুরে আসা যায় লেখকের দুরন্ত আনন্দঘন স্বচ্ছ শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়ার নানা ধাপ, ঠিক তেমনি প্রতীয়মান হয় নানা সম্পর্কের দোলা—কখনো সহোদরার সাথে, কখনো জনক বা জননীর, কখনো বা রক্তসম্পর্কীয় অন্য কারো সাথে; প্রকাশিত হয় সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ যতো অনুভূতি—হোক সে ফড়িং ধরা বা ভাঙা কাঁচের চুড়ি জমানো কিংবা বাবার সাথে সাঁতারের পাল্লা অথবা সমস্ত আচার সাবাড় করে মায়ের হাতে মার খাওয়া। ঠিক একই সাথে লেখক অনায়াসে তুলে ধরেন একটি রেডিও না থাকার গল্প, মায়ের মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা, বিহারী পরিবারের সর্বস্ব খোয়ানোর কাহিনী সহ স্ত্রীর প্রতি ডি.এস. সাহেবের অসৎ ও অমানবিক আচরণের গল্প। সীমান্ত এবং কাঁটাতারের বেড়ার সাথে মানুষ, দেশ ও কূটনৈতিক আদর্শও লেখক ছুঁয়ে যান আলতো ভাবে; তাই নির্দিষ্ট করে কিছু না বলেই অনেক কিছু বলা হয়ে যায়, সীমানা হয়ে ওঠে মানুষে মানুষে বিভাজনের প্রতীক। ফেলানীর প্রসঙ্গ উচ্চারণে লেখক মানবতাবিরোধী আচরণের উদাহরণ তুলে ধরেন স্বচ্ছন্দে। সব মিলিয়ে শৈশবের সারল্য আর পরিণত বয়সে অনবরত পেছনে ফেরার তুমুল আকুতির চিত্র পাওয়া যায় এ লেখায়।
গল্পের ছলে জীবনের একটি অংশের প্রতিচ্ছবি লেখক সাবলীলভাবে তুলে ধরলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতৃ্প্তি থেকে যায় কলেবরের কারণে। অনায়াসে এ লেখার দৈর্ঘ্য বাড়ানো সম্ভব এবং গদ্যের জৌলুসও। নুরুন্ নাহারকে অভিনন্দন এবং “ফড়িং-ধরা বিকেল”-এর আনন্দ অক্ষয় থাকার শুভ কামনা।
~*~
নাজনীন সীমন
শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী
সহকারী সম্পাদক, শব্দগুচ্ছ
নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা
~*~
মিসেসগা, অন্টারিও, ক্যানাডা l
শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী
সহকারী সম্পাদক, শব্দগুচ্ছ
নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা
মনের ভেতর মনের কথা - ৩
অশ্বমেধের ঘোড়ার মতন যখন আমাদের শৈশবের স্মৃতি ধেয়ে আসে, তখন তাকে থামানো যায় না। কারণ এমন কিছু মুহূর্ত দিয়ে সেই স্মৃতির গঠন যে তাকে থামানোর চেষ্টা করলেই মনের মধ্যে এতকাল যে ঘড়িটা নি:শব্দে টিক টিক করে চলছিলো, তা হঠা ৎ আগুন-লেগেছে ঘন্টার মতন বেজে ওঠে। আমরা তখন ভয় পাই এই ভেবে যে সত্যি কি অতীত পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, নি:শেষ হয়ে যাবে? এই ভাবনা থেকেই উঠে আসে বারবার ফিরে দেখা, কারণ আমাদের সারা জীবনটাইতো তেপান্তরের মাঠের রূপকথায় বাঁধা আছে; সে বেনাপোলেই হোক অথবা কোলকাতার গোলদীঘির পাড়ে।
আমার কোনো ছেলেবেলা ছিলো না। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতন আমার ছিলো মেয়েবেলা। লেখিকা নূরুন্ নাহারের ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার সেই মেয়েবেলা। আমার সেই ফেলে আসা বাড়ির পাশের নীল পুকুরের অতল থেকে পাকদন্ডীর মতন একের পর এক উঠে আসছে বলয় রেখা, চোখ থেকে সময়ের কুয়াশা সরিয়ে দিচ্ছে। দেখতে পাচ্ছি আমার সেই একান্ত আপন একলা-দুপুরের দুষ্টুমি, মায়ের বকুনি, চুরি করে তেঁতুল আচার খাওয়া, কিম্বা কাশফুলের বন ভেদ করে আমি আর ভাই ছুটছি দুরন্ত ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে।
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’-এর আলো যেন আজ অপু-দুর্গার গোধুলিবেলা। নূরুন্ নাহারের স্মৃতিচারণ যেন বহুমাত্রিক এক প্রসেনিয়াম থিয়েটার; একটা একটা করে মনের উপর থেকে পর্দা উঠে যাচ্ছে, যেন হাত বাড়ালেই আমার মেয়েবেলার কাচপোকাটা উড়ে এসে বসবে জামার আস্তিনে, যেন এখনি আমি সত্যি বেঁধে ফড়িংটাকে ঘুড়ির মতন - আমার সব ইচ্ছা অনিচ্ছা নিয়ে - আকাশে উড়াবো। কতদিন আর পুরনো ডায়েরির পাতায় শুকনো গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতন আটকে থাকবে আমাদের মেয়েবেলা? থাকবে না, থাকতে পারে না। ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ সেই কথায় মনে করিয়ে দেয় বার বার। তবুও কোথাও একটা তুষের আগুনের মতন সুপ্ত অভিমান জ্বলতে থাকে বুকের মধ্যে। আমরা তো কেউ বড় হতে চাই নি কোন দিন। তবু কেন সেই ফেলে আসা দিনগুলি ফিরে আসে না? তাই প্রয়াত কবি-সাহিত্যিক সুনীল গাঙ্গুলী'র কথায় বলতে ইচ্ছে করে... 'কেউ কথা রাখে নি, ... কেউ কথা রাখে না।'
আমার কোনো ছেলেবেলা ছিলো না। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতন আমার ছিলো মেয়েবেলা। লেখিকা নূরুন্ নাহারের ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার সেই মেয়েবেলা। আমার সেই ফেলে আসা বাড়ির পাশের নীল পুকুরের অতল থেকে পাকদন্ডীর মতন একের পর এক উঠে আসছে বলয় রেখা, চোখ থেকে সময়ের কুয়াশা সরিয়ে দিচ্ছে। দেখতে পাচ্ছি আমার সেই একান্ত আপন একলা-দুপুরের দুষ্টুমি, মায়ের বকুনি, চুরি করে তেঁতুল আচার খাওয়া, কিম্বা কাশফুলের বন ভেদ করে আমি আর ভাই ছুটছি দুরন্ত ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে।
‘ফড়িং-ধরা বিকেল’-এর আলো যেন আজ অপু-দুর্গার গোধুলিবেলা। নূরুন্ নাহারের স্মৃতিচারণ যেন বহুমাত্রিক এক প্রসেনিয়াম থিয়েটার; একটা একটা করে মনের উপর থেকে পর্দা উঠে যাচ্ছে, যেন হাত বাড়ালেই আমার মেয়েবেলার কাচপোকাটা উড়ে এসে বসবে জামার আস্তিনে, যেন এখনি আমি সত্যি বেঁধে ফড়িংটাকে ঘুড়ির মতন - আমার সব ইচ্ছা অনিচ্ছা নিয়ে - আকাশে উড়াবো। কতদিন আর পুরনো ডায়েরির পাতায় শুকনো গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতন আটকে থাকবে আমাদের মেয়েবেলা? থাকবে না, থাকতে পারে না। ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ সেই কথায় মনে করিয়ে দেয় বার বার। তবুও কোথাও একটা তুষের আগুনের মতন সুপ্ত অভিমান জ্বলতে থাকে বুকের মধ্যে। আমরা তো কেউ বড় হতে চাই নি কোন দিন। তবু কেন সেই ফেলে আসা দিনগুলি ফিরে আসে না? তাই প্রয়াত কবি-সাহিত্যিক সুনীল গাঙ্গুলী'র কথায় বলতে ইচ্ছে করে... 'কেউ কথা রাখে নি, ... কেউ কথা রাখে না।'
নূরুন্ নাহার, আপনি ভালো থাকুন, আপনার বেনাপোল ভালো থাকুক, যেন অজস্র ফড়িং আপনার সব সকাল-বিকেল-সন্ধ্যে বর্ণময় করে রাখে।
~*~
অমৃতা নীলাঞ্জনা
লেখক, বাচিক শিল্পী ও শিক্ষক
দিল্লি, ভারত
মনের ভেতর মনের কথা - ৪
মনের ভেতর মনের কথা - ৪
জীবন বহমানI অনেকটা নদীর মতl পার্থক্য এতটুকুই, মানুষের জীবন-নদীর ধারা শুধু বয়েই চলেনা, নিজের গতিপথের দিকে পিছন ফিরে তাকাতেও পারেl একান্ত নিজস্ব মায়াময় ভাষাশৈলীতে 'ফড়িং-ধরা বিকেলে' নূরুন্ নাহার লিখেছেন তাঁর শৈশবের কথাl আবেগদীপ্ত অথচ বিশ্বস্ত লেখনীতে তাঁর এই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নি:সন্দেহে প্রতিটি মধ্যবিত্ত বাঙালী পাঠকের মনপ্রাণকে করে তুলবে স্মৃতিজাগানিয়াl জীবন-নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নিজের যাপিত জীবনকে অনুভব করা এবং সেই অনুভবের রেশ পাঠকমনে ছড়িয়ে দিতে লেখক নূরুন্ নাহার বোধকরি পুরোপুরি সফলl
নূরুন্ নাহার-কে অভিনন্দন!
~*~
ইলোরা আমিন
অধ্যাপক, গণিত
প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম, www.purboposhchim.ca
ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, দেশী টেলিভিশন, www.deshitv.com
অধ্যাপক, গণিত
প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম, www.purboposhchim.ca
ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, দেশী টেলিভিশন, www.deshitv.com
প্রকাশকের কথা
লেখকের স্মৃতিচারণে জীবনের ছন্দ খুঁজে পাই। প্রায় চারযুগ
আগে আমাদের সময়, শৈশবের জীবন-বোধ ও মায়া-মমতা কেমন ছিলো - পাঠক খুঁজে পাবেন খুব
সহজ-সরল, অল্প-স্বল্প গল্পে। ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ প্রথম প্রকাশ পেয়েছে ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ - ‘Vision Creates Value’ ব্লগে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি অচিরেই ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’ ই-বুক, বই, ও অডিও-বই
আকারে প্রকাশ পাবে। আর অণুগল্পগুলো চলবে লেখকের স্মৃতিচারণে -
লেখকের শৈশব, কৈশর ও জীবনের সীমানা পেরিয়ে। আমাদের অগ্রযাত্রায় সাথে থাকুন।
অপার কৃতজ্ঞতা বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও নাট্যকার আনিসুল হক-কে। যিনি সময় করে বইটি
পড়েছেন ও গল্পগুলোর মূল্যায়ন করেছেন। অনুপম শুভেচ্ছা বিশিষ্ট শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নাজনীন সীমন, অমৃতা নীলাঞ্জনা ও ইলোরা আমিন-কে। আপানদের বিশেষ বিশ্লেষণ, সমালোচনা ও পর্যালোচনা আশা করি লেখককে অনাবিল প্রেরণা যোগাবে।
প্রকৃতির সাথে লেখকের নিবিড় প্রেম। মধ্যবিত্ত জীবনের মূল্যবোধ ও শৈশবের আনন্দ-বেদনা
লেখক অপূর্ব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পগুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি ছবি
সংযোজিত হলো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
অণুগল্পগুলো উৎসর্গ করেছি যাঁরা আমাদের আলোর পথ-যাত্রী।
লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রিয় পাঠককে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি লেখকের অল্প-স্বল্প গল্পগুলো অপার আনন্দ
দেবে। আপনাদের স্মৃতিতে দোলা দেবে - আনন্দ-বেদনার ঢেউ তুলবে কোনো এক ‘ফড়িং-ধরা বিকেল’-এ …!
১. ফড়িং-ধরা বিকেল (স্মৃতির মেলা থেকে)
[উৎসর্গ: ইলা মিত্র, প্রীতিলতা ও সূর্যসেন - যাঁদের দেশপ্রেম এখনো সাহস
ও প্রেরণা যোগায়]
সেই কবে শৈশবে বাবার হাত ধরে নাচতে-নাচতে, গাইতে-গাইতে পাশাপাশি বেড়ে ওঠা আমরা
দু’বোন এসেছিলাম বেনাপোল বর্ডারে।
বাবা ছিলেন সৎ কর্তব্যপরায়ণ একজন কাস্টম-অফিসার। ত্যাগী ছিলেন
কিনা জানি নে, তবে ভোগী ছিলেন না মোটেও।
বাবা খুব অল্পতেই তৃপ্ত হতেন, তাই চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্ব তাঁকে অনেকখানি ছাড় দিয়েছিলো
বুঝি।
কাস্টম-কলোনির পুরো পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো বাবার উপরে। বাবার
পরিচালনায় কাস্টম-কলোনির পরিবেশ ছিলো মমতায় বাঁধা। আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াত বাবার সুনাম।
আমরা ছিলাম কলোনির দশ নম্বর বাসায়। বর্ণমালার সাথে কথা হয়েছিল বুঝি,
বেনাপোল কাস্টম-কলোনি স্কুলেই। বর্ণমালার সাথিরা ছিলো মন ছুঁয়ে। কলোনি জুড়ে সবার
সাথে ছিলো আত্মার সম্পর্ক।
আমরা সারাদিন কলোনির মাঠে-ঘাটে হৈ-হৈ করে ঘুরে বেড়াতাম। দুপুর গড়িয়ে গেলেই প্রজাপতি রঙের
জামা পরে কলোনির সাথিদের সাথে দল বেঁধে হারিয়ে যেতাম সবুজ মাঠে, ফড়িং-ধরা বিকেলে। পাল্লা দিয়ে ছুটোছুটি করে ফড়িং ধরতাম আমরা। কত রঙের যে ফড়িং।
খুশিতে এলিয়ে পড়তাম একজনের গায়ের উপরে আর একজন। তারপর আনন্দে হারিয়ে যেতাম রেললাইনের
ধারে পাথরের বুকে।
আহা! কী যে সুখ ছিল সেই সুরেলা জীবনে। সুখ ছিল যেন অথৈ, আনন্দ
ছিল যেন থৈ-থৈ।
আজ জীবনে বেসুর সুর শুনি। তালহীন সে সুর। আজ বার বার মনে হচ্ছে, কোথায় ফেলে এসেছি
সেই আনন্দ-জড়ানো দিনগুলি। বিষাদে ভরে ওঠে মনটা। অনেক প্রশ্নেরা
এসে বুকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, বিষাদের বিষদাঁত ভেঙে আমরা কি কোনোদিন ফিরে যেতে পারব না সেই আনন্দ ছোঁয়া স্মৃতির দেশে?
স্মৃতিরা চোখ মেলতেই দেখেছিলাম বেনাপোল বর্ডার, বাবার রচিত কাস্টম-কোলনি, রেললাইনের ধার, সবুজ মাঠ আর ফড়িং-ধরা বিকেল।
আবারও ইচ্ছে করে সেই বর্ণমালার সাথিদের সাথে গলাগলি ধরে, অর্থহীন জীবনের দাঁড়িপাল্লা ছিঁড়ে, বেসুরো জীবনের বিষদাঁত ভেঙে, আমরা দু’বোন আবার হারিয়ে
যাই সেই সুখ-ভরা রেললাইনের ধারে, আনন্দ-ঝরা
সবুজ বোনা মাঠে আর ফড়িং-ধরা বিকেলে।
২. ফিরে যাই আবার স্মৃতির ভাটায়
[উৎসর্গ: দূরদর্শী আরজ আলী মাতুব্বর, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হক-কে]
আবার ফিরে যাই বেনাপোলের সেই স্মৃতির ভাটায়, রেললাইনের
ধারে, পাথরের বুকে।
রেলগাড়ি আসার সময় হলে দল ধরে রেললাইনের উপরে কান পেতে শুয়ে
থাকতাম আমরা। দূর থেকে যখন রেলগাড়ি আসত তখন ঝিক্-ঝিক্
শব্দ হত। সেই শব্দ ছিল তাল-লয় আর ছন্দে গাঁথা। সেই শব্দ শোনার কত যে অপেক্ষা ছিল আমাদের, তা বুঝি আজ দূর দেশের স্মৃতির রূপকথা।
রেলগাড়ির সেই তাল-লয় আর ছন্দে গাঁথা শব্দগুলো যেন কানের ভেতর দিয়ে একেবারে বুকের
ভেতর ঢুকে যেতো।
বুকটা তখন আনন্দে ভরে উঠতো। সেই আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠতাম আমরা।
আজও চোখ বন্ধ করলেই কাছে টানে সেই রেলগাড়ির ঝিক্-ঝিক্ শব্দ
আর দূরদেশের সেই স্মৃতির রূপকথারা।
চোখ খুললেই দেখি সবকিছুরই আজ তাল কেটে গেছে। আনন্দ গেছে পালিয়ে।
শব্দগুলোও কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে গেছে। এই তাল কাটা খাপছাড়া শব্দ শোনার অপেক্ষায় কি
সেদিন ছিলাম?
ভাবলেই মনটা আবার ভিজে যায়। আবারও প্রশ্নেরা এসে ভিড় করে
মনের ভেতর। কোথায় পাব এর মন-ছোঁয়া উত্তর?
না পাওয়া উত্তরের শূন্যতায় চোখ দু’টো জল-ছল-ছল করে ওঠে।
হাতের পিঠ দিয়ে চোখ দুটো মুছি--
আর স্মৃতির ভাটায় ঘুরে ঘুরে সুখ-ভরা দিনগুলি খুঁজি।
৩. আবিষ্কারের খেলা
[উৎসর্গ: জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও ফজলুর রহমান খান
- যাঁদের সৃজনশীলতায় পৃথিবী আলোকিত]
রেললাইনের
ধারে বসে পাথর কুড়িয়ে পাঁচ-গুটি খেলতাম আমরা। খেলা শেষে পাথরে পাথর ঘষে আগুন
জ্বালাতাম। পাথরে পাথর ঘষলে যে আগুনের মত ঝলক দেখা যায়, তা ছিল আমাদের আদিম ক্ষুদে
বিজ্ঞানীর মত একরকম আবিষ্কারের খেলা। এটা ছিল আমাদের শৈশব জীবনের বিশাল
আবিষ্কার। এ খেলাতে ছিল আবিষ্কারের মত আনন্দ।
আমরা
তখন পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতাম। আর আজ জীবনে জীবন ঘষে আগুন জ্বালাতে হচ্ছে। এ যেন এক বাধ্যগত
আগুনের খেলা। এ খেলাতে আছে শুধু অনাগত নিরানন্দ।
এই নিরানন্দ জীবনের
টুটি ছিড়ে আবারও ফিরে যেতে ইচ্ছে করে শুধুই শীতল আনন্দে। জীবন ঘষা আগুনের জ্বলন্ত উত্তাপের
জ্বালাপোড়া থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে টুপ করে ডুব দিতে ইচ্ছে করে বর্ষায়
ডোবা-ডোবা টলটলে দিঘি ভরা-জলে। এক নিমিষে মনের যত আগুন নিভিয়ে
নিখাদ আনন্দে লুটোপুটি খেতে ইচ্ছে করে-
আর আবারও ক্ষুদে
বিজ্ঞানীর মত সেই আনন্দ-ঘেরা আবিষ্কারের খেলায় মেতে উঠতে ইচ্ছে
করে।
৪. পাল্টে যাওয়ার খেলা
[উৎসর্গ: প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোস্তফা আজিজ, মুস্তাফা মনোয়ার ও
এস. এম. সুলতান-কে]
বেনাপোলের
সেই স্মৃতির কোঠা থেকে বলছি।
আর
একটা খেলা খেলতাম আমরা। রেলগাড়ি আসার সময় হলে তাক করে থাকতাম। তারপর রেললাইনের
উপরে এক পয়সা, দু’পয়সা আর শিশা দিয়ে রাখতাম। রেলগাড়ি যখন ওসবের
উপর দিয়ে যেতো, তখন রেলগাড়ির চাপে ওগুলোর চেহারা যেতো পাল্টে। ওগুলো সব চ্যাপ্টা
হয়ে লম্বা হয়ে যেতো। তখন ওগুলো আমরা হাতে তুলে নিয়ে মন ভরে দেখতাম আর ভাবতাম কিভাবে
একটা জিনিসের চাপে আর একটা জিনিসের আসল-রূপ যায় পাল্টে। এটাও যেনো ছিল আমাদের সেই অবুঝ
বেলার পাল্টে যাওয়ার খেলা, রূপান্তরের খেলা। এ খেলাতেও ছিল যেনো আবিষ্কারের মতো
মধুর গন্ধ, ছন্দ, আনন্দ। সব কিছুতেই ছিল যেনো তালের মতো সুর।
আজও
আমরা পাল্টে যাওয়ার খেলাই খেলছি। জীবনের চাপে কালে কালে পাল্টে যাচ্ছে জীবনের রূপ।
কিন্তু এ পাল্টে যাওয়ার রূপে নেই কোন আনন্দ, নেই কোন সুখ। আছে শুধু মন পোড়ানো ধূপ।
এই মন-পোড়ানো ধূপের গন্ধ সরিয়ে সেই মধুর মতো গন্ধে, ছন্দে, আনন্দে মন মেতে উঠতে
চায়।
বার
বার মন ফিরে যায় সেই পাল্টে যাওয়ার খেলায়, রূপান্তরের খেলায়।
৫. রেলের গার্ড
সাহেবকে সালাম
[উৎসর্গ: স্বপ্ন-সঞ্চারী লুৎফর রহমান সরকার, এম. এ. গফুর ও অধ্যাপক খলিলুর
রহমান-কে ]
আমাদের বাসার সামনে
দিয়েই যেতো রেলগাড়ি, ওপার বাংলা ভারতে। আমাদের খুব কাছে টানতো রেলগাড়ি যাওয়ার সেই সময়টা।
সকাল, দুপুর, বিকেল, যখনই রেলগাড়ি যেতো, তখনই
আমরা বাসার ঘুরানো বারান্দার উপর দাঁড়িয়ে রেলের গার্ড সাহেবকে সালাম দিতাম সবাই মিলে,
সুর করে। গার্ড সাহেবও তাঁর লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে, দু’পাটি সাদা শাপলার মতো দাঁতের
হাসি মিশিয়ে উত্তর দিতেন আমাদের সালামের। আমরা তখন হাসিতে কুটি-কুটি হয়ে একজন আর একজনকে
জড়িয়ে ধরতাম আনন্দে। সব কিছুতেই কেমন যেনো সুর ছিল।
কোথায় গেল সেই সুরের
মতো বাঁশি, আনন্দের হাসি, তালের মতো সুর। দূর বহুদূর!
তখন জীবন ছিল আনন্দের
মেলা আর সুরের খেলা। মনের ভেতর শুধু হাতড়ে বেড়ায় কি যেনো। বহুদূর ছুটে যেতে ইচ্ছে করে,
সেই আকাশ যেখানে মনে হয় মাটি ছুঁয়েছে। আকাশ আর মাটিকে জড়িয়ে ধরে কি যেনো বলতে ইচ্ছে
করে। কিন্তু কিছুই আর বলতে পরিনে। দৃষ্টি আছড়ে পড়ে বহুদূরে। টুপ করে গাল বেয়ে দু’ফোঁটা জল পড়ে। শ্বাস দীর্ঘ হয়।
বুকটা হু-হু করে
ওঠে।
মনটা আবার পেছনে
ছোটে।
৬. নিরাপত্তার ছাউনি
[উৎসর্গ: সুসাহিত্যিক শওকত ওসমান,
শাহরিয়ার কবির ও মমতাজউদ্দিন আহমদ-কে]
এখনো বেনাপোলের
সেই স্মৃতির মালাই গাঁথছি।
মনে পড়ে আমরা দু’বোন,
বাবা-মা, আমাদের একটা ছোটভাই সবে মাত্র হয়েছে, আর বাড়তি একজন মানুষ ছিল আমাদের পরিবারে,
সে হলো আমার বাবার ছোটবোন। সে ছিলো আমাদের সব কিছুর সাথে জড়িয়ে-কুড়িয়ে।
বাবা ছিলেন সবার
বড়, তাই বড়ত্বের দায়ভার ও ব্যয়ভারও ছিল তাঁরই কাঁধে। সংসারের
সব রকম অস্থিরতার মাঝে তাঁকে ধৈর্যের মত স্থির থাকতে দেখেছি। বাবার সেই মা-মরা অনাদরে বেড়ে ওঠা ছোট বোনের দায়ভারও তাই তাঁর কাঁধে কর্তব্যের মত
করে তুলে নিয়ে ছিলেন। মা-হারা বোনটাকে বাবার ছায়া দিয়ে মায়ার
মত করে বড় করেছিলেন।
বাবার সেই বোনের
আঁচলের ছায়ায় ছায়ায় আমরা দু’বোন সারাক্ষণ ঘুর-ঘুর করতাম। সংসারের সবকিছুই তাঁকে গুরুদায়িত্বের
মতো করে ভাবতে দেখেছি। কখনো ক্লান্তির মত কালো রং দেখি নি তাঁর
চোখে-মুখে। সব কাজের ফাঁকে আমাদের নাওয়ানো- খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, চুল বেঁধে দে’য়া এসবও
তাঁর দায়িত্বের ছকে বাঁধা ছিল। আমরা তাঁকে মনের মতো করে পছন্দ করতাম। আদর্শ ঘেঁষা জীবন ছিল তাঁর।
মা ছিল অনেকখানি
স্বাধীনচেতা ও একটু বদরাগী। তাই মায়ের চোখ এড়িয়ে, পলিয়ে-পালিয়ে বাবার সেই ছোটবোনের
কাছে মায়ের মতো করে যতো তাল-বাহানা আছে করতাম। বাবার সেই ছোটবোন
আমাদেরকে নিরাপত্তার মতো করে আশ্রয় দিত। মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই তাই সেই নিরাপত্তার
আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যেতাম। বাবার সেই ছোটবোন যেনো ছিল আমাদের সবরকম নিরাপত্তার ছাউনি।
ঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই তাই নিরাপত্তা খুঁজতে ঢুকে যেতাম বাবার সেই ছোটবোনের একেবারে
বুকের ভেতর।
৭. প্রথম শূন্যতা
[উৎসর্গ: স্বপ্ন-সঞ্চারী মন্নুজান, হাসিনা জাহান ও শাহ্জাহান মিয়া-কে]
একদিন বাবার সেই
ছোটবোনের বিয়ের সানাই বাজল। বিয়ের সানাই বাজিয়ে বরের হাত ধরে সে আমাদেরকে খুব কাঁদিয়ে,
সেই নিরাপত্তার জায়গাটা একেবারে শূন্য করে, আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেল। বেড়ে-ওঠা জীবনে সেই প্রথম শূন্যতার সাথে দেখা হয়েছিল আমাদের। সেদিনই প্রথম বুঝেছিলাম শূন্যতা কাকে বলে। সেদিনের সেই সত্যের মতো স্বচ্ছ শূন্যতাকে মেনে
নিতে খুব কষ্ট হয়েছিল। এমন কঠিন শূন্যতার সাথে কিছুতেই যেনো সন্ধি করতে পারছিলাম না।
কারো জন্য যে কারো মন অমন করে কাঁদে সেই প্রথম বুঝেছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন,
অনেকদিন। জানিনে বাবার সেই ছোটবোনের আমাদের ছেড়ে যেতে মন অমন করেছিল কিনা। হয়তো
করেছিল, হয়তো বা করে নি। কিন্তু আমার মন আজও সেই শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
মনে
পড়ছে গড়াই নদীর বুকের উপর দিয়ে নৌকোয় পাল তুলে বাবার সেই ছোটবোন বরের সাথে বসে হাত
নেড়ে
নেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি সেদিন গড়াইয়ের পাড়ে বসে সন্ধ্যে অবধি কেঁদেছিলাম। সন্ধ্যেয় যখন বাড়ি ফিরেছি, তখন আমার মনের বিপদ
সংকেত ছিল শত ডিগ্রি।
খুব
রাগে, ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম বাবার সেই ছোটবোনের বরের উপর। তাই অবুঝ মনের সমস্ত
আকুতি দিয়ে সেদিন এই বলে প্রার্থনা করেছিলাম যে, আমাদের কাঁদিয়ে বাবার ছোটবোন যে
বরের হাত ধরে চলে গেল, সেই বর যেনো মরে যায়। তাহলে হয়তো বাবার সেই ছোটবোন,
উপায়-অন্ত না পেয়ে, ফিরে আসবে আবার আমাদের নিরাপত্তার আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে। সেদিনের
সেই প্রার্থনার মাঝে কোন খাদ ছিলনা। খুব অবুঝের মত ছিল সেদিনের সেই প্রার্থনা।
শূন্যতার ভার এতো বেশি ছিল যে, অমন প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেদিনের সেই
প্রার্থনাও ছিল বুঝি জীবনের প্রথম প্রার্থনা। এতোখানি জীবনে অমন প্রার্থনা আর কোনদিনও করা হয় নি।
আজ
অবশ্য মনে হলে হাসি পায়।
আড়ালে
একটু মুচকি হাসি,
আর মনে
মনেই বলি,
কোথায়
হারিয়ে গেল সেই অবুঝ বেলার দিনগুলি হায়!
৮. বেনাপোলের একটা
নিদারুণ মন-ছোঁয়া ঘটনা
[উৎসর্গ: কথা ও সুরের যাদুকর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শচীন দেব বর্মণ ও আবু জাফর-কে ]
তখন স্মরণশক্তি,
স্মৃতিশক্তি কেবল কানাকানি করছে।
বয়সটা ছিল শিশু।
সেই শিশু বয়সেই মন ছুঁয়েছিল সেই ঘটনা।
কাস্টম-কলোনিতে একজন ডি.এস. সাহেব ছিলেন। সেই ডি.এস. সাহেব পরকীয়া করেছিলেন একজন চল্লিশ বছর বয়সী মহিলা ইনেসপেক্টরের সাথে। তখন পরকীয়া কি বুঝি নি।
এই
পরকীয়া কাহিনী কলোনির সবার মুখে মুখে ছিল। পরকীয়া কাহিনীর নায়িকার নাম ছিল জহুরা।
আমরা তাঁকে জহুরা খালাম্মা বলে ডাকতাম।
একদিন
ডি.এস. সাহেব তাঁর আগের বউকে বাবার বড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে জহুরা খলাম্মাকে বিয়ে করে
ফেললেন। সেদিনও এমন শ্রাবণ দিন ছিল। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আগের
বউটি ফিরে এলো। কিন্তু দরজা বন্ধ। কিছুতেই ডি.এস. সাহেব ঢুকতে দিচ্ছেন না ভিতরে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন সেই আগের বউ। কলোনির আমরা অবুঝ শিশুরা, তাঁকে
ঘিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর কান্না দেখে আমরাও অবুঝের মতো কেঁদেছিলাম সেদিন। সেদিন
জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন পাখা মেলে নি মনে।
আজ
বুঝতে পারছি ডি.এস. সাহেবের আগের বউয়ের কান্নায় কি কষ্টটাই না ছিল। মনে পড়ছে আজও।
কিন্তু অন্যভাবে।
সেদিন
আগের বউ বার বার প্রশ্ন করছিল এই বলে যে, “ডি.এস. সাহেব আমি চলে
যাবো, কিন্তু কি দোষে আমাকে এমন শাস্তি দিলেন, আমি জানতে চাই!” ডি.এস. সাহেব নিরুত্তর ছিলেন। যাঁরা জ্ঞানপাপী তাঁদের নিরুত্তর থাকাটা
বুঝি একটা ফ্যাশন। একথা সেদিন বুঝি নি, আজ খুব করে বুঝতে পারছি!
অবশেষে
বৃষ্টির মতো করে, অঝোরে কেঁদে-কেঁদে কাক-ডাকা ভোরে, ডি.এস. সাহেবের সাথে এতোদিনের
বোঝা-পড়ার সম্পর্ককে বলি দিয়ে, আগের বউটি তাঁর উত্তরহীন প্রশ্ন নিয়ে ফিরে গেলেন
একেবারে অনিশ্চিতের পথে।
কেউ
কিছুই করতে পারলো না। তাঁর বড় বড় ছেলে মেয়েরাও না। সেদিনের সেই বিচ্ছেদের কষ্ট আজও
বুকে বাজে। পুরো কলোনির মানুষ সেদিন ডি.এস সাহেবকে বোঝাতে পারে নি। বিচ্ছেদের কষ্টে
সেদিন কলোনির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। বেনাপোল কাস্টম-কলোনির সবকিছুই সেদিন ডি.এস.
সাহেবের অমন ব্যবহারে হতবাক হয়েছিল। কলোনির আকাশ-বাতাস, গাছের পাতারা, পথের
ধূলোরা, পথচারীরা সবাই দুঃখে দু’ফোঁটা চোখের জল মুছেছিল।
জানিনে
আজ কে কোথায়?
কিন্তু
সেই সনামধন্য ডি.এস. সাহেব আজও আছেন আমার অভিযোগের পাতায়!
৯. তালগাছ
[উৎসর্গ: মানবতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি-জগতের তিন ধ্রুবতারা - রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকান্ত-কে ]
বেনাপোল
কলোনির সেই ডি.এস. সাহেবের বাসার কাছে একটা তাল গাছ একপায়ে
দাঁড়িয়ে থাকতো। সেই গাছের নিচে বসে আমরা দু’বোন পড়াশুনো করতাম।
পড়াশুনোর থেকে মনোযোগ থাকতো তালগাছের দিকেই বেশি। কখন যেনো একটা তাল পড়ে। তাল কুড়োনোর
লোভে আমরা প্রতিদিন ঐ তালগাছটার নিচে গিয়ে বই নিয়ে বসতাম। তাক্ করে তাকিয়ে থাকতাম
তালগাছের দিকে। তাল কুড়োনোর সেই লোভ কী যে আকর্ষণীয় ছিল।
আজও
সেই তাল কুড়োনোর লোভে আক্রান্ত হই তালগাছ দেখলেই।
মন
ছুটে যায় আবার অনেক বছর আগে।
স্মৃতিরা
সারি বেঁধে আবার বুকের ভেতর জাগে।
১০. কাঁটাতারের
বেড়া
[উৎসর্গ: ভূপেন হাজারিকা, পীট সীগার ও পল রবসন - যাঁদের
জীবনের জয়গান প্রাণ ছুঁয়েছে ]
দিন তারিখ কিছুই মনে নেই।
কেবল স্মৃতিরা কানাকানি
করছে।
এমন একদিনে আমরা
দু’বোন বেনাপোল বর্ডারে বাবার অফিসে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বর্ডারের সীমানা ছিল কাঁটাতারে
ঘেরা। খেলতে খেলতে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে কোন ফাঁক দিয়ে যেনো, আমরা দু’বোন ওপারে ভারতের
সীমানায় চলে গিয়েছিলাম। দু’জন সীমান্ত প্রহরী ছিল, তারা খেয়াল করে নি
আমাদের সীমানা পেরিয়ে যাওয়াটা। যখন তাঁদের চোখে ধরা পড়েছিলাম, তখনো আমরা আনমনে খেলছিলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হৈ-চৈ পড়ে গেল।
আমাদের অপরাধ আমরা
কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে সীমানা পেরিয়েছি। আমরা সেদিন বুঝি নি সীমানা পার হওয়া গুরুতর
অপরাধ। কিছুতেই ছাড়বেনা আমাদের সীমান্ত প্রহরীরা। শেষমেশ বাবার
সুপারিশে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলাম, বাবা কাস্টম-অফিসার ছিলেন
বলে। না হলে খবরের কাগজের পাতায় ফেলানীর
মত খবর হয়ে যেতাম।
সেদিন একেবারেই
বুঝি নি সীমানা কাকে বলে!
আজ জীবনের সীমানায়
দাঁড়িয়ে বেশ বুঝতে পারছি সীমানা কী এবং কাকে বলে!
১১. পুকুরে সাঁতার
[উৎসর্গ: লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কবি গোলাম
মোস্তফা ও সেলিনা হোসেন-কে]
বেনাপোল কলোনির
কাছে হিন্দু পাড়ায় একটা পুকুর ছিল। সেই পুকুরের পানি কেমন যেনো ঘন কালো স্বচ্ছ ছিল।
পানি ছিল গভীর। আমরা দু’বোন আর বাবা মিলে সেই পুকুরে সাঁতার কাটতাম
পাল্লা দিয়ে।
বোন আর বাবা এগিয়ে
যেতো বহুদূরে।
আমি পড়ে থাকতাম
পিছে।
কী যে ভালো লাগত
সেই সাঁতারের পাল্লা।
আজ লিখতে বসেই ইচ্ছে
করছে সেই গহীন জলেই গা ভাসিয়ে দিতে।
বাবাকে মনে পড়ছে।
বাবা ছিলেন আমাদের
দু’বোনের বন্ধু।
কোথাও আর খুঁজে
পাইনে বাবাকে!
আর কোনদিনও সাঁতারের
পাল্লা দেয়া হবে না বাবার সাথে!
কেন এমন করে সব
মনে পড়ছে?
কেন আমাকে সব কথা
লতার মত ব্যথায় জড়িয়ে ধরছে?
আমার পালাতে ইচ্ছে
করছে ব্যথার লতা ছিড়ে!
বাবা তো আর ভুলেও
আসবে না সেই সরে যাওয়া দিনগুলিতে!
আবার কান্না পায়!
ব্যথা করে বুকের
বাঁ পাশে!
তবু স্মৃতিরা ঝাঁক
বেঁধে আসে!
১২. আচার-খাওয়া দুপুর
[উৎসর্গ: মানযারে শামীম, ধ্রুব এষ ও সায়ান - যাঁদের প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি প্রেরণা যোগায়]
আর একদিনের কথা।
স্মৃতির সুতোয় টান
পড়তে শুরু করেছে।
স্মৃতিরা যেনো সশব্দে
কথা কয়ে উঠেছে।
মায়ের ছিল অনেক
গুণের বাহার।
আচার বানানো গুণটাও
তাঁর গুণের সংখ্যার মাঝে একটি।
মুখরোচক, খুব মজার মজার আচার বানাতো মা।
সব সময় আমাদের ঘরে
আচার থাকতো।
একদিন মা বললো, ‘পুরনো আচারগুলো খেয়ে ফেলিস। ’
তখন দুপুর। দুপুরের
খাওয়া সেরে সবাই ঘুমোচ্ছে।
সেই ফাঁকে আচারের
বয়ামগুলো নিয়ে কলোনির সাথিদের ডেকে, এক সাথে সব আচারগুলো খেয়ে
শেষ করে ফেলেছিলাম। মা ঘুম থেকে উঠে দেখে আচারের বয়ামগুলো সব খালি। মা অবাক চোখে মাথায় হাত তুলে বলেছিল, ‘আচার কি হল?’ আমরা
বলেছিলাম, তুমি না বলেছিলে, পুরোনো আচারগুলো সব খেয়ে শেষ করে ফেলতে। তাই সব আচার খেয়ে
শেষ করে ফেলেছি। মা বলেছিল, ‘আমি কি অমন করে একদিনে সব আচার খেয়ে শেষ করে ফেলতে বলেছি?’
মা মনের সব ঝাল
মিটিয়ে মেরেছিল সেদিন। কেঁদেছিলামও সেদিন সারাদিন। চোখের জল যেন বাঁধ মানছিল না। বাবার সেই ছোটবোন আমাদের কান্নার সাথে ছিল এবং মমতায় চোখের জল
মুছিয়ে দিয়েছিল। সেদিন মায়ের হাতে মার খেয়ে কষ্টের নদীতে ভেসেছিলাম। কিন্তু কি সুখে
যে আজ মনে পড়ছে মায়ের হাতে মার খাওয়া সেই আচার-খাওয়া দুপুর।
কষ্ট গুলো আজ যেনো
সব সুখের নদী।
আহা! সুখের নদিতে
ঘুরে ঘুরে-
সেই আচার-খাওয়া দুপুরে-
আবার ফিরে যেতে
পারতাম যদি!!!
১৩. রজনীগন্ধার সাথে প্রথম পরিচয়
[উৎসর্গ: তৃপ্তি মিত্র, গৌরী ঘোষ ও ফেরদৌসী
মজুমদার - যাঁদের শৈল্পিক কারুকাজে জীবনের স্পন্দন খুঁজে পাই]
বেনাপোলের
সেই পুকুরপাড়ে একদিন খেলতে খেলেতে ঘাসের ভেতর আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম পেঁয়াজ পাতার
মত একটা গাছ। পুকুরপাড় থেকে গাছটা তুলে এনে খুব যত্ন করে বাসার উঠোনের এককোনে
লাগিয়ে, রোজ পানি দিতাম। দিন যেতে যেতে কিছুদিন পর দেখলাম ঝাড় ধরা গাছ ফুঁড়ে
সুগন্ধ-ভরা তন্বি তনুলতার মতো শুভ্র বসনায় একটা লম্বা ডাঁটার মাথায়
এক গুচ্ছ আধো ফোঁটা ফুলের কলি বেরিয়েছে।
গন্ধে বাসা ভরে
গেছে।
পরে আবিষ্কার হলো
এই ফুলের নাম ‘রজনীগন্ধা।’
কী কাব্যিক নাম!
শুনেই সুগন্ধে মন
ভরে গিয়েছিল।
সেই বুঝি প্রথম
আমাদের ফুলের রাণী ‘রজনীগন্ধার’ সাথে দেখা হয়েছিল।
এখনো ‘রজনীগন্ধা’
দেখি।
কিন্তু প্রথম দেখা
‘রজনীগন্ধাকে’ যেনো আর খুঁজে পাই নে।
অমন করে আর দেখাও
হয়নি কনোদিন।
এ যেনো সুগন্ধি
স্মৃতি।
আর বুকের ভেতর যেনো
বয়ে যায় মধুর গীতি।
১৪. ছোছরা পাতা
[উৎসর্গ: কথা, সুর ও গানের পাখি কানন দেবী, ফিরোজা বেগম ও ফরিদা পারভীন-কে ]
খুব তিক্ততার স্মৃতি
খুব মধুর করে মনে পড়ছে।
ছোছরা পাতা নামে
একটা পাতা আছে বনে।
ভালো বাংলায় হয়তো
বা বিছুটি পাতা বলে।
সেই বেনাপোলের খেলার
সাথিদের সাথে যদি কনো মতোবিরোধ অথবা ঝগড়া হতো, তাহলে সেই ছোছরা পাতা গায়ে ঘষে দিয়ে
শাস্তি দিতাম আমরা একে অন্যকে।
সেই পাতা গায়ে লাগলে
সারা গা চুলকিয়ে ফুলে যেতো এবং ভীষণ জলাপোড়া করতো। যন্ত্রণাও হতো সারা শরীরে।
এমন সহজ উপায়ের
শাস্তি বুঝি আর দ্বিতীয়টি নেই।
এ যেনো ছিল আমাদের
শাস্তি শাস্তি খেলা।
এ খেলাও খুব সুখে
আমরা বহুদিন খেলেছি বেলা-অবেলা।
১৫. ভাঙা চুড়ি
[উৎসর্গ: আবৃত্তি ও নাট্য-শিল্পী হুমায়ুন ফরিদী, সুবর্ণা মুস্তাফা ও প্রজ্ঞা লাবণী-কে ]
বেনাপোল
কলোনির ড্রেনের ধারে সব বাসা থেকে ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো। তার ভেতরে থাকতো অনেক
কিছু। সেই অনেক কিছুর ভেতরে থাকতো রঙ-বেরঙের ভাঙা কাচের চুড়ি।
ময়লা
আবর্জনা ঘেটে আমরা সেই রঙ-বেরঙের ভাঙা চুড়ি সংগ্রহ করতাম। তারপর সেগুলো ধুয়ে-মুছে
স্বচ্ছ কাচের বোতলে ভরে সাজিয়ে রাখতাম বসার ঘরে।
কী যে
চমক ছিল সেই কাচের ভাঙা চুড়ি সংগ্রহের ভেতরে!
কাচের
বোতলে ভাঙা চুড়ি গুলো যেনো দেখতে চমৎকার শো-পিচের মতো লাগতো।
আজকের
ঝকমকে শো-পিচের যুগে হয়তো তা একেবারেই ফিকে।
কিন্তু
আমার কাছে আজও সেই তুচ্ছ ভাঙা কাচের চুড়ির দাম যেনো মণি-মুক্তোর মতো চিকচিকে।
তাইতো
আজও স্মৃতির ঘাটে বসে তাকিয়ে আছি সেই ফিরে দেখা মণি-মুক্তোর দিকে!
১৬. রেডিও শোনা
[উৎসর্গ: শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির রূপকার আহমেদ শরীফ,
হুমায়ুন আজাদ ও সিরজুল ইসলাম চৌধুরী-কে ]
বেনাপোলে
আমাদের জীবন-যাপন ছিল খুব হিসেবের।
যেনো
ঠিক নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো।
কারণ
আগেই বলেছি, বাবা ছিলেন একজন সৎ কাস্টম-অফিসার।
উপরি
কনো পয়সা ছিল না।
বিনোদনের
জন্য আমাদের ঘরে কিছুই ছিল না।
খুব
ইচ্ছে করতো রেডিওর গান শুনতে।
মনে
হতো একটা যদি রেডিও থাকতো আমাদের, কী ভালোই না হতো। সাধ মিটিয়ে গান
শুনতে পারতাম।
কিন্তু
তখন রেডিও কেনার মতো সচ্ছল অবস্থা আমাদের ছিল না।
পেটের
ক্ষুধা মেটানোর জন্য খাবার, লজ্জা নিবারণ করার জন্য কাপড় এসবই রেডিও থেকে বেশি
জরুরি ছিল।
যখন দু’মুঠো খাবার পেটে থাকতো, তখনই রেডিওর গান শোনার কথা মনে হতো।
ইচ্ছেটা যখন খুব তীব্র হতো, তখন পা টিপে-টিপে চুরি করে
পাশের বাসার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে গান শুনতাম কান ভরে। কী যে ভালো লাগতো
সেই লুকিয়ে গান শোনা।
মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম কেউ দেখে ফেলে কিনা। লজ্জাও লাগতো
এভাবে কারো জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গান শুনতে। কিন্তু উপায় তো ছিল না কিছু।
ছুটে
যেতেই হতো ওভাবে চুপি চুপি গানের টানে।
আজ
চারদিকে কতো মিডিয়া সারাবেলা ভরে থাকে-
কতো যে
সুরে-সুরে, গানে-গানে তা তো সবাই জানে।
তবু মন
ফিরে যায় সেদিনের সেই চুপি-চুপি
জানালার
ধারে দাঁড়িয়ে শোনা গানে!
১৭. ভয়ঙ্কর সেদিন
[উৎসর্গ: সাহিত্য জগতের অগ্রদূত সত্যেন সেন, নির্মলেন্দু গুণ ও পূরবী বসু-কে ]
খুব ভয়ঙ্কর সেদিনের
কথা।
আমরা দু’বোন আর
বাবা শীতের ছুটিতে গিয়েছিলাম গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে। হঠাৎ টেলিগ্রাম এলো। মায়ের অবস্থা
খারাপ।
বাবার এক বন্ধু
করেছিলেন।
আমরা তড়িঘড়ি করে
রাতের ট্রেন ধরেই বেনাপোলে এলাম।
এসে দেখি আমার মায়ের
ডান হাতের উপর তিন ইঞ্চি সমান পুরু জিলেপির মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ফোস্কা পড়ে আছে।
তারপর সবকিছু শুনলাম,
জানলাম।
মায়ের কাপড়ে আগুন
ধরেছিল। তখন ছিল সূর্য-ওঠা ভোর।
আমার পরের ভাইটা
মায়ের কোলে ছিল।
শাড়ির আঁচল ঝুলে
পড়েছিল চুলোয়। চুলো থেকেই আঁচলে আগুন ধরেছিল।
আমার ছোট ভাইটিকে
বাঁচাতে গিয়ে মা দিশেহারা হয়ে সেই শাড়িতে ধরা আগুন ডান হাত দিয়ে চেপে-চেপে নিভোতে গিয়েছিল।
ঐ আগুনেই ডান হাতটা পুড়ে একেবারে ঝলসে গিয়েছিল।
মায়ের হাতে বাবার
দেয়া দু’টো সোনার চুড়ি ছিল।
সোনার চুড়ি পুড়ে
কঠিন ভাবে হাতের মাংসের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। স্বর্ণকার এনে সেই পোড়া চুড়ি বের করতে হয়েছিল।
আমাদের বাসার ভেতরে
ছিল মায়ের হাতের সবজি বাগান।
মায়ের হাতে সবজি
খুব ভালো হতো।
বাসার উঠোনে শাক্,
মটরশুটি, ঢ্যাঁড়োশ, বেগুন আরো অনেককিছু লাগানো ছিলো।
মায়ের কাপড়ে ধরা
আগুন নিয়ে সেই সবজি বাগানের ভেতর পাগোলের মতো ঘুরেছিল। বাগানের সব সবজি পুড়ে গিয়েছিল।
মনে হলে আজও সেই
সবজি পোড়া গন্ধ পাই,
আর বিষাদে অনেক
দূরে হারিয়ে যাই।
১৮. বিহারী পরিবার
[উৎসর্গ: দূরদর্শী মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বেগম রোকেয়া
ও শকুন্তলা দেবী-কে ]
আমাদের
পাশের ফ্ল্যাটে ছিলো এক বিহারী পরিবার ।
ঐ পরিবারের সাথে
আমাদের খুব সখ্যতা ছিল।
মায়ের সেই দুর্দিনে
ঐ পরিবারের সবাই মায়ের জন্য যা করেছিল তা আজও মনে আছে।
বিশেষ করে যিনি
গৃহকর্ত্রী ছিলেন, আমরা যাকে খালাম্মা বলে ডাকতাম, তিনি আমার মাকে চব্বিশ ঘণ্টা দেখাশোনা
করতেন।
মানুষ মানুষের জন্য
যে অমন নিবেদিত হয়ে কিছু করতে পারে সেই প্রথম দেখেছিলাম, বুঝেছিলাম। চোখে না দেখলে
বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায়।
খালাম্মাকে কৃতজ্ঞতায়
আজও মনে পড়ে।
সত্যি বুঝি অমন
দিন কোনদিনও আসবে না।
স্মৃতিরাও কোনদিন
সরে যাবে না।
১৯. বিহারী পরিবারের
দুর্দিনে
[উৎসর্গ: গানের পাখি লতা মুঙ্গেশকার, সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লা-কে]
আর একদিনের কথা।
সেই বিহারী পরিবার
একবার বেড়াতে গিয়েছিল ভারতে। ফেরার পথে ট্রেনে চোর ঢুকে সবাইকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে রেখে তাঁদের সবকিছু চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে পাসপোর্টও। শেষমেশ পাসপোর্টের
অভাবে পুরো পরিবার বর্ডারে এসে আটকে গেলো। সেদিন বাবা তাঁদের জন্য অনেক করেছিলেন।
মায়ের দুর্দিনে
তাঁরা যেমন করে করেছিল। সেদিন বুঝি বাবার সুযোগ এসেছিল তাঁদের ঋণ পরিশোধের।
বাবাকে দেখেছিলাম
খুব ছুটোছুটি করে সেদিন তাঁদেরকে বর্ডার থেকে উদ্ধার করেছিলেন। বাবার নিবেদিত সহানুভূতি
আর সুপারিশে পরিবারটি অনুকূলে এসেছিলো।
মনে পড়ে সেদিন পুরো
পরিবারই আমাদের ফ্ল্যাটে ছিলো। তাঁদের ঘরের চাবিও চুরি হয়ে গিয়েছিলো। একেবারে খালি
হতে তাঁদের বর্ডার পেরুতে হয়েছিলো। তাঁরা বার বার আতঙ্কিত হয়ে,
হাউ-মাউ করে আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো সেদিন। আমরাও সারাটা রাত
তাঁদের চোখের জলে ভেসেছিলাম। সেটাও ছিলো এক দুঃখের রাত! তাঁরা কৃতজ্ঞতায় সে রাতের কথা মনে রেখেছিলো। সে রাতও কেটে গেছে। আছে শুধু
সেই বুক শির-শির করা স্মৃতি!
তাঁদের
সাথে আমাদের অনেকদিন যোগাযোগ ছিলো। বাবা বদলি হয়ে এসেছিলেন রংপুরের ডোমারে, আর ঐ
পরিবার বদলি হয়েছিলো নীলফামারিতে।
তারপরেও
বহুদিন একটানা যোগাযোগ ছিলো এমনি করেই।
স্বাধীনতা
যুদ্ধের বছরে তাঁরা হারিয়ে গেলো। যোগাযোগের সুতো ছিড়ে গেলো। কারণ তাঁদেরকে
পাকিস্তানে চলে যেতে হয়েছিলো।
হয়তোবা
আর কোনদিনও যোগাযোগের সেই সুতো বাঁধা যাবে না।
কিন্তু
মনের সেই দেয়া-নেয়ার জায়গাটা হয়তো কোনদিন মুছে যাবে না।
২০. খেলার সাথী
ফরহাদের সাথে
[উৎসর্গ: লোকসঙ্গীতের কিংবদন্তী লালন শাহ, হাসন রাজা ও বাউল শাহ
আবদুল করিম-কে ]
বেনাপোলের আর একদিনের
মন-পোড়ানো কথা।
একদিন খেলার সাথি
ফরহাদের সাথে বেনাপোল কলোনি থেকে কিছুটা দূরে পুকুর পাড়ে আম গাছে আম পাড়তে গিয়েছিলো
বড় বোন। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেল।
আগেই বলেছি, মা
ছিলো বেশ রাগী।
বাড়িতে বড় বোন ফিরতে
না ফিরতেই, মা দড়ি দিয়ে পেঁপে গাছের সাথে বেঁধে খুব পিটিয়েছিল। অপরাধ, কেনো ফরহাদের
সাথে আম পাড়তে গেল।
আমার বুক-কাঁপানো
খারাপ লেগেছিলো। কিন্তু করার কিছুই ছিলো না। মায়ের উপর কথা বলার সাহস ছিল না।
মায়ের অমন নিষ্ঠুর
মারের কথা মনে উঠলে আজও চমকে উঠি।
সেই আম পাড়া সাথী
ফরহাদেরও খুব শাস্তি হয়েছিলো।
ভা’য়ের বাসায় থেকে
পড়াশোনা করতো। এই অপরাধে ভাবীর অভিযোগে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলো। ফরহাদকে বাসা থেকে বের
করে দিল তার ভাই।
আমার বড় বোন সেদিনই
প্রথম বুঝেছিলো অমন করে যখন তখন আর কোথাও যাওয়া যাবে না। সেদিনের পর থেকে বড় বোনের
কোথাও আর যাওয়া হয় নি।
বড় অপরাধবোধে ফরহাদকে
মনে পড়ে।
কিন্তু শেষমেশ ফরহাদের
কি হল তাও আর জানা যায় নি।
২১. পাওয়ার হাউস
[উৎসর্গ: সুরের অকাশের শুকতারা অব্বাস উদ্দীন, অতুল প্রসাদ ও রজনীকান্ত
সেন-কে]
বেনাপোলে
আমাদের বাসার কাছেই ছিলো ‘পাওয়ার
হাউস’ নামের একটা একটু অন্যরকম ঘর। সেই ঘরে সারাক্ষণ একটা শোঁ-শোঁ
শব্দ হতো। সেখান থেকে সমস্ত কলোনির বিদ্যুৎ সরবরাহের
কাজ চলতো।
আজ
স্মৃতির সারিতে দাঁড়িয়ে সেই শোঁ-শোঁ শব্দও যেন সুরে গাঁথা ছন্দের
মতো কানের পর্দা যাচ্ছে ছাড়িয়ে।
২২. শেওড়া গাছ
[উৎসর্গ: আলোর পথযাত্রী শামসুর রাহমান, বেগম সুফিয়া কামাল ও জাহানারা
ইমাম-কে ]
বেনাপোলে
আমাদের বাসার ঠিক সমনেই ছিল একটা শেওড়া গাছ। গ্রাম্য কথায় শড়া গাছ বলে। সেই শেওড়া গাছের পাতা এতো চক্ চকে সবুজ ছিলো যে,
দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যেতো। পাতাগুলো ছোট ছোটো এবং ঘন। গাছটার
ভেতরে কেমন যেনো একটা গুরু-গম্ভীর ভাব
ছিলো। জনশ্রুতি ছিলো ঐ গাছে ভূত থাকে।
সারাদিন
যেনোতেনো, সন্ধ্যে হলে গাছটির দিকে তাকিয়ে আমরা ভয়ে একেবারে জড়োসড়ো হয়ে যেতাম।
কিন্তু
আজ স্মৃতির পাতা খুলে দেখছি সেই ভয় জড়ানো শেওড়া গাছও যেনো আজ কতো আদর মাখানো।
২৩. যেনো দূরে কোথায়
[উৎসর্গ: কাব্য, সাহিত্য ও সমাজ-সংস্কারের অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জসীমউদ্ দীন ও মহাশ্বেতা দেবী-কে ]
আবারও গুটি-গুটি
পায়ে হাঁটতে ইচ্ছে করছে সেই স্মৃতির পাড়াতে।
বেনাপোল থেকে ট্রেনে
করে আমরা দু’বোন যেকোন অবকাশে নানা ও দাদাবাড়িতে যেতাম। সেখানে আমরা রাত-দিন চরে বেড়িয়েছি।
আজও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই আমরা দু’বোন স্মৃতির মেলায় হাত ধরাধরি করে হাঁটছি আর
হাঁটছি।
গ্রীষ্মের ছুটিতে
নানা ও দাদাবাড়িতে আমরা যে অবকাশ যাপনে যেতাম, তা যেনো ছিলো বিলেত ভ্রমণের মতো।
কখনো মনে হতো দার্জিলিংয়ে
এসেছি বিনোদনের জন্য। আবার কখনো মনে হতো কল্পনার প্যারিসে হাঁটছি।
আমরা গ্রীষ্মের দুপুরে নানাবাড়িতে পুকুরপাড়ে মাদুর বিছিয়ে, গাছ থেকে আম পেড়ে, ঝিনুক ঘষে ফুটো করে
সেই ঝিঁনুকের আঁচড়ে কাঁচা আম ছুলে খেতাম। সেই ঝিনুকে ছোলা আম মনে হতো অমৃতের মতো।
বর্ষায় যখন পুকুরের
চার পাড়, নদীর দু’কুল ছেপে গেছে তখন মাছের মতো করে গা ভাসিয়ে সাঁতার কেটেছি।
শরতে সাদা মেঘের
ভেলায় ভেসেছি।
হেমন্তে চুলোর পাশে
বসে ভাঁপ ওঠা নানীর হতের পিঠে খেয়েছি মধুর মতো করে।
সাধ মিটিয়ে শীতের
সকালে আগুন তাপানোর ছলে, নাড়ার আগুনে ছোলার হোড়া পুড়িয়ে খেয়েছি দু’হাত ভরে। সেই হোড়ার
ছাই গুলো যেনো মনে হতো হীরের গুড়ো।
বসন্তে ছুটে গেছি
আকাশ ছোঁয়া কাঁঠাল অথবা আমগাছের তলে, কোকিলের মিষ্টি কুহু ডাক শুনবো বলে।
এমনি করে ছয়ঋতুর
সাথে আমরা দু’বোন খেলেছি দিনভর।
সন্ধ্যে হলে উঠোনে
বসে জোছনা আর চাঁদের বুড়ির সাথে কথা কয়েছি আনমনে।
এমনি করেই দাদাবাড়িতেও
পুকুরপাড়ে, জোনাক-জ্বলা বাঁশের বনে, জোসনা ভেজা ঝিরঝির নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে, মিল-মিল
বাতাসের আদরে, বারান্দার বুকে শুয়ে জীবনের অনেকগুলো সন্ধ্যে কাটিয়েছি আমরা দু’বোন।
আজও আছে সেই পুকুর
পাড়, নদীর কুল, জোছনা রাত।
কিন্তু নিঃসঙ্গ
যেনো সবই, সেই।
চোখ ছল-ছল চোখে
আবার তাকিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই।
২৪. বার বার মন
ফিরে যায়
[উৎসর্গ: আমার জন্মভূমি। ‘… যে মাটির মায়া-মমতা
আমার অঙ্গে মাখা ….’ ‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ….’]
তারপর একদিন যখন
বেনাপোল কাস্টম-কলোনির সব সুখগুলো পেছনে ফেলে বাবা বদলি হয়ে গেলেন
রংপুরে। বার বার মন ফিরে যায় পিছনে।
বেনাপোলে থাকতেই
আমাদের পরিবারে আরো দু’ভাই এসেছিলো।
বেনাপোলের সেই উড়োন্ত
শৈশব ছেড়ে এসে আমরা একেবারে বোবা হয়ে গেলাম যেনো। স্মৃতির শহর ছিলো বেনাপোল বর্ডার।
আবার একটা না বলা
কষ্ট দানা বাঁধলো। এ কষ্টের বোঝা কাউকেই দে’য়া গেলো না।
বেনাপোল কলোনির
মাঠ-ঘাট, খেলার সাথীরা, বর্ণমালার সাথিরা ছিলো বুকের বাঁশি। সেই বাঁশির সুর কান্নার
মতো করে বাজলো বুকের একেবারে শেষ বিন্দুতে। আবার একটা অন্যরকম শূন্যতা জড়িয়ে ধরলো।
কিছুতেই যেনো মন
বসেনা। বারবার মন ফিরে যায় বেনাপোলের সেই দুরন্ত দুপুরে।
এমনি করেই দিন আসছিলো
রাত যাচ্ছিলো। তারপর কখন যেনো বাস্তবতার মতো কঠিন সত্যে অসব শূন্যতা সয়ে গেলো।
বড় হয়ে উঠলাম আমরা
পাশাপাশি দু’বোন। জীবনবোধও নিয়মের বিধিনিষেধে বেড়ে উঠলো। কৈশর ডাক দিলো। শূন্যতাগুলো
আবার স্মৃতি হয়ে উঠলো। দায়িত্ববোধগুলো একে একে জড়িয়ে ধরলো। কর্তব্যবোধগুলো এসে শূন্যতগুলোকে
সরিয়ে রূঢ় বাস্তবতার সাথে সন্ধি করলো।
তবু যেনো বারবার
মন ফিরে যায় সবকিছুর ফাঁকে সেই সুদূরের দুরন্ত দুপুরের ঝিলে,
ফড়িং-ধরা বিকেলে!!!
লেখকের পরিচয়-
নূরুন্ নাহার
জন্ম: ১৯৫৫ সেপ্টেম্বর ২৮
কীর্তিনগর, শৈলকুপা,
ঝিনাইদহ
বাবা: মো: শাহ্জাহান মিয়া
মা: হাসিনা জাহান
লেখক। সাংস্কৃতিক-কর্মী।
প্রাক্তন শিক্ষক। শিক্ষকতা করেছেন ঢাকার তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে - সানফ্রান্সিসস্কো,
পারিজাত ও মনিমুকুর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. (অনার্স), এম.এ. (বাংলা ভাষা ও
সাহিত্য)। ১৯৮১ সন।
লেখালেখিতে
বিচরণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে।
লেখালেখির
জগতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা।
নিয়মের
বেড়িতে কোনকিছু বাঁধা নেই।
লেখা
প্রকাশ-
·
দৈনিক বাংলা।
·
দৈনিক ইত্তেফাক।
·
দৈনিক আযাদ।
·
দৈনিক কিষাণ।
·
প্রথম আলো - ছুটির দিনে।
·
সাপ্তাহিক চরমপত্র।
·
শব্দের শব্দ শুনি, অডিও এলবাম, প্রীতিলতা
প্রকাশনী।
·
শৈলকুপা উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা।
·
‘কিংশুক’ সাহিত্য
পত্রিকা কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।
সম্পাদনা-
·
দু:সময়, ১৯৭৮ খ্রি., ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ।
·
দু:সাহস, ১৯৭৮ খ্রি., ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ।
·
মূল্যবোধ, ১৯৮৯।
·
বিপ্লবের পোষ্টমর্টেম, কবিতার বই, ১৯৯০।
· নাট্যগুরু মুস্তাফা কামাল বুলু’র শোকগাথা। শৈলকুপা নগরিক কমিটি। ২৩ মার্চ, ২০১৪।
·
আজীবন সদস্য, শৈলকুপা পাবলিক লাইব্রেরি।
·
সদস্য, শৈলকুপা নাগরিক কমিটি।
সম্প্রতি
যে-কবিতাগুলো যেখানে প্রকাশিত-
· ‘ভালোবাসার মালা বদল,’ ‘কিংশুক,’ ঈদ সংখ্যা; কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ। জুলাই,
২০১৪।
· ‘তুমি নেই, তবু তুমি আছো’ - নাট্যগুরু মুস্তাফা কামাল বুলু’র শোকগাথা
স্মরণিকা। শৈলকুপা
নাগরিক কমিটি, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ। ৯ চৈত্র, ১৪২০ বঙ্গাব্দ; ২৩ মার্চ, ২০১৪।
· ‘বিশ্বাসের গ্যারান্টি চাই,’ ‘কিংশুক,’ কোটচাঁদপুর,
ঝিনাইদহ। ফেব্রুয়ারি, ২০১৪।
· ‘হিমালয়ের কাছে তরুলতার চাওয়া,’ ‘কিংশুক,’ ঈদ এবং শারদীয়
সংখ্যা, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ। অক্টোবর, ২০১৩।
· ‘Vision Creates Value’ ব্লগ।
‘Vision Creates Value’ ব্লগে লেখকের নির্বাচিত কয়েকটি লেখার লিঙ্ক:
·
ফড়িং-ধরা বিকেল, ২০১৪
·
স্বাধীনতার কাছে চাওয়া, কিংশুক, ২০১৪
·
নির্জন পথে ভালোবাসার নতুন চাষ, ২০১৪
·
ভালোবাসার মালা বদল, কিংশুক, ২০১৪
·
তুমি নেই, তবু তুমি আছো, কিংশুক, ২০১৪
·
আমাকে ডাকে, কিংশুক, ২০১৪
·
বিশ্বাসের গ্যারান্টি চাই, কিংশুক, ২০১৪
·
হিমালয়ের কাছে তরুলতা চাওয়া, কিংশুক, ২০১৩
·
প্রসঙ্গ: মা দিবস, ২০১৩
·
গোলাপ প্রেমী, ২০১৩
·
না ভোলার কাব্য, স্মরণিকা, ২০১২
·
তোমাদের স্মৃতির পাড়ায়, স্মরণিকা, ২০১২
·
বিস্ময়কর সৃষ্টি, মুস্তাফা মনোয়ার -
শিকড়ে স্বীকৃতি, স্মরণিকা, ২০১১
·
অহংকারের কবিতা: গল্পে বলি, শহীদ
বুদ্ধিজীবী স্মরণিকা, ২০১০
·
সেই শৈশবের স্মৃতিতে, আদরের বিয়োগগাথা, স্মরণিকা,
২০১০
· বাস্তবতা মেনে নিতে হয়, প্রিন্সিপাল
শমসের হোসেন স্মরণে - ঋণ মুক্তির
পান্ডুলিপি, স্মরণিকা, ২০০৯
·
পানরসিক, প্রথম আলো - ছুটির
দিনে, ২০০৯ মে ৯
·
হৃৎপিণ্ডের কষ্ট, ১০০তম সাহিত্য আসর,
স্মরণিকা, ২০০৮
·
জন্ম পরাজয়, প্রথম আলো - ছুটির
দিনে, ২০০৭ জুলাই ২৮
·
দূর আকাশের তারা, প্রথম আলো - ছুটির
দিনে, ২০০৬ সেপ্টেম্ববর ০২
·
সবুজ অহংকার, ২০০৬ আগস্ট ০৬
·
কবি সুকান্ত ও কবিতা, মূল্যবোধ, ১৯৮৯
জুন - ১৯৯০ মার্চ
· কবিতা লেখার প্রতীক্ষা, শব্দের শব্দ শুনি,
অডিও এলবাম, প্রীতিলতা প্রকাশনী, ১৯৮৯ ফেব্রুয়ারি ।
ছবি -
ক. ফড়িং-ধরা বিকেল। ছবি: shobdoneer.com
খ. আনিসুল হক। ছবি:
ফেসবুক
১.১ ফড়িং। ছবি: ফেসবুক
১.২ বিস্মিতা ও
কাঙ্ক্ষিতা। ছবি: শাকিলা হাসীন
২.১ লাউয়াছড়া বন
গবেষণা কেন্দ্র। শ্রীমঙ্গল চা বাগান। ছবি: ডা: বিদ্যুৎ
৫.১ লাউয়াছড়া বন
গবেষণা কেন্দ্র। শ্রীমঙ্গল চা বাগান। ছবি: ফেসবুক
৬.১ লেখকের মা/বাবা:
হাসিনা জাহান / শাহ্জাহান মিয়া। ছবি: শফিউল ইসলাম
৬.২ লেখকের সেই
ফুফুবাড়ির আঙিনায় ডালিম ফুল। ছবি: শফিউল ইসলাম
৭.১ প্রাণ-প্রিয়
সেই নিরাপত্তার ছাউনিতে লেখক্। লেখকের ফুফুবাড়ি। ছবি: শফিউল ইসলাম
৯.১ রবীন্দ্র কাছারি
বাড়ি, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। ছবি: শফিউল ইসলাম
৯.২ কুঠিবাড়ির ঐতিহাসিক
বকুলতলায় লেখক। ছবি: শাকিলা হাসীন
৯.৩ কুঠিবাড়ির ঐতিহাসিক
বকুলতলায় লেখক। ছবি: শাকিলা হাসীন
১১.১ শাহী মসজিদ
পুকুর পাড়, শৈলকুপা। ছবি: শফিউল ইসলাম
১১.২ স্মৃতি-ঝলমল
সেই নানীবাড়ির পুকুর, চতুড়া, শৈলকুপা। ছবি: শফিউল ইসলাম
১২.১ আম। ছবি: জয়
১৩.১ রজনীগন্ধা।
ছবি: risingbd.com
১৫.১ রিনিঝিনি কাচের
চুড়ি। ছবি: অন্তর্জাল
১৭.১ ছবি: ফেসবুক
১৮.১ ছবি: ফেসবুক
১৯.১ ছবি: ফেসবুক
১৯.২ ছবি: ফেসবুক
২০.১ লেখকের বড়বোন:
ডা: শামসুন্ নাহার। ছবি: শফিউল ইসলাম
২৩.১ লেখকের ফল
ও ফুলের বাগান। সীমানা পেরুলেই পুকুর। ছবি: শফিউল ইসলাম
২৩.২ নানীবাড়ি থেকে
ফুফুবাড়ি যাবার পথে …. ছবি: শাকিলা হাসীন
২৪.১ ফড়িং। ছবি:
ফেসবুক।
২৪.২ শৈলকুপার কুমার
নদের পাড়ে লেখক ও তাঁর অনুজ ড: শরিফুল ইসলাম। ছবি: শফিউল ইসলাম
২৪.৩ দু’জনে মিলে
লিখেছেন কবিতার বই ‘বিপ্লবের পোষ্টমর্টেম। ’
গ. প্রকাশক ও লেখক
ঘ. ‘রৌদ্র-ছায়া’য়
দীপ সন্দীপন ও লেখক। ছবি: শফিউল ইসলাম
ঙ. লেখক
চ. লেখকের আস্তানায়
প্রকাশক ও লেখক। এখান থেকেই রচিত - ‘ফড়িং-ধরা বিকেল। ’
ছ-ঝ. লেখকের বাগান
ও সময়ের সাথি প্রকৃতি।
শফিউল,
স্মৃতিকথার দু’টো
বাদ ছিলো।
পাঠালাম।
মাঝখানে ঢুকিয়ে
দিতে হবে।
অন্য সবকিছু পাঠালাম।
ভুল থাকলে শুদ্ধ
করে দিস।
আর কোনকিছু প্রয়োজনে
বলিস।
লোডশেডিংয়ের কারণে
দেরি হয়ে গেলো।
বড় আপার শরীর খারাপ।
ফোন করিস।
তোরা কেমন আছিস?
ছোট আপা।
১৬.৬.২০১৪.
শৈলকুপা, ঝিনাইদহ।
সকাল ৮.৫৬. মি.
Layout: Book size: 7"x4.75"
1. Front Cover
2. Back Cover
3. Design Page - cover page 1, 2 Blank
3. Design Page - cover page 1, 2 Blank
3. Printers Page 3
4. Printers Page 4
5. Utsorgo Page 5, 6 blank
5. Suchi 7, 8 blank
7. Kritoggota 9-10
7. Kritoggota 9-10
8. Bhumika Anisul Hoq 11
9. Prokashoker kotha 12
10. Golpo 13-48
Pricing:
250
500
1000
Last Update: VCV ♥♪♥ 2016 May 30
No comments:
Post a Comment