-‘ওহ! দেখো, কতো সুন্দর! এটা কিন্তু আমার চাই-ই চাই!’
দোকান-পাটে গেলেই দেখি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। বাবা-মায়ের সাথে কেনাকাটায় ব্যস্ত ত্রস্ত। তাদের চাহিদার বস্তু গুলোও বেশ রকমারি। মূলত খেলনা থেকে শুরু করে ক্যান্ডি, চকোলেট, জামাকাপড় ও অগুনিত সংখ্যার তালিকা। কিছু কিছু সময় বাবা-মায়েরা দু'একটা আবদার পালন করেন আর অনেকবার বাধ্য হয়েই কিনে দেন। সে আমার চোখের দেখা। বাধ্য হবার অনেক কারণ। তার মধ্যে সর্বচ্চ কারণটা হোলঃ নিজ সন্তানের আর্তনাদ ও বেদনাজড়িত শব্দমালা বাবা-মায়ের 'পরে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তা এড়াতে। অন্ততঃ আমি তা মনে করি। এই এত্তটুকুন ছেলে-মেয়ে এমন বিরহভাব ও অঙ্গ-ভঙ্গি করে যে তার প্রার্থিত দ্রব্যটি না পেলে সে মরেই যাবে। কি করা আর। এত সামান্য ব্যাপার ত মরণ ডেকে আনতে পারে না! বাঁচতে হবেই, বাবা-মা ও সন্তানাদি, সবাইকে।
আমি নিজেও আপন সন্তানকুলের এই সব আবদার থেকে রেহাই পাই নি। যথাযথ নিয়মেই সাড়া দিয়েছি, ঘুরে ফিরে বার বার। বেঁচে থাকা ন্যায্য ধর্ম এবং ওদের খুশীই আমার তৃপ্তি।
নতুন স্কুল বর্ষ শুরু হবার আগে দেখি বিভিন্ন আবদারের আরও বেশী হিড়িক পড়ে যায়। আর প্রতিবারই মনে হয় ঠিক এই সময়টাতেই ছেলেমেয়েরা যেন আর একটু বেড়েও যায়। তাদের মাপ ও ধাপ উপরে উঠতে থাকে। তাই ছোটো খাটো, পুরনো ও অপ্রার্থিত জিনিষপত্র কেটে ছেঁটে ফেলা ঠিক এই সময়েরই রেয়াজ বটে। এবারেও ক’দিন আগে রাজ্যের জিনিসপত্র বাছাবাছি করছিলাম। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, হাবিজাবি কিছু জিনিষ বাতিল করতে হয়।
-'যা দরকার নেই, তা ফেলে দাও'।
কাজের/অকাজের জিনিসপত্র ভাগাভাগি করতে গিয়ে ওরা এটা নিয়ে বসে, সেটা নেড়ে-চেড়ে দেখে আর স্মৃতিচারণ করে। জিনিসপত্র ঘাটতে ঘাটতে একটু পরপরই অট্ট হাসিতে ঘরদোর ভরে তোলে। আবার দেখি পরস্পরের মাঝে একটু-আধটু খোটাখোটিও লেগে যায়। কি অনাবিল মনন এদের! আমি মধ্যস্ততা করতে বলি,
-‘জিনিসগুলো ফেলে দিচ্ছ, সুতরাং কার কোনটায় মালিকানা, তা নিয়ে মাথা কাটার প্রয়োজন তো দেখি না।‘
যুক্তিটা ওরা গ্রহণযোগ্য মনে করে, বোধ হয়। কারণ নিজ নিজ কাজে বসে যায় আবার। ফলাফল কষে বেশীরভাগ জিনিসপত্রের যায়গা হয় রিসাইক্লিন পাত্রে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি আর ভাবিঃ আহারে! অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়ার কি হাল! ঘরে নিয়ে আসার পর সেসবকে নিয়ে বিলাস ভাজন ছিল হাতে গনা ক’দিনের। তারপর বাসী-খাবারের মত এঁটো ভাঁগাড়ে ওগুলোর স্থান। কিন্তু তাদের সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত বস্তুগুলোকে আমি অবহেলা করতে পারি নি, চট করে। সুতরাং সিন্দুকে তুলে রেখেছিলাম সেগুলো, যত্ন প্রলেপে। একে একে কত সিন্দুক আমার! কার্ড বোর্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি সিন্দুক। সিন্দুক বলব না কেন? বাক্স ভর্তি জিনিসগুলো পয়সা দিয়ে কেনা। নিজের পয়সার দাম আছে না। আর আকুলি-বিকুলিমাখা স্মৃতির মালা? তাই কি না আমার এই সিন্দুকবিলাস।
বাছ-গোছের সময় কে যেন হঠাৎ একটি বাক্স থেকে সিন্দুকভর্তি কার্ড বের করলো সেদিন। বিভিন্ন খেলোয়াড়দের ছবিওয়ালা কার্ড ও ইউগিউ কার্ড। কতগুলো বর্ণীল ও কতগুলো ভেলভেটে মোড়ানো। কম, বেশী ও মাঝারি মূল্যের। স্মরণে এলো কিছু প্যকেটে থাকতো ছয়টা কার্ড ও কোনো প্যকেটে চারটা। সবচেয়ে দামীগুলো কেনা হোতো এক প্যাকেটে শুধু একটা কার্ড।
সবাই মিলে কার্ডগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম; সাথে ছিল সুখ রোমন্থন। এরই মাঝে, বাড়ন্ত ও সুবুদ্ধির অধিকারী সন্তানটি তড়িৎ বেগে আমাকে আর একবার চাক্ষুষ বোকা বানিয়ে বলে - ‘ইস, কী অপচয়! আমাকে থামাও নি কেন? কেন বারন কর নি এই অনাবশ্যক কার্ডগুলো কিনতে? ওই টাকা দিয়ে এখন কতকিছু পাওয়া যেত!’
ক্যানাডা
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৪
দোকান-পাটে গেলেই দেখি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। বাবা-মায়ের সাথে কেনাকাটায় ব্যস্ত ত্রস্ত। তাদের চাহিদার বস্তু গুলোও বেশ রকমারি। মূলত খেলনা থেকে শুরু করে ক্যান্ডি, চকোলেট, জামাকাপড় ও অগুনিত সংখ্যার তালিকা। কিছু কিছু সময় বাবা-মায়েরা দু'একটা আবদার পালন করেন আর অনেকবার বাধ্য হয়েই কিনে দেন। সে আমার চোখের দেখা। বাধ্য হবার অনেক কারণ। তার মধ্যে সর্বচ্চ কারণটা হোলঃ নিজ সন্তানের আর্তনাদ ও বেদনাজড়িত শব্দমালা বাবা-মায়ের 'পরে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তা এড়াতে। অন্ততঃ আমি তা মনে করি। এই এত্তটুকুন ছেলে-মেয়ে এমন বিরহভাব ও অঙ্গ-ভঙ্গি করে যে তার প্রার্থিত দ্রব্যটি না পেলে সে মরেই যাবে। কি করা আর। এত সামান্য ব্যাপার ত মরণ ডেকে আনতে পারে না! বাঁচতে হবেই, বাবা-মা ও সন্তানাদি, সবাইকে।
আমি নিজেও আপন সন্তানকুলের এই সব আবদার থেকে রেহাই পাই নি। যথাযথ নিয়মেই সাড়া দিয়েছি, ঘুরে ফিরে বার বার। বেঁচে থাকা ন্যায্য ধর্ম এবং ওদের খুশীই আমার তৃপ্তি।
নতুন স্কুল বর্ষ শুরু হবার আগে দেখি বিভিন্ন আবদারের আরও বেশী হিড়িক পড়ে যায়। আর প্রতিবারই মনে হয় ঠিক এই সময়টাতেই ছেলেমেয়েরা যেন আর একটু বেড়েও যায়। তাদের মাপ ও ধাপ উপরে উঠতে থাকে। তাই ছোটো খাটো, পুরনো ও অপ্রার্থিত জিনিষপত্র কেটে ছেঁটে ফেলা ঠিক এই সময়েরই রেয়াজ বটে। এবারেও ক’দিন আগে রাজ্যের জিনিসপত্র বাছাবাছি করছিলাম। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, হাবিজাবি কিছু জিনিষ বাতিল করতে হয়।
-'যা দরকার নেই, তা ফেলে দাও'।
কাজের/অকাজের জিনিসপত্র ভাগাভাগি করতে গিয়ে ওরা এটা নিয়ে বসে, সেটা নেড়ে-চেড়ে দেখে আর স্মৃতিচারণ করে। জিনিসপত্র ঘাটতে ঘাটতে একটু পরপরই অট্ট হাসিতে ঘরদোর ভরে তোলে। আবার দেখি পরস্পরের মাঝে একটু-আধটু খোটাখোটিও লেগে যায়। কি অনাবিল মনন এদের! আমি মধ্যস্ততা করতে বলি,
-‘জিনিসগুলো ফেলে দিচ্ছ, সুতরাং কার কোনটায় মালিকানা, তা নিয়ে মাথা কাটার প্রয়োজন তো দেখি না।‘
যুক্তিটা ওরা গ্রহণযোগ্য মনে করে, বোধ হয়। কারণ নিজ নিজ কাজে বসে যায় আবার। ফলাফল কষে বেশীরভাগ জিনিসপত্রের যায়গা হয় রিসাইক্লিন পাত্রে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি আর ভাবিঃ আহারে! অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়ার কি হাল! ঘরে নিয়ে আসার পর সেসবকে নিয়ে বিলাস ভাজন ছিল হাতে গনা ক’দিনের। তারপর বাসী-খাবারের মত এঁটো ভাঁগাড়ে ওগুলোর স্থান। কিন্তু তাদের সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত বস্তুগুলোকে আমি অবহেলা করতে পারি নি, চট করে। সুতরাং সিন্দুকে তুলে রেখেছিলাম সেগুলো, যত্ন প্রলেপে। একে একে কত সিন্দুক আমার! কার্ড বোর্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি সিন্দুক। সিন্দুক বলব না কেন? বাক্স ভর্তি জিনিসগুলো পয়সা দিয়ে কেনা। নিজের পয়সার দাম আছে না। আর আকুলি-বিকুলিমাখা স্মৃতির মালা? তাই কি না আমার এই সিন্দুকবিলাস।
বাছ-গোছের সময় কে যেন হঠাৎ একটি বাক্স থেকে সিন্দুকভর্তি কার্ড বের করলো সেদিন। বিভিন্ন খেলোয়াড়দের ছবিওয়ালা কার্ড ও ইউগিউ কার্ড। কতগুলো বর্ণীল ও কতগুলো ভেলভেটে মোড়ানো। কম, বেশী ও মাঝারি মূল্যের। স্মরণে এলো কিছু প্যকেটে থাকতো ছয়টা কার্ড ও কোনো প্যকেটে চারটা। সবচেয়ে দামীগুলো কেনা হোতো এক প্যাকেটে শুধু একটা কার্ড।
সবাই মিলে কার্ডগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম; সাথে ছিল সুখ রোমন্থন। এরই মাঝে, বাড়ন্ত ও সুবুদ্ধির অধিকারী সন্তানটি তড়িৎ বেগে আমাকে আর একবার চাক্ষুষ বোকা বানিয়ে বলে - ‘ইস, কী অপচয়! আমাকে থামাও নি কেন? কেন বারন কর নি এই অনাবশ্যক কার্ডগুলো কিনতে? ওই টাকা দিয়ে এখন কতকিছু পাওয়া যেত!’
ক্যানাডা
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৪
Roses ♥♪♥ Mint ♥♪♥ Chives :: Improvisation SNC 2014 Summer & Spring :: PC: VCV
No comments:
Post a Comment