Saturday, 28 February 2015
Monday, 16 February 2015
আলোর ঝরনাধারা : ড. আহমদ শরীফ
[উৎসর্গ: দূর আকাশের তারা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]
ড. আহমদ শরীফ আমার প্রিয় শিক্ষক। তাঁর দূরদর্শিতার স্পর্শে জীবন হয়ে ওঠে আলোর ঝরনাধারা! আশির দশকে সরাসরি তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি কয়েকবার। কখনো আলোচনা সভায়। কখনো রমনা পার্কে। কখনো তাঁর বাসায় বৃহস্পতিবারের আড্ডায়। টেক্সটাইল কলেজে কোনো শিক্ষকের ভিতর আলোর শিখা দেখিনি। আমরা যে শিক্ষাদীক্ষার আলোর শিখা খুঁজছি সেটা টেক্সটাইল কলেজে পাইনি। আর তাই সীমানা পেরিয়েছি! ছুটে গেছি আলোর পরশ পেতে-- আলোকিত মানুষ হবার প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে। আশির দশকে টেক্সটাইল কলেজে তখন দুর্বিষহ দুরবস্থা ও দুর্যোগের ঘনঘটা।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম এই বিরূপ পরিবেশ বদলে দিতে। গড়েছিলাম 'প্রগতি পাঠচক্র' ও 'প্রীতিলতা প্রকাশনী।' আমাদের এক দূরদর্শী আয়োজন ছিল 'এসো জীবনের গল্প শুনি, জীবনকে গড়ে তুলি।' কতটা সফল হয়েছি জানিনে। তবে এসময় বেশ কিছু ভালো ছাত্র টেক্সটাইল কলেজ ছেড়ে চলে যায়। আমরা ধর্মীয়-রাজনীতি-সন্ত্রাসী-প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের নির্যাতনের শিকার হই। সেসময় আহত হয় এক মেধাবী ছাত্র - একরামুল হক টপী! টপী'র মাথা ফাটিয়ে দেয় জামাত-শিবিরের পান্ডারা! টপী রক্তাত অবস্থায় অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে এসে বিচার চায়! আমাদের দুর্ভাগ্য এই স্বাধীন বাংলায় আমাদের মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা নেই। এই টপীই আমাকে একদিন নিয়ে যায় কোনো এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ড. আহমদ শরীফের বাসায়।
এরশাদের স্বৈরশাসনের সেই দু:সময়ে শহিদমিনারের পাদদেশে স্যারের সাহসী বক্তব্য শুনেছি। স্যার প্রতিবাদ করেছিলেন ধর্ম কীভাবে নারীদের বস্তাবন্দি করবে। নারীদের সতর্ক করেছিলেন। সেই দিনের সেই কথার মিল-ঝিলমিল এখন দেখতে পাই, যেদিকেই তাকাই। এখন নারীরা বস্তাবন্দি হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে স্যারের বক্তৃতার কথা মনে পড়ছে। স্যার প্রধান অতিথি। গিয়াস কামাল চৌধুরী সভাপতি। শুনুন তাহলে, আমার স্মৃতির পাতা থেকে সেদিনের স্যারের বক্তৃতার অংশবিশেষ:
"... আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষকের শ্রমের পয়সায় পত্রিকা চলে-- আপনাদের জীবিকা চলে। আপনারা 'কুলখানি/বালখানি'র সংবাদ ছেপে সারা পত্রিকার পাতা ভরে ফেলেন। এগুলি কৃষকের কী উপকারে আসে? এগুলি মানুষের কী উপকারে আসে? কৃষকদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাঁদের খবর আপনারা কতটুকু ছাপেন? ..." এই হলো স্যারের সত্য বলার অবিচল সাহস; ক্ষতি স্বীকারের শক্তি! বিনয়বিহীন বিদ্রোহ!
আজ আমাদের দেশের সংকটে স্যারকে খুব বেশী করে মনে পড়ছে। দেশ পুড়ছে, মানুষ জ্বলছে; আর আমাদের চারপাশের সুবিধাবাদী সুশীল সমাজের বিনয় ও প্রতারণা দেখে বিচলিত হই। কারো যেন ক্ষতি স্বীকারের শক্তি নেই। তাই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস-- আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষকের কিছু চিন্তাধারা নিয়ে সাজিয়েছি আজকের আলোর ঝরনাধারা:
'আমার পুঁজি হচ্ছে আমার ক্ষতি স্বীকারের শক্তি।'
'... বিশ্বাস হচ্ছে যুক্তির অভাব। ...'
'... বিশ্বাসের দুর্গে আঘাত করেছি, কেননা বিশ্বাস হচ্ছে যুক্তির অভাব। ...'
'... শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ সবটাই কুসংস্কার। ...'
'... স্রষ্টা থাকতে পারেন, কিন্তু শাস্ত্র থাকবে তার কোনো কথা নেই। ...'
'... কৃত্রিম বিনয়ে অনেকেই বিনীত। বিনীত মানুষেরা সুবিধাবাদী হয়। ...'
'... সংশোধিত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। তাদের মধ্যে তো মিল হয়ে গেছেই। ...'
'... বিয়ে হচ্ছে সমাজ স্বীকৃত যৌনসম্ভোগের অধিকার। ...'
'... বাঙালি সংস্কৃতির কোনো চিরস্থায়ী রূপ নেই। ...'
'... শেখ মুজিব সম্পর্কে: 'তাঁর নেতৃত্বের যোগ্যতা ছিল না। তিনি সাহসী ছিলেন, ভালো আন্দোলনকারী ছিলেন।'
'... মানুষের মনের বিকাশ ঘটে তিনটি জ্ঞানে-- সাহিত্য, ইতিহাস ও দর্শনে; এখনকার দিনে সমাজবিজ্ঞানে। ...'
'... জীবন এক ঐশ্বর্য। হারাতে চায় কে? ...'
এই কথাকলিগুলি স্যারের ২৪ পৃষ্ঠার সাক্ষাৎকার থেকে আমার পছন্দের অংশবিশেষ! এই সাক্ষাৎকারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বিমূর্ত-- যা সময় ও সংকটের ক্রান্তিকালে ক্ষতি স্বীকারের শক্তিতে সাহসী প্রতিবাদ।
আশা করি, স্যারের এই কথাকুঞ্জ আপনাদের মনোজগতে দোলা দেবে, ঢেউ তুলবে। চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাবে ও পরিবর্তন আনবে-- প্রেরণা যোগাবে। সুন্দর আগামী গড়ার অগ্রযাত্রায় অনাবিল সাহস সঞ্চার করবে।
ড. আহমদ শরীফ সম্পর্কে ড. হুমায়ুন আজাদের মূল্যবান মূল্যায়ন এই সাক্ষাৎকারকে করেছে সমৃদ্ধ। শুনুন তার অংশবিশেষ:
"... প্রতিবাদী তিনি; দেবতারা যেখানে ভয় পায় তিনি সেখানে উদ্ধত শিরে উপস্থিত হন। ..."
"... আমাদের সমাজের প্রধান ব্যক্তিদের মধ্যে ডক্টর আহমদ শরীফই সম্ভবত একমাত্র পুরুষ, যিনি সকলের কাছে প্রিয় হওয়ার দুর্বলতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ..."
"... আমাদের এ নষ্ট সমাজে খাপ-খাওয়া মানুষেরা খুবই নষ্ট; সৎ ব্যক্তিমাত্রই খাপ-না-খাওয়া মানুষ। ডক্টর আহমদ শরীফও তাই। ..."
"... ডক্টর আহমদ শরীফের মতো মানুষেরা শুধু সমকালের নন, তাঁরা কালান্তরের। তাঁরা শুধু বিশেষ একটি সময়ে জ্ঞান বিতরণ করেন না, বিতরণ করেন কাল থেকে কালে, শতাব্দী পরম্পরায়। আমাদের ভাগ্য ডক্টর আহমদ শরীফ আছেন আমাদের এ-দুর্গত বিবেকশূন্য বাঙলায়।"
দেশের সংকট ও দুর্যোগে স্যারের চারটে কালজয়ী বাণী যেন কখনো ভুলে না যাই:
১. জিজ্ঞাসা-বৃত্তির দীপ্তি!
২. ক্ষতি স্বীকারের শক্তি!
৩. প্রতারক ও নষ্ট রাজনীতির পোষক-তোষক কারা?
৪. কীভাবে দেশকে ভালবাসতে হয়?
ছবি: ভি.সি.ভি.। ডিজাইন: আসমা সুলতানা।
বিনয় নয় বিদ্রোহ চাই! প্রতারণা ও নষ্ট রাজনীতির বিনাশ চাই! দেশকে ভালোবাসি, আর তাই ডাক দিয়ে যাই! 'নতুন দিনের ডাক, সাহসে ভরে যাক!'
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, ওন্টারিও, ক্যানাডা
২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬
সম্পাদনা: ২০২০ এপ্রিল ১৪
♥♪♥
তথ্য সূত্র: 'আহমদ শরীফ : পণ্ডিত ও বয়স্ক বিদ্রোহী,' 'হুমায়ুন আজাদ - সাক্ষাৎকার,' আগামী প্রকাশনী, মে ২০০৪, পৃষ্ঠা ৩০-৫৩। বিচিত্রা : ১৩: ৩৬; ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ : ৩ ফাল্গুন ১৩৯১।
ফেসবুক, 'Words of Wisdom ~*~ Sweet Quotes' ও 'আকাশভরা সূর্য-তারা' আর্কাইভ।
ড. আহমদ শরীফ আমার প্রিয় শিক্ষক। তাঁর দূরদর্শিতার স্পর্শে জীবন হয়ে ওঠে আলোর ঝরনাধারা! আশির দশকে সরাসরি তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি কয়েকবার। কখনো আলোচনা সভায়। কখনো রমনা পার্কে। কখনো তাঁর বাসায় বৃহস্পতিবারের আড্ডায়। টেক্সটাইল কলেজে কোনো শিক্ষকের ভিতর আলোর শিখা দেখিনি। আমরা যে শিক্ষাদীক্ষার আলোর শিখা খুঁজছি সেটা টেক্সটাইল কলেজে পাইনি। আর তাই সীমানা পেরিয়েছি! ছুটে গেছি আলোর পরশ পেতে-- আলোকিত মানুষ হবার প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে। আশির দশকে টেক্সটাইল কলেজে তখন দুর্বিষহ দুরবস্থা ও দুর্যোগের ঘনঘটা।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম এই বিরূপ পরিবেশ বদলে দিতে। গড়েছিলাম 'প্রগতি পাঠচক্র' ও 'প্রীতিলতা প্রকাশনী।' আমাদের এক দূরদর্শী আয়োজন ছিল 'এসো জীবনের গল্প শুনি, জীবনকে গড়ে তুলি।' কতটা সফল হয়েছি জানিনে। তবে এসময় বেশ কিছু ভালো ছাত্র টেক্সটাইল কলেজ ছেড়ে চলে যায়। আমরা ধর্মীয়-রাজনীতি-সন্ত্রাসী-প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের নির্যাতনের শিকার হই। সেসময় আহত হয় এক মেধাবী ছাত্র - একরামুল হক টপী! টপী'র মাথা ফাটিয়ে দেয় জামাত-শিবিরের পান্ডারা! টপী রক্তাত অবস্থায় অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে এসে বিচার চায়! আমাদের দুর্ভাগ্য এই স্বাধীন বাংলায় আমাদের মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা নেই। এই টপীই আমাকে একদিন নিয়ে যায় কোনো এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ড. আহমদ শরীফের বাসায়।
শুনুন একরামুল হক টপী'র কবিতা: সবুজ শ্যামলিমার দেশে সূর্যোদয়
অ্যালবাম: শব্দের শব্দ শুনি
প্রীতিলতা প্রকাশনী। ১৯৮৯ ফেব্রুয়ারি।
আশির দশকে আমি এত মধুর যুক্তিতর্ক ও মুক্তচিন্তা-চর্চার পরিবেশ এই প্রথম দেখলাম। জ্ঞানপিপাসু ছাত্র, শিক্ষক, লেখক ও সাংবাদিকদের সমাবেশ। সমস্যা-সংকট-সমাধানের মুক্তমঞ্চ! বিতর্কই বিকাশের পথ। বিজ্ঞ-বিতর্ক শেষে সবার জন্য মধুর আপ্যায়ন-- সুস্বাদু পায়েস। যে চর্চা হওয়ার কথা সব বিদ্যাপীঠে সেটা হচ্ছে এক সাহসী স্বপ্ন-সঞ্চারী শিক্ষকের বাসায়। অন্য সবাই যখন পরচর্চা ও প্রচারে বিভোর, তখন এই আত্মত্যাগী শিক্ষক প্রত্যয়ী ও প্রতিশ্রুতিশীল আগামী প্রজন্ম গড়ার বীজবপন ও লালনপালনে বিভোর।অ্যালবাম: শব্দের শব্দ শুনি
প্রীতিলতা প্রকাশনী। ১৯৮৯ ফেব্রুয়ারি।
এরশাদের স্বৈরশাসনের সেই দু:সময়ে শহিদমিনারের পাদদেশে স্যারের সাহসী বক্তব্য শুনেছি। স্যার প্রতিবাদ করেছিলেন ধর্ম কীভাবে নারীদের বস্তাবন্দি করবে। নারীদের সতর্ক করেছিলেন। সেই দিনের সেই কথার মিল-ঝিলমিল এখন দেখতে পাই, যেদিকেই তাকাই। এখন নারীরা বস্তাবন্দি হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে স্যারের বক্তৃতার কথা মনে পড়ছে। স্যার প্রধান অতিথি। গিয়াস কামাল চৌধুরী সভাপতি। শুনুন তাহলে, আমার স্মৃতির পাতা থেকে সেদিনের স্যারের বক্তৃতার অংশবিশেষ:
"... আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষকের শ্রমের পয়সায় পত্রিকা চলে-- আপনাদের জীবিকা চলে। আপনারা 'কুলখানি/বালখানি'র সংবাদ ছেপে সারা পত্রিকার পাতা ভরে ফেলেন। এগুলি কৃষকের কী উপকারে আসে? এগুলি মানুষের কী উপকারে আসে? কৃষকদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাঁদের খবর আপনারা কতটুকু ছাপেন? ..." এই হলো স্যারের সত্য বলার অবিচল সাহস; ক্ষতি স্বীকারের শক্তি! বিনয়বিহীন বিদ্রোহ!
আজ আমাদের দেশের সংকটে স্যারকে খুব বেশী করে মনে পড়ছে। দেশ পুড়ছে, মানুষ জ্বলছে; আর আমাদের চারপাশের সুবিধাবাদী সুশীল সমাজের বিনয় ও প্রতারণা দেখে বিচলিত হই। কারো যেন ক্ষতি স্বীকারের শক্তি নেই। তাই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস-- আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষকের কিছু চিন্তাধারা নিয়ে সাজিয়েছি আজকের আলোর ঝরনাধারা:
'আমার পুঁজি হচ্ছে আমার ক্ষতি স্বীকারের শক্তি।'
'... বিশ্বাস হচ্ছে যুক্তির অভাব। ...'
'... বিশ্বাসের দুর্গে আঘাত করেছি, কেননা বিশ্বাস হচ্ছে যুক্তির অভাব। ...'
'... শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ সবটাই কুসংস্কার। ...'
'... স্রষ্টা থাকতে পারেন, কিন্তু শাস্ত্র থাকবে তার কোনো কথা নেই। ...'
'... কৃত্রিম বিনয়ে অনেকেই বিনীত। বিনীত মানুষেরা সুবিধাবাদী হয়। ...'
'... সংশোধিত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। তাদের মধ্যে তো মিল হয়ে গেছেই। ...'
'... বিয়ে হচ্ছে সমাজ স্বীকৃত যৌনসম্ভোগের অধিকার। ...'
'... বাঙালি সংস্কৃতির কোনো চিরস্থায়ী রূপ নেই। ...'
'... শেখ মুজিব সম্পর্কে: 'তাঁর নেতৃত্বের যোগ্যতা ছিল না। তিনি সাহসী ছিলেন, ভালো আন্দোলনকারী ছিলেন।'
'... মানুষের মনের বিকাশ ঘটে তিনটি জ্ঞানে-- সাহিত্য, ইতিহাস ও দর্শনে; এখনকার দিনে সমাজবিজ্ঞানে। ...'
'... জীবন এক ঐশ্বর্য। হারাতে চায় কে? ...'
এই কথাকলিগুলি স্যারের ২৪ পৃষ্ঠার সাক্ষাৎকার থেকে আমার পছন্দের অংশবিশেষ! এই সাক্ষাৎকারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বিমূর্ত-- যা সময় ও সংকটের ক্রান্তিকালে ক্ষতি স্বীকারের শক্তিতে সাহসী প্রতিবাদ।
আশা করি, স্যারের এই কথাকুঞ্জ আপনাদের মনোজগতে দোলা দেবে, ঢেউ তুলবে। চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাবে ও পরিবর্তন আনবে-- প্রেরণা যোগাবে। সুন্দর আগামী গড়ার অগ্রযাত্রায় অনাবিল সাহস সঞ্চার করবে।
ড. আহমদ শরীফ সম্পর্কে ড. হুমায়ুন আজাদের মূল্যবান মূল্যায়ন এই সাক্ষাৎকারকে করেছে সমৃদ্ধ। শুনুন তার অংশবিশেষ:
"... প্রতিবাদী তিনি; দেবতারা যেখানে ভয় পায় তিনি সেখানে উদ্ধত শিরে উপস্থিত হন। ..."
"... আমাদের সমাজের প্রধান ব্যক্তিদের মধ্যে ডক্টর আহমদ শরীফই সম্ভবত একমাত্র পুরুষ, যিনি সকলের কাছে প্রিয় হওয়ার দুর্বলতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ..."
"... আমাদের এ নষ্ট সমাজে খাপ-খাওয়া মানুষেরা খুবই নষ্ট; সৎ ব্যক্তিমাত্রই খাপ-না-খাওয়া মানুষ। ডক্টর আহমদ শরীফও তাই। ..."
"... ডক্টর আহমদ শরীফের মতো মানুষেরা শুধু সমকালের নন, তাঁরা কালান্তরের। তাঁরা শুধু বিশেষ একটি সময়ে জ্ঞান বিতরণ করেন না, বিতরণ করেন কাল থেকে কালে, শতাব্দী পরম্পরায়। আমাদের ভাগ্য ডক্টর আহমদ শরীফ আছেন আমাদের এ-দুর্গত বিবেকশূন্য বাঙলায়।"
দেশের সংকট ও দুর্যোগে স্যারের চারটে কালজয়ী বাণী যেন কখনো ভুলে না যাই:
১. জিজ্ঞাসা-বৃত্তির দীপ্তি!
২. ক্ষতি স্বীকারের শক্তি!
৩. প্রতারক ও নষ্ট রাজনীতির পোষক-তোষক কারা?
৪. কীভাবে দেশকে ভালবাসতে হয়?
ছবি: ভি.সি.ভি.। ডিজাইন: আসমা সুলতানা।
ছবি: ভি.সি.ভি.। ডিজাইন: আসমা সুলতানা।
ছবি: ফেসবুক, ফেসবুক, আকাশভরা সূর্য-তারা।
ছবি: ফেসবুক, আকাশভরা সূর্য-তারা।
বিনয় নয় বিদ্রোহ চাই! প্রতারণা ও নষ্ট রাজনীতির বিনাশ চাই! দেশকে ভালোবাসি, আর তাই ডাক দিয়ে যাই! 'নতুন দিনের ডাক, সাহসে ভরে যাক!'
♥♪♥
শফিউল ইসলাম
কেমব্রিজ, ওন্টারিও, ক্যানাডা
২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬
সম্পাদনা: ২০২০ এপ্রিল ১৪
♥♪♥
তথ্য সূত্র: 'আহমদ শরীফ : পণ্ডিত ও বয়স্ক বিদ্রোহী,' 'হুমায়ুন আজাদ - সাক্ষাৎকার,' আগামী প্রকাশনী, মে ২০০৪, পৃষ্ঠা ৩০-৫৩। বিচিত্রা : ১৩: ৩৬; ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ : ৩ ফাল্গুন ১৩৯১।
ফেসবুক, 'Words of Wisdom ~*~ Sweet Quotes' ও 'আকাশভরা সূর্য-তারা' আর্কাইভ।
Saturday, 14 February 2015
Subscribe to:
Posts (Atom)